খান মাইনউদ্দিন, বরিশাল : আন্দোলন থেকে সরে এসে সমঝোতার পথে হাঁটলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টায় নিজ সভাকক্ষে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন উপাচার্য ড. ছাদেকুল আরেফিন। এ সময় পরিবহন মালিক শ্রমিকদের সঙ্গে সমঝোতার জন্য উপাচার্যকে প্রস্তাব দেন শিক্ষার্থীরা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থী অমিত হাসান রক্তিম বলেন, আমরা আন্দোলন করতে চাইনি। দাবি আদায় করতে চেয়েছি। দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন উপাচার্য।
অমিত হাসান রক্তিম বলেন, আমরাতো কখনোই আন্দোলন চাইনি। আমরা চেয়েছি দাবি আদায় করতে। শিক্ষার্থীরা যেসব দাবি করেছেন সেসব দাবি পূরণ করবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের ওপর যেন বাস মালিক-শ্রমিকরা নির্যাতন না করেন সেটার লিখিত দিতে হবে, রূপাতলী হাউজিং কমিটি সেখানে বসবাসকারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবেন, বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপনকে বয়কট করতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ছিনতাই হওয়া মোবাইল, ল্যাপটপ ফেরত দিতে হবে এবং মারধরের শিকার শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে মামলায় কাওছার হোসেন শিপনকে অর্ন্তভুক্ত করে গ্রেপ্তারের বিষয়টি।
অমিত হাসান বলেন, আন্দোলনের চেয়ে সমঝোতাই ভালো।
তবে শুরুতে শিক্ষার্থীদের মারধরের বিচার চেয়ে আন্দোলনে সক্রিয় থাকা অনেক শিক্ষার্থীকে সর্বশেষ দুটি বৈঠকে দেখা যায়নি।
প্রথম দিকে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তাদের সঙ্গে কারও বিরোধ নেই। তারা চেয়েছেন নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীরা বিচার পাক। কারণ বিগত দিনেও পরিবহন শ্রমিকদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এরই মধ্যে কেউ কেউ হামলায় জড়িতদের সঙ্গে আঁতাত করেছেন। সেজন্য আন্দোলন থেকে সরে গেছেন তারা।
এদিকে মঙ্গলবার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করেছে প্রশাসন। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত পরীক্ষা হবে না বলে উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক স্বাক্ষরিত আদেশে জানানো হয়।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবিতে সাত দিন ধরে মহাসড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। তবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ও চরমোনাইয়ের বার্ষিক মাহফিল উপলক্ষে ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে অবরোধ স্থগিত করা হয়।
শিক্ষার্থীদের দাবি, বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপনের নেতৃত্বে তাদের মারধর করা হয়েছে। মারধরে জড়িতদের নামে মামলা, গ্রেপ্তার ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাসহ তিন দাবিতে আন্দোলনে নামেন তারা।
আন্দোলনের মুখে দুই শ্রমিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। যদিও গ্রেপ্তার দুই শ্রমিক হামলায় জড়িত ছিলেন না বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
এরই মধ্যে গ্রেপ্তার দুই শ্রমিকের মুক্তির দাবিতে ধর্মঘট ডাকেন শ্রমিকরা। শিক্ষার্থীদের অবরোধ শ্রমিকদের ধর্মঘটে ভোগিন্তিতে পড়ে দক্ষিণাঞ্চলবাসী। ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ধর্মঘট স্থগিত করেন বাস মালিক ও শ্রমিকরা। মঙ্গলবার শ্রমিকদের সঙ্গে সমঝোতার প্রস্তাব দিলেন শিক্ষার্থীরা।