আরিফুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলে শ্বশুর শাশুড়ির সেবা করলেই পুত্রবধূকে উপহার পৌছে দিচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তা। এমন ব্যতিক্রম উদ্যোগ নিয়েছেন টাঙ্গাইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর মোশারফ হোসেন। তিনি নিজে গিয়ে তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে বেতনের টাকা থেকে এ সব উপহার পৌছে দিচ্ছেন।
উপহারের মধ্যে রয়েছে টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ী, পোড়াবাড়ীর চমচম ও ক্রেস্ট। সেই সাথে পরিবারকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।
মঙ্গলবার মীর মোশারফ হোসেন তিন জনকে এই উপহার দেন। পুলিশের এই কর্মকর্তার বাড়ি জামালপুরে। পিতা মৃত আব্দুল হক সরকার। দুই ভাই তিন বোনের মধ্যে মোশারফ হোসেন সবার ছোট।
জানা যায়, থানার ভিতরে প্রবেশ করেই একটি ফেস্টুনে লেখা আছে ‘বৃদ্ধাশ্রম নয়, পরিবারই হোক বাবা-মায়ের নিরাপদ আবাস’। পুত্রবধূ যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তার শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমত করে আল্লাহ তাকে আখিরাতে পুরস্কার প্রদান করবেন। সেখানে আরও লেখা রয়েছে শুশ্বর শাশুড়িকে যে সেবা যত্ন করবে এবং একসাথে বসবাস করবে সেই ভাগ্যবতীকে পুরস্কৃত করা হবে। ফেস্টুনে যোগাযোগের জন্য ফোন নাম্বার উল্লেখ করা ছিল।
টাঙ্গাইল শহরের কলেজ পাড়া এলাকার শিউলী আক্তার বলেন, ‘আমি টাঙ্গাইল জেলা সংবাদে একটি পোস্ট দেখতে পাই। সেটি দেখে আমার খুব ভালো লাগে। আমিও আমার শ্বশুর-শাশুড়িকে নিজের বাবা-মায়ের মতো ভালোবাসি এবং তাদের সেবা যত্ন করি। তাদের সেবা করে আমি আত্মতৃপ্তি পাই। বিষয়টি অবগত করার জন্য আমি ওই নাম্বারে ফোন করি। পরবর্তীতে বিকেল বেলায় দেখি ওসি স্যার নিজে এসে উপহারগুলো আমার হাতে তুলে দিয়ে যান।
মাহমুদা আক্তার বলেন, আমি পুরস্কার পেয়েছি। পুরস্কার পেয়ে নিজের প্রতি আরও আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। আমি আমার শ্বশুর শাশুড়িকে এমনিতেই দেখাশুনা করি। ভবিষ্যতেও একই রকম তাদের সেবা করে যাব।
শ্বশুর কাজী মুজিবুর রহমান বলেন, আমার মেয়ে আমাকে যেমন ভালোবাসে, আমার ছেলের বউও ঠিক তেমনি ভালোবাসে। আমাদের দেখভাল ও সেবাযত্নে কোন ত্রুটি করে না। এমন ছেলে বউ পেয়ে আমরা সত্যিই ভাগ্যবান।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর মোশারফ হোসেন বলেন, বিভিন্ন জায়গায় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে আমরা লক্ষ্য করেছি এবং আমাদের কাছে অভিযোগ আসে বৃদ্ধ বয়সে সন্তানের অবহেলায় বাবা ও মা অযত্নে জীবন যাবন করেন। অনেকেই ঠিকমত খাবারও দেয় না। ঠিক মতো সেবাযত্ন করে না। আর্থিক অবস্থা ভালো থাকা সত্বেও সন্তানেরা বাবা-মাকে ছেড়ে বউ বাচ্চা নিয়ে আলাদা বসবাস করে। অনেক সন্তানরা কাজের প্রয়োজনে বাহিরে ব্যস্ত থাকে। তাদের বাবা-মা পুত্রবধূর কাছে বেশি সময় কাটায়। আমার উদ্দেশ্য ওই পুত্রবধূদের উৎসাহিত করা।
তিনি আরও বলেন, যারা বাবা মাকে ছেড়ে দুরে চলে যায় এবং আবার অনেক পরিবারে একাধিক সন্তান আছে, তখন তাদের পিতা-মা কে কে বরণ-পোষণ নিয়ে ঠেলাঠেলি করে দূরে সরিয়ে দেয়। সে সব সন্তান ও পূত্রবধূর প্রতি প্রতিবাদ স্বরূপ হয়ে, আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে যাতে কোন বাবা মা অবহেলা এবং অযন্তে বৃদ্ধাশ্রমে যেতে না হয়।