ডা. জাহেদ পারভেজ
শীতকালে আর্দ্রতার অভাবে ত্বক হয়ে পড়ে রুক্ষ। ফলে ত্বক মলিন এবং অনুজ্জ্বল দেখায়। যাদের ত্বক আগে থেকেই শুষ্ক প্রকৃতির তাদের সমস্যা শীতকালে আরও বেড়ে যায়। হাত-পা এমনকি মুখের চামড়া উঠতে থাকা, ত্বক ফেটে রক্ত বের হওয়া- এসব সমস্যা দেখা দেয়।
অনেক সময় শীতে ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা হারিয়ে চুলকানি, ফাংগাল ইনফেকশন হয়ে থাকে। মাথার ত্বকে খুশকির উপদ্রব এবং চুলকানিও বেড়ে যায়। অনেক সময় এই খুশকি চোখের পাপড়ি, ভ্রু, পুরুষদের দাড়িতেও ছড়িয়ে যায়। একটা সময় লোমকূপ বন্ধ করে ছোট ছোট দানা বা ফুসকুড়ি সৃষ্টি করে।
এছাড়া সোরিয়াসিস রোগের প্রকোপ শীতকালে বৃদ্ধি পায়। এ অসুখে হাঁটু, কনুই, মাথার ত্বক থেকে মাছের আশের মতো চামড়া উঠতে থাকে। ৩ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে এবং কখনো কখনো বড়দের মাঝে এটোপিক ডার্মাটাইটিস নামক ত্বকের রুক্ষতাজনিত সমস্যা দেখা যায়।
যাদের এই সমস্যা থাকে, শীতকালে তাদের ত্বক আরও শুকিয়ে চুলকানি বেড়ে যায়। যেসব শিশুর অ্যাজমা থাকে তাদের এটি বেশি হয় এবং এদের ত্বকীয় সংক্রমণও বেশি হয়। উলের কাপড়, পুরনো লেপ তোষক থেকেও ত্বকের ও শরীরে অ্যালার্জি বেড়ে যায়।
করণীয়:
> যেহেতু বেশির ভাগ সমস্যাই শুষ্কতাজনিত কারণে বৃদ্ধি পায়, তাই শুষ্কতা দূর করতে হবে। অর্থাৎ ত্বকের ধরন বুঝে ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। হায়ালুরনিক এসিড সমৃদ্ধ ক্রিম ব্যবহার করা ভালো।
>শীতকালে ঠান্ডার কারণে অনেকেই প্রতিদিন গোসল করতে পারেন না বা করেন না। এটা ঠিক নয়। ত্বক অপরিষ্কার থাকলে জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। তাই কুসুম গরম পানি ব্যবহার করে গোসল করতে হবে। একান্তই না পারলে ত্বক তোয়ালে ভিজিয়ে মুছে নিতে হবে।
> খুশকির সংক্রমণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিয়মমাফিক কিটোকোনাজল শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।
> শীতকালে অনেকেই সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন না। ত্বককে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে বাঁচাতে এই সময়ও সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
> অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকে মাঝে মাঝে পানির ঝাপটা দিলে আর্দ্র থাকবে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
> অতিরিক্ত গরম পানি ত্বকে ব্যবহার করা যাবে না। এতে রুক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
> পায়ের গোড়ালি ফাটা রোধ করতে পায়ে নিয়মিত ভেসলিন লাগাতে হবে এবং পা পরিষ্কার রাখতে হবে।
> যাদের সোরিয়াসিস, এটোপিক ডার্মাটাইটিস, বংশগত অ্যাজমা এবং অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের শীতের শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিয়ম মতো চলতে হবে।
ঘরোয়া যত্ন:
গোসলের আগে ত্বকে নারিকেল বা জলপাই তেল ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এতে ত্বক নরম থাকে,পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। ঠোঁট খুব বেশি শুষ্ক হয়ে গেলে দুধের সর এবং মধু মিশিয়ে ঠোঁটে মালিশ করলে ঠোঁটের আর্দ্রতা ঠিক থাকবে। মাথায় খুশকি হলে তেলের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে ব্যবহার করলে খুশকি কমে যায়। সপ্তাহে দুদিন নিমপাতা সেদ্ধ পানিতে দিয়ে গোসল করলে তা অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। ব্যাকটেরিয়া বা ফাংগাস সংক্রমণের আশঙ্কা কমে যায়। তবে বিশেষজ্ঞ চর্মরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া উচিত।
ডা. জাহেদ পারভেজ: (সহকারী অধ্যাপক) ত্বক, চর্ম যৌন ও ট্রান্সপ্ল্যন্ট সার্জারী
চেম্বার: ডা. জাহেদ’স এন্ড স্কিনিক, ১৫২/১/এইচ, (৬ তলা) গ্রীন রোড, পান্থপথ মোড়, ঢাকা। রোগী দেখার সময়: বিকেল ৪ঃ৩০ হতে ১০ টা। শুক্রবার বন্ধ।
০১৭৭৫-৫৫ ১৫ ২৩, ০১৭০৭-০১১-২০০, ০১৭৩০ ৭১৬ ০৬০