এএইচএম নোমান
এ মাসেই গেল বিশ্ব প্রবীণ দিবস। প্রবীণদের নিয়ে অবশ্যই ভাববার আছে। কারণ প্রবীণরাই সমাজের অলংকার। একজন প্রবীণ দেশ সমাজ পরিবেশ-এর ভালমন্দ নিয়ে যেভাবে ভাবতে পারেন, তা হয়ে ওঠে আমাদের চলার পথের দিশা। এমন একজন প্রবীণ ব্যক্তিত্ব কিউরিয়াস টিভি’র নির্বাহী প্রধান আশি বছর বয়সী ডরপ’র প্রতিষ্ঠাতা জনাব এএইচএম নোমান। যিনি মায়েদের নিয়ে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন। আজ নারীরা যে মাতৃত্ব ভাতা এবং মাতৃত্বকালীণ নানা সুবিধা পাচ্ছেন তার জন্য এই প্রবীণ ব্যক্তির কাছে আমাদের ঋণ স্বীকার করতেই হয়। কারণ, তিনি যদি বেসরকারীভাবে মায়েদের ভাতা প্রদান শুরু না করতেন এবং রাষ্ট্রিয় বিভিন্ন ফোরামে মাতৃত্বভাতার দাবি না তুলতেন, তাহলে এখনও হয়তো এসব মায়েরা বঞ্চিতই থাকতেন। এক সাক্ষাৎকারে মাতৃত্বভাতা নিয়ে তার সে লড়াই নিয়ে খোলাখুলি অনেক কথা বলেছেন। এখানে সাক্ষাৎকারটি তুলে দেওয়া হলো-
প্রশ্ন: আপনি তো ডরপ’র প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও। ডরপ-এ অনেকগুলো মানব কল্যাণমূলক কাজ রয়েছে সেগুলোর মধ্যে একটা আপনারা একটা উদ্যোগ নিয়েছিলেন ‘মাতৃত্বকালীন ভাতা’। এটা আপনারা শুরু করেছিলেন এবং এটা এখন বড় বাস্তবতা। এখন সরকারিভাবে মাতৃত্বকালীন ভাতা দেয়া হচ্ছে। এই সম্পের্কে আপনি কিছু বলবেন কি, যে এই চিন্তাটা আপনার মাথায় কিভাবে এসেছিল এবং আর এটায় আপনারা কতটা সফল হয়েছেন।
এএইচএম নোমান: দেখেন এটা আমার একটা প্রিয় জিনিস এবং এটা আল্লাহ তরফ থেকে আসছে, কিভাবে আসছে মাথায় সেটা আমি জানি না। এটা মা দিবস হিসেবে ২০০৫ সালে সরকারিভাবে বিশাল আয়োজন ছিল। সেখানে মন্ত্রী-মিনিস্টার, স্পিকার সবাই ছিল। সেখানে মা’দের ৩ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি সেটাকে ৬ মাসের করার জন্য দাবি আসল। এবং সবেতনে ছুটির দাবি আসল । তখন আমি হঠাৎ সংক্ষেপে বললাম মা কি যারা শুধু শিক্ষিত, চাকরি করে তারা বেতনও পাবে আবার পিতৃকালীন ছুটি পাবে ডেলিভারির সময়। যারা নদী ভাঙ্গা, যারা বস্তিতে থাকে, যারা দিন-মজুর তারা কি মা না, তাহলে সেই মাদেরকে কেন আমরা দিব না। সেই মাদের জন্য কেন আমরা কোন ভাতার ব্যবস্থা করি না। সেই ভাতার নাম আমরা মাতৃত্বকালীন ভাতা দিতে পারি। এদের বাচ্চা আসলে তাদের দুধ খাওয়াতে হবে বা একটু বিশ্রাম নিতে হবে, ভাল পরিবেশে রাখতে হবে। তবে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ নিচে হলে তারা ভাতা পাবে না, বিয়ের ২ বছরের আগে বাচ্চা হলে তারা ভাতা পাবে না। আবার যদি ২ বাচ্চার বেশি হয় তাহলে সে ভাতা পাবে না। এই রকম কতোগুলো শর্ত দিয়ে এই প্রস্তাব দেই- এভাবে কথাটা আসছে।
আজকে আল্লাহর রহমতে এখন ১২ লক্ষ মা মাতৃত্বকালীন ভাতা পাচ্ছেন। এই জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি বছরে ১২ লক্ষ মাকে এই ভাতা দিচ্ছেন এবং মেয়াদ করেছেন ৪ বছর। আমি প্রথমে শুরু করেছিলাম মাত্র ২ বছর দিয়ে। যেহেতু ৪ বছর মেয়াদ করেছে আমি এখন জোরালো দাবি জানিয়েছি ৫ বছর করার জন্য এবং এখন ৮শত টাকা ভাতা পায় আমি দাবি করেছি ৮ হাজার টাকা করতে। যেহেতু পোশাক শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন এটা। এই পরিকল্পনাটাও কিন্তু বয়স্কদের মাথা থেকে এসেছে আমি তখন বয়স্ক তো। আজ থেকে ১৮ বছর আগে এটা হয়েছে তখন আমার বয়স ছিল ৬০-৬৫ অর্থাৎ প্রবীণ। কাজেই প্রবীণদের যে গুণ নাই সেটা কিন্তু আবারও ভুল প্রমাণিত হলো। এটা আবারো প্রমাণিত হল যে ‘ওল্ড ইজ গোল্ড’।
