নববর্ষে সাতছড়ি পর্যটকমুখর

মো. মামুন চৌধুরী : ইংরেজি নববর্ষে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাটের পাহাড়ি এলাকার সাতছড়ি পর্যটকমুখর হয়ে উঠে। সকাল হতেই শুরু হয় পর্যটক আগমন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে পর্যটক সমাগম বৃদ্ধি পায়। উদ্যানে কাউকে কাউকে মুঠোফোনে সেলফি তুলতেও দেখা যায়। অনেকে আবার বনের ভিতরে প্রবেশ করে পশু পাখির বিচরণ উপভোগ করেন। কেউ কেক কেটে, নেচে গেয়ে, কাউকে আবার দেখা গেল প্রিয়জনকে নিয়ে গল্প করে নববর্ষ পালন করতে।

যদিও করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালের ১৯ মার্চ এ পর্যটন স্পটটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর থেকে গত আট মাস ধরে পর্যটক না আসায় বনটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য পুরোপুরিভাবে ফিরে পায়।

সাতছড়ি বন্যপ্রাণি রেঞ্জের সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন বলেন, উদ্যানে প্রাণীর সংখ্যা বেড়েছে। বন হয়েছে গভীর। এসব রক্ষায় আমরা নিয়মিত টহল দিয়ে যাচ্ছি। যার ফলে এ বনে বনদস্যুরা প্রবেশ করতে পারছে না। তারা প্রবেশ করার চেষ্টা করলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খুলে দেওয়ায় পর্যটকরা আসতে শুরু করেছে উদ্যানে। এ নববর্ষের প্রথম দিনে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত উদ্যানের মুক্ত বাতাসে পযটকরা মনখুলে ঘুরে বেড়িয়েছেন। বয়স্কদের টিকিট বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ২৫ টাকা।

হতদরিদ্রদের পাশে থাকার প্রত্যয় নিয়ে গঠন হওয়া এফডিপি পক্ষ থেকে সাতছড়িতে কেক কেটে নববর্ষ পালন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে এফডিপি সদস্য শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ গাজিউর রহমান ইমরান, প্রভাষক ফয়সল আহমেদ, আবুল খায়ের, বেলাল, সুমন, রুপন, জার্নেল, রাসেল, ফরিদ, জুনাইদ, আশরাফুল, সাইফুল, সালাম, সাইফুলরা বলেন, সাতছড়িতে এসে মনখুলে ঘুরে বেড়িয়েছি। কেক কেটে নববর্ষ পালন করেছি। নিজেদেরে মধ্যে লটারী দিয়ে ভাগ্য পরীক্ষা করেছি। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়টা বেশ ভালই কেটেছে।

এফডিপি ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ শত শত পর্যটক উদ্যানে এসে নববর্ষের দিনটি আনন্দ উল্লাসের মধ্যে অতিবাহিত করেন।

উল্লেখ্য, সাতছড়ি উদ্যানের ইতিহাস জানতে হলে ফিরে যেতে হবে ১৯১২ সালে। ওই বছর প্রায় ১০ হাজার একর দুর্গম পাহাড়ি জমি নিয়ে গঠিত রঘুনন্দন হিলস্ রিজার্ভই কালের পরিক্রমায় আজকের উদ্যান। অবশ্য জাতীয় উদ্যান হওয়ার ইতিহাস বেশি দিনের নয়। ২০০৫ সালে ৬০০ একর জমিতে জাতীয় উদ্যান করা হয়। এ উদ্যানের ভেতরে রয়েছে অন্তত ২৪টি আদিবাসী পরিবারের বসবাস। রয়েছে বন বিভাগের লোকজন।

পর্যটকদের জন্য চালু করা প্রজাপতি বাগান, ওয়াচ টাওয়ার, হাঁটার ট্রেইল, খাবার হোটেল, রেস্ট হাউস, মসজিদ, রাত যাপনে স্টুডেন্ট ডরমিটরিসবই এখন নিস্তব্ধ।

উদ্যানে দুই শতাধিক প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে শাল, সেগুন, আগর, গর্জন, চাপালিশ, পাম, মেহগনি, কৃষ্ণচূড়া, ডুমুর, জাম, জামরুল, সিধা জারুল, আওয়াল, মালেকাস, আকাশমনি, বাঁশ, বেত ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

১৯৭ প্রজাতির জীব-জন্তুর মধ্যে প্রায় ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৬ প্রজাতির উভচর। আরো আছে প্রায় ২০০ প্রজাতির পাখি। রয়েছে লজ্জাবতী বানর, উল্লুক, চশমা পরা হনুমান, শিয়াল, কুলু বানর, মেছো বাঘ, মায়া হরিণের বিচরণ। সরীসৃপের মধ্যে আছে কয়েক জাতের সাপ। কাও ধনেশ, বন মোরগ, লাল মাথা ট্রগন, কাঠঠোকরা, ময়না, ভিমরাজ, শ্যামা, ঝুটিপাঙ্গা, শালিক, হলদে পাখি, টিয়া প্রভৃতির আবাসস্থল এই উদ্যান।

Print Friendly

Related Posts