বিজয় ধর: হঠাৎ করেই শাপলা ফুলে ছেয়ে গেছে জুরাছড়ি সদরের কাপ্তাই হ্রদের অংশ। পাহাড় আর কাপ্তাই হ্রদ বেষ্টিত জুরাছড়ির সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে এই শাপলা ফুল।
সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছেন দর্শনার্থীরা। প্রতিদিন হ্রদের পানিতে ফুটে থাকা সাদা শাপলার এ সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য দূরদূরান্ত থেকে পর্যটকরা ভিড় জমাচ্ছেন।
রাঙামাটি সদর থেকে নদী পথে ৫৭ কিলোমিটার পূর্বে জুরাছড়ি উপজেলায় যেতে হয় নদী পথে। বাহন স্পিডবোট, লঞ্চ কিংবা ইঞ্জিনচালিত বোট।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আগে কখনো এ অঞ্চলে শাপলা ফুল দেখা যায়নি। বছরের ডিসেম্বরের শুরুর দিকে কাপ্তাই হ্রদে প্রথমবারের মত সাদা শাপলা ফুল ফোটে। এটার খবর পেয়ে দূর থেকেও দর্শনার্থীরা দেখতে আসছেন। তারা নৌকায় বিলের পানিতে ঘুরে ঘুরে শাপলা ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করেন। কেউ সেলফি তোলেন। কেউ আবার শাপলা তুলে নিয়ে যান।
স্থানীয়রা জানান, রাতে ফুটে থাকা শাপলা ফুল রোদ ওঠার পর ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়। এ কারণে শাপলা ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে সূর্যের আলো তীব্র হওয়ার আগে পৌঁছাতে হবে।
জুরাছড়িতে বেড়াতে আসা শিক্ষিকা তন্দ্রা চাকমা জানান, করোনাকালে বাসার বাইরে যাওয়া হয় না। জুরাছড়িতে শাপলা ফুল ফুটেছে জেনে দেখতে এসেছি। দীর্ঘদিন পর পরিবারের সঙ্গে বেড়াতে শাপলার বিলে এসে মুগ্ধ হয়েছেন। শাপলার অসাধারণ নৈসর্গিক দৃশ্য দেখে অভিভূত। শাপলা বিলের শান্ত পরিবেশে এসে মন প্রশান্তিতে ভরে গেছে। এক কথায় মুগ্ধ তারা।
রাঙামাটির উন্নয়ন কর্মী নুকু চাকমা বলেন, আমার অনেক দিনের শখ শাপলা দেখা। অবশেষে সে স্বপ্ন পূরণ হলো। আমি ধন্য। আমি মূলত ফুল আর প্রকৃতি প্রেমী। যে কোন ফুল’ই আমাকে খুব টানে। আর সেটা যদি শাপলা হয় তাহলে তো এর একটা আলাদা আবেদন কাজ করে।
তিনি বলেন, পাহাড়ী এলাকায় এমন শাপলার বিল দেখার সৌভাগ্য হবে বুঝতে পারিনি। ফেসবুকের মাধ্যমে আমি এই শাপলা বিলের কথা জানতে পারি, দেখে ধন্য হলাম।
ঢাকা থেকে রাঙামাটিতে ঘুরতে আসা পর্যটক শিলা বলেন, আমি সাজেক ঘুরতে এসেছিলাম। শুনলাম রাঙামাটির জুরাছড়িতে কাপ্তাই লেকে শাপলা ফুলের সমাহার, তাই চলে এলাম। হ্রদের মাঝখানে এমন সৌন্দর্য্য যে কাউকে বিমোহিত করবে।
স্থানীয় সাংবাদিক স্মৃতি বিন্দু চাকমা বলেন, শাপলার বিলকে ঘিরে বৃহৎ পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব। সরকার একটু সুদৃষ্টি দিলে এখানে অবকাঠামোগত কিছু সুবিধা দিলে দর্শনার্থী অনেক বাড়বে। এতে প্রত্যন্ত এই জুরাছড়ির আর্থ-সামাজিক ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে।
জুরাছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার জীথেন্দ্র নাথ বলেন, জুরাছড়িতে শাপলার বিল পর্যটনের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। কিভাবে এই শাপলার বিলকে সংরক্ষণ করে আরও আকর্ষণীয় ও পর্যটন বান্ধব করে গড়ে তোলা যায় সে ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা চলছে।
জুরাছড়ি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রিটন চাকমা বলেন, জুরাছড়ি উপজেলায় কাপ্তাই হ্রদে হঠাৎ করে শাপলা ফুল ফুটেছে। রাঙামাটির অন্যান্য উপজেলার মতো জুরাছড়িতে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটেনি। ভবিষ্যতে যদি এই শাপলা ফুলের চাষ করা যায় তাহলে এখানকার পর্যটন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে।