ইফতেখার শাহীন: চাঞ্চল্যকর বহুল আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার দ্বিতীয় খন্ডে থাকা ১৪ অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামীর ৬ জনকে ১০ বছর ৪ জনকে ৫ বছর ১ জনকে ৩ বছর কারাদন্ড ও বাকী ৩ জনকে বেকসুর খালাস প্রদান করেছেন আদালত।
বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা মামলায় শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান গতকাল মঙ্গলবার ২ টায় আদালতে এ রায়ের আদেশ প্রদান করেন।
১০ বছর সাজাপ্রাপ্ত ৬ জন আসামীরা হলেন রাশেদুল হাসান রিশান ফরাজী, রাকিবুল হাসান রিফাত হাওলাদার, আবু আব্দুল্লাহ রায়হান, অলি উল্লাহ অলি, মোঃ নাঈম ও তানভির হোসেন। ৫ বছর সাজাপ্রাপ্ত ৪ জন আসামিরা হলেন জয় চন্দ্র সরকার চন্দন, নাজমুল হাসান, রাকিবুল হাসান নিয়ামত ও সাইয়েদ মারুফ বিল্লাহ। ৩ বছর সাজাপ্রাপ্ত ১ জন আসামি হলেন প্রিন্স মোল্লা। বাকি ৩ জন বেকসুর খালাসপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন মারুফ মল্লিক, রাতুল সিকদার জয় ও আরিয়ান হোসেন শ্রাবন।
এ রায় ঘোষণার সময় ১৪ অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল এ রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। মোবাইল ফোনে ধারণকৃত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তা ভাইরাল হয়। এ ঘটনার পরদিন ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো পাঁচ-ছয় জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ।
নিহত রিফাত শরীফের পিতা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আমি আমার ছেলে হত্যার উপযুক্ত বিচার পেয়েছি। মহামান্য আদালতের এ রায়কে আমি শ্রদ্ধা জানাই। এ রায়ে আমি খুব খুশী।
ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক এই দু’ভাগে বিভক্ত করে মোট ২৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এতে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন ও অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি ১৪ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন শিশু আদালত। এতে ৭৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহনের পরে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক ও যুক্তিখন্ডন শেষে এ মাসের গত ১৪ অক্টোবর রায়ের দিন তারিখ ধার্য করেন আদালত। ধার্যকৃত দিন তারিখ অনুযায়ী গতকাল মঙ্গলবার ২৭ অক্টোবর এ রায় ঘোষণা করা হল।
আপাতত এ রায়ের মধ্য দিয়ে শেষ হল বরগুনার চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলা। তবে, সাজাপ্রাপ্ত অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামীদের উচ্চ আদালতে করা আপিলের রায়ের মধ্য দিয়ে পরিসমাপ্তি ঘটবে এ মামলার। এর আগে একই মামলায় প্রাপ্তবয়স্ক ৬ জন দন্ডপ্রাপ্ত আসামি উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন।
প্রসঙ্গত, শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফকে গত বছরের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে পুলিশের ক্রসফায়ারে নিহত নয়ন বন্ড ও তার সহযোগী সন্ত্রাসীরা দিনের আলোয় প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে তাকে বরগুনার জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে পাঠান হয়। ওই দিনই বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে রিফাত শরীফ মারা যান।