আবার শিশুদের জন্য শুরু করা হলো। এই যে প্রবীণ আর শিশুদের যে একটা মিলন এবং একটা সেতু বন্ধনী সরকার করছে। এর থেকে বিশাল আর কি হতে পারে। মায়েদের ভাতা ৫ বছরের জন্য করা এবং তাদের বাচ্চাদের একটা স্বাস্থ্য কার্ড দেয়া, যাতে তারা স্বাস্থ্যসেবা পায়। একটা শিক্ষা কার্ড দিতে পারি, যাতে তারা স্কুলে ভর্তি হতে পারে। একটা ঘর করে দেই যাতে ঘরহীন না থাকে। একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেই তাহলে আমরা একটা স্বনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়তে পারবো। সাম্যতা আসবে। ন্যায্যতা আসবে। ভোট কেনাবেচা আর থাকবে না। নারীদের ক্ষমতায়ন হবে। নারীরা একটা মানব সম্পদে তৈরি হবে। তখন তাঁরাই অন্য সম্পদ সৃষ্টি করতে পারবে। আমরা এখন দালান-কোঠা করি, মানুষ তৈরি করি না। আগে মানুষ তৈরি করতে হবে, যাতে মানুষগুলো দালান-কোঠা তৈরি করতে পারে। তাহলে সেটাই হবে প্রোপার উন্নয়ন ব্যবস্থার ব্যবহার এবং কার্যকারিতা।
প্রশ্ন: আর মাতৃত্ব ভাতা নিয়ে আপনাকে যে শ্রম দিতে হয়েছে, কত ছোটাছুটি করতে হয়েছে তা আমরা জানলাম। আপনি কি একটু বলবেন যে বাংলাদেশের প্রবীণদের সুন্দর জীবন যাপনের জন্যে আপনার কোন পরামর্শ আছে কিনা। তরুণ সমাজের প্রতি প্রবীণদের সুন্দর জীবন-যাপনের জন্য তরুণ সমাজের প্রতি আপনার কোন পরামর্শ আছে কিনা।
এএইচএম নোমান: আমার মনে হয় আমার এই সব কথা এসে গেছে। তারপরেও একটু গুছিয়ে যদি বলি তাহলে দাঁড়ায়- আমি আগে বৈষম্যের কথা বলছি, ধনী-গরিবের কথা বলছি, সাম্যতার কথা বলছি, ন্যায্যতার কথা বলছি। আল্লাহ প্রদত্ত মা কে কেন্দ্র করে যদি আমরা বটমলাইনিং উন্নয়ন এপ্রোচে, যে ভাতা যা সরকার এখন দিচ্ছে তাদেরকে ‘স্বপ্ন প্যাকেজ’ আওতায় আনুন। বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখছে সবাই স্বপ্ন দেখে সেই স্বপ্ন কেন্দ্রীক শিশুদেরকে আমরা মুরুব্বিরা সাম্যতায় এগিয়ে নেই। তরুণদের তো চাকরিতে প্রবেশ ২৮-৩২ এর মধ্যে। ৬০ এর দিকে রিটায়ার নেয়। তাহলে এসব কিছুর মধ্যে আমরা সবাই কিন্তু এসে গেছি। শুধু শিশুরা, রাজনীতিবিদরা, আমরা যারা বয়স্করা আছি সবাই মিলে একটা সাম্যতার ক্ষেত্র তৈরি করতে পারি। সবাই মিলে আমরা একটা সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি। যেখানে স্বাস্থ্য-শিক্ষা দিয়ে সরকার অলরেডি স্বপ্ন প্যাকেজ করেছে। এতে দেখা গেছে গরিব মা’দের কারো কাছে হাত পাততে হচ্ছে না। এভাবে যেন আমরা সারা বাংলাদেশকে কভার করতে পারি। সুতরাং দারিদ্র্য বিমোচনে স্বাস্থ্যকার্ড, শিক্ষাকার্ড, আবাসন, কর্মসংস্থান ও পরিবেশ সম্বলিত স্বপ্ন প্যাকেজটা সরকার কার্যকর করুক- এটাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানাই।
সূরা রাদ, পারা ১৩ আয়াত ১১ তে বলা হয়েছে : অবশ্যই আল্লাহ কোনো জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে।
সাক্ষাৎকার গ্রহণে: খান মোহাম্মদ সালেক, কিউরিয়াস টিভি।