বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ এক দশক ধরে অলরাউন্ডার হিসেবে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলকে প্রতিনিধিত্ব করছেন রুমানা আহমেদ। কয়েক বছর ধরে ওয়ানডে অধিনায়কও তিনি। ক্লাব ম্যানেজারের কাছে প্রিমিয়ার লিগের বকেয়া পাওনা পরিশোধের জোর দাবি তোলায় তাকে শুনতে হয়েছে গালিগালাজ।
এই দীর্ঘ ক্যারিয়ারে এখনকার মতো বাজে অভিজ্ঞতা অতীতে হয়নি এ ক্রিকেটারকে। তাই অপমানিত রুমানা বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) শরণাপন্ন হয়েছেন। দেড় বছর আগের বকেয়া তিন লাখ টাকা আদায়ই নয়, ফোনে বাজে ভাষা ব্যবহারের জন্য ক্লাব ম্যানেজার জাকির হোসেনের শাস্তি প্রত্যাশা করেছেন তিনি।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরীকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে রুমানা তুলে ধরেছেন ঘটনার আদ্যোপান্ত। ম্যানেজার জাকিরের সঙ্গে কথোপকথনের অডিও রেকর্ডিং প্রমাণ হিসেবে মেইলে যুক্ত করেছেন এ ক্রিকেটার।
গত বছর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সবশেষ আসরে সাত লাখ টাকায় শেখ রাসেল স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট একাডেমির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন টাইগ্রেস অধিনায়ক রুমানা। দল গোছানোর দায়িত্বও দেওয়া হয় তাকে। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটার আতাপাতু, স্থানীয়দের মধ্যে শায়লা শারমিন, তাজিয়া, ইতি মন্ডল, সুলতানা ইয়াসমিনদের নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো দল গঠন করেন। দশ দলের আসরে তৃতীয় হয় রুমানবাহিনী।
রুমানার অভিযোগ, অর্ধেক টাকা দেওয়ার পর লিগ শেষে আর খেলোয়াড়দের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি ক্লাব অফিসিয়ালরা। স্থানীয় সব খেলোয়াড় মিলে পাওনা টাকার অংকটা প্রায় দশ লক্ষ।
রুমানা বলেন, ‘দলের বিদেশি ক্রিকেটাররাও খেলতে আসে আমার কথায়। লিগ শেষে তাদের প্লেন ফেয়ার আমার পকেট থেকে দিতে হয়েছে। লকডাউনের সময় যখন স্থানীয় সকল ক্রিকেটারের আর্থিক দুর্দশা চলছে তখন ক্লাবের সকল ক্রিকেটার বকেয়া পাওনা আদায়ে আমার কাছে আকুতি জানায়। তখন আমি ক্লাব ম্যানেজারকে ফোন করে টাকা পরিশোধের দাবি জানাই।’
‘‘কয়েকবার তারিখ দিয়েও তারা কথা রাখেনি। লকডাউনের সময় সবশেষ যখন কথা হয় তখন আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। বিষয়টি শুধু ব্যক্তিগতভাবে আমার না; পেশাদার ক্রিকেটার মহলের জন্যই অপমানজনক। যে কারণে আমাদের অভিভাবক বিসিবির কাছেই বিচার চেয়েছি।’’
জাকির হোসেন বলেন, ‘আমি তো মাঠের দিকগুলো দেখতাম। আর্থিক বিষয়টি সরাসরি আমার দেখার বিষয় নয়। সেটি দেখবেন অফিসিয়ালরা। করোনা পরিস্থিতি না এলে এতটা বিলম্ব হতো না।’
‘‘ক্লাব মিটিংয়ে আমি দাবি তুলেছি যেন দ্রুত খেলোয়াড়দের পাওনা টাকা পরিশোধ করা হয়। আমি নিজেও একসময় খেলতাম। খেলোয়াড়দের ব্যাপারটা আমি বুঝি। আমি ওদের পক্ষে সবসময়।’’
অবশ্য গালিগালাজের ব্যাপারটি এড়িয়ে গেছেন জাকির হোসেন। তিনি জানান, রুমানার কথাও শোভনীয় ছিল না। ফোনে কথা কাটাকাটি যে হয়েছে সেটি অবশ্য অস্বীকার করেননি তিনি।
ক্লাবের আর্থিক দিক দেখভালের দায়িত্বে থাকা মো: পলাশ বলেন, ‘খেলোয়াড়দের আট-দশ লাখের মতো টাকা পাওনা আছে। আমাদের চেয়ারম্যান ও সেক্রেটারির অসুস্থতার কারণে এতটা বিলম্ব হয়েছে। যথাযথ সমন্বয় আমরা করতে পারিনি। যে কারণে বাকি কিছু টাকার সংস্থান আমরা ওই সময় করতে পারিনি। তারপর তো করোনা চলে এলো। আমরা এটি নিয়ে আলাপ করছি।’
‘‘খুব শিগগিরই বাকি টাকা বুঝিয়ে দেব খেলোয়াড়দের। ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে আমাদের ক্লাব থেকে বড় একটি আয়োজন আছে। সেটা নিয়ে আজও মিটিং আছে। আয়োজনটা শেষ হওয়ার সপ্তাহখানেকের মধ্যে আমরা চেষ্টা করব খেলোয়াড়দের পাওনা মিটিয়ে দিতে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘আগের বার প্রথম বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে আমরা এবারই প্রথম প্রিমিয়ার লিগে উঠি। প্রথম বিভাগ লিগ শেষ হওয়ার আগেই আমরা সব পাওনা মিটিয়ে দিয়েছিলাম খেলোয়াড়দের। প্রথম বিভাগ আর প্রিমিয়ার অনেক পার্থক্য। সত্যি বলতে প্রিমিয়ারে দল করতে এত টাকা লাগে সেটি ক্লাবের অনেকের জানা ছিল না। কেননা তাদের জন্য এটি নতুন অভিজ্ঞতা। প্রথম প্রিমিয়ারেই আমরা বিগ বাজটের টিম করেছি। কিছু কারণে আমরা সময়মতো টাকার সংস্থান করতে পারিনি বলেই এমন হয়েছে। দ্রুতই টাকা পরিশোধ করা হবে।’
শেখ রাসেল স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট একাডেমির সাংগঠনিক সচিব কেএম শহিদউল্লাহ বলেন, ‘অসুস্থতার কারণে সেভাবে ক্লাবে সময় দিতে পারিনি। যোগাযোগেও ঘাটতি ছিল। এবারও আমরা লিগের জন্য দল করব। খেলোয়াড়দের পাওনা দ্রুতই পরিশোধ করা হবে। আর রুমানার সঙ্গে ম্যানেজারের বকাবাজি করা মোটেও ঠিক হয়নি। সে জাতীয় দলের একজন ক্রিকেটার, অধিনায়ক। যে পরিস্থিতিই হোক সম্মান দিয়ে কথা বলতে হবে।’