বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচন চলাকালে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতার ঘটনায় দুইজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন; নির্মাণ শ্রমিক আলাউদ্দিন আলো (২৮) এবং নিজাম উদ্দিন।
চট্টগ্রাম নগরের খুলশী থানার আমবাগান এলাকায় নির্বাচনী সহিংসতায় গুলিতে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। আজ বুধবার সকালে নগরীর ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের আমবাগান ইউসেপ টেকনিক্যাল স্কুল কেন্দ্রে সংঘর্ষে মো. আলাউদ্দিন (২৮) নামে এ যুবকের মৃত্যু হয়।
জানা গেছে, সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর আলাউদ্দিনকে সকাল ১০টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আলাউদ্দিন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী মাহমুদুর রহমানের কর্মী। কেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে লাগা সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের ছোঁড়া গুলিতে নিহত হন তিনি। নিহতের বাবার নাম সোলতান মিয়া (মৃত)। তিনি কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা ছিলেন। নগরের আমবাগান এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন আলাউদ্দিন।
চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘আমবাগান থেকে নির্বাচনী সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ এক যুবককে হাসপাতালে আনা হলে তাকে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।’
এর আগে চসিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে আরেক ভাই খুন হয়েছেন। নিহত যুবকের নাম নিজামউদ্দীন। সকাল ৮টার দিকে নগরের পাহাড়তলীতে এ ঘটনা ঘটে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে। আজ বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে। এবারই প্রথমবার সবকটি কেন্দ্রে ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) অনুষ্ঠিত হচ্ছে নির্বাচন।
এর আগে রিটার্নিং অফিসার হাসানুজ্জামান বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সব কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আশা করছি, ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অসুবিধা হবে না। সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে পুরো নির্বাচনী এলাকাকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে।’
‘নির্বাচনে ৭ হাজার ৭৭২ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন আছে। সেই সঙ্গে ২৫ প্লাটুন বিজিবি, আছে র্যাবের ৪১টি টিম। এ ছাড়া পুলিশের রিজার্ভ টিম ও আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে নির্বাচনী এলাকায়,’ যোগ করেন হাসানুজ্জামান।
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ৪১৬টি কেন্দ্রকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে ১৮ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে ১৬ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত আছেন।’
চট্টগ্রাম নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে মেয়র ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ২২৬ জন কাউন্সিলর প্রার্থী। এর মধ্যে ৩৯ ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন ১৬৯ জন। বাকি দুই ওয়ার্ডে ওই পদে নির্বাচন হচ্ছে না। সংরক্ষিত ১৪টি ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন ৫৭ জন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ৪১ ওয়ার্ডে ৭৩৫টি ভোট কেন্দ্রে তৈরি করা হয়েছে ৪ হাজার ৮৮৬টি বুথ। এসব কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ৭৭৫ প্রিসাইডিং অফিসার, ৪ হাজার ৮৮৬ সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও ৯ হাজার ৭৭২ পোলিং অফিসার।
চসিক নির্বাচনে মেয়র পদে মোট সাতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবুল মনজুর, মোমবাতি প্রতীকে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হাতি প্রতীকে খোকন চৌধুরী, চেয়ার প্রতীকে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম, নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের রেজাউল করিম চৌধুরী ও ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেন।
এবার চসিক নির্বাচনে ভোটার ১৯ লাখ ১৭ হাজার ৯৭৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৭২৩ ও নারী ভোটার ৯ লাখ ৫২ হাজার ৩২৯ জন।