শাহীন আনোয়ার
‘শিউলি ফুল, শিউলি ফুল, কেমন ভুল, এমন ভুল/ রাতের বায় কোন্ মায়ায় নিল হায় বনছায়ায়/ভোরবেলায় বারে বারেই ফিরিবারে হলি ব্যাকুল/ কেন রে তুই উন্মনা’- বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও মুগ্ধ হয়েছিলেন এই শিউলির রূপে।
ফুলের রূপে মুগ্ধ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘শিউলি তলায় ভোর বেলায় কুসুম কুড়ায় পল্লী-বালা।’ লিখেছেন, শিউলি ফুলের মালা দোলে শারদ-রাতের বুকে ঐ /এমন রাতে একলা জাগি সাথে জাগার সাথী কই…’।
আবহমান বাংলার চিরচেনা শিউলি ফুল সেই পৌরণিক কাল থেকে কত গান কাব্য সাহিত্য রচিত হয়েছে তার কোন হিসাব নেই।
শিশিরের শিউলি, শরতের শিউলি, শীতের শিউলি- কত নামে ডেকেছেন তারা। স্থানীয়ভাবে এই ফুল শেফালি নামেও পরিচিত।
নরম ও ধূসর বাকল বিশিষ্ট এই গাছটি ১০মিটার পর্যন্ত হতে পারে। মিষ্টি সুগন্ধি জাতীয় এই ফুলে রয়েছে পাঁচ থেকে সাতটি সাদা বৃত্তি ও মাঝে লালচে-কমলা টিউবের মত বৃন্ত। ফুলটি শরতে ফোটে। রাতে ফোঁটে আর সকালে ঝরে যায়। শরৎ ও হেমন্তে শিশির ভেজা সকালে ঝরে থাকা শিউলি অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য তৈরি করে।
কোনো কোনো ধর্মের বিশ্বাস শিউলি স্বর্গের ফুল। এই ফুল নিয়ে এমন গল্প আছে- এক রাজকুমারী সূর্যকে ভালোবেসে না পেয়ে আত্মহত্যা করে ফুল গাছে পরিণত হয়। সকাল বেলায় যেন সূর্যের মুখ না দেখতে হয়, তার জন্য সূর্য উঠার আগেই ঝরে পড়ে গাছ থেকে। রাজকন্যার নাম ছিল পারিজাতিকা। এই জন্য শিউলির আরেক নাম পারিজাত।
আগে যত্রতত্র শিউলির গাছ দেখা গেলেও নগর সভ্যতার কারণে এখন আর তেমনটি চোখে পড়ে না। শিউলি ফুল কী হারিয়ে যেতে বসেছে?
প্রযুক্তির যাতাকলে পিষ্ঠ নতুন প্রজন্ম এই ফুল চেনেনা বললেই চলে। নতুনকরে এখন আর যত্ন করে শিউলি গাছ কেউ রোপণ করে না।
অনাদর-অবহেলায় বেড়ে ওঠা শিউলি ফুলের গাছ তবু চোখে পড়ে মাঝে মধ্যেই। হয়ত এখনো শিউলি তলা ভোর বেলা পল্লি বালিকারা ফুল কুড়াতে ভিড় জমায়। হয়ত শিউলি ফুলের মালা গেঁথে এখনো প্রিয়জনের অপেক্ষায় থাকেন কেউ।