নিজস্ব প্রতিবেদক : মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ননএমপিওভুক্ত কারিগরি ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের বিশেষ আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার ঘোষণা দেন। আর দেশ প্রধানের ঘোষণানুযায়ী দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তাগণ তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করেন। সরেজমিনে যাচাই-বাছাই শেষে তাদের তৈরিকৃত শিক্ষক-কর্মচারিগণের নামের তালিকা অনুযায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ সরকার প্রধানের ঘোষণানুযায়ী আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু এই প্রণোদনা বিতরণেও বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না।
ঝালকাঠির বিভিন্ন উপজেলাতেও সরকারের বিশেষ এই আর্থিক প্রণোদনা প্রদানেও ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার ননএমপিওভুক্ত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার ১৪৩ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে সরকার ঘোষিত এই বিশেষ আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করা হয়।
নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যবিবরনী থেকে জানা যায়, নলছিটি উপজেলার দক্ষিণ তিমিরকাঠী স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার নাম দিয়ে ওই মাদ্রাসার ৫ জন শিক্ষককে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ওই মাদ্রাসার কোন অস্তিত্বই নেই। নেই কোন ছাত্রছাত্রী, আসবাবপত্র। তবে শিক্ষক এলো কোথা থেকে!
স্থানীয়রা জানান, এখানে আল হেরা নামে একটি কোচিং সেন্টার ছিল। বর্তমানে কর্তৃপক্ষ আল হেরা কোচিং সেন্টারকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। এখানে কোনদিনও মাদ্রাসার কার্যক্রম চলেনি। এখানকার স্থানীয় কোন ছেলেমেয়ে পড়তে এসেছে কি না তা এলাকার বাসিন্দারা জানেন না। কিন্তু আল হেরা কোচিং সেন্টার এখান থেকে সরিয়ে নেয়ার পরে স্থানীয় শাহেদ খান আকন নামে এক লোক মাদ্রাসার নাম দিয়ে একটি সাইনবোর্ড লাগান।
তথ্যবিবরনীতে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান, সহকারী শিক্ষক মার্জিয়া, সহকারী শিক্ষক মোর্শেদা, সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান, সহকারী শিক্ষক শামিম আকন এই ৫ জনের নাম দিয়ে প্রণোদনা নেয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের ৫ জনের কাউকেই স্থানীয় বাসিন্দারা চিনেন না। তাদের সম্পর্কে কোন কিছু জানেনও না।
প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের মোবাইলফোনে কল দিলে তিনি জানান, দক্ষিণ তিমিরকাঠি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা কোথায় তা তিনি জানেন না। তিনি বর্তমানে ঝালকাঠিতে একটি মাদ্রাসায় চাকরি করেন। তিনি এ ব্যাপারে শাহেদ আকনের সাথে কথা বলতে বলেন। সহকারী শিক্ষকের নাম দিয়ে প্রণোদনা নেয়া মিজানুর রহমানের মোবাইলফোনে কল দিলে তিনি জানান তিনি একজন সাংবাদিক। সাংবাদিক হয়ে কিভাবে শিক্ষকের ভুয়া নাম দিয়ে সরকারি প্রণোদনা নিলেন এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি। এবং এ বিষয়ে একাধিক ব্যক্তির দ্বারা এই প্রতিবেদককে মোবাইলফোনে কল দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করতে নিষেধ করেন। অন্য ৩ জন সহকারি শিক্ষক মোর্শেদা, মার্জিয়া এবং শামীম আকনের কোন হদিসই নেই। এই নামের কোন ব্যক্তিকে স্থানীয়রা চিনেন না। আর তাদের সম্বন্ধে কোনকিছু জানেনও না।
তবে মজার ব্যাপার হলো, এ বিষয়ে সাইনবোর্ড লাগিয়ে মাদ্রাসার সভাপতি দাবি করা শাহেদ আকনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি সরকারি প্রণোদনা নেয়া এই ৫ জনের কাউকেই চিনেন না বলে জানান। অথচ এ বিষয়ে নলছিটি শিক্ষা অফিসার আনোয়ার আজিম জানান, তিনি প্রণোদনা দেয়ার জন্য শিক্ষকদের যে তালিকা তৈরি করেছেন তা সঠিক এবং তারাই প্রকৃত এই মাদ্রাসার শিক্ষক। আর তাই তারা সরকার ঘোষিত প্রণোদনা পেয়েছেন।
এ বিষয়ে ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মোঃ জোহর আলি জানান, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। আর কেউ এখনো কোন অভিযোগ করেনি। তবে এ বিষয়ে তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কেএম/বি