৯ বছর আগে সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিতের আহ্বানে সাড়া দিয়ে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওলিপুরে গড়ে উঠে ‘হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক’। গ্রামীণ এলাকায় প্রতিষ্ঠিত এ পার্কে গত ৯ বছরে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
প্রায় ৩০০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত শিল্প পার্কটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১১ সালে। ২০১৩ সালে উৎপাদন শুরু হলেও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় ২০১৪ সালে। কর্মরত লোকবলের ৮০ ভাগই স্থানীয়। এছাড়া কর্মীদের ৬৫ ভাগই নারী। বর্তমানে শিল্প পার্কটিতে ৪৭টি প্রোডাকশন লাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে। শিল্প পার্কটি স্থাপনের ফলে এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটছে।
জ্বালানি ও ভূমির সহজলভ্যতা, প্রতিবেশী দেশে পণ্য রপ্তানি এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিষয়টি বিবেচনা করে এ পার্কটি স্থাপন করা হয়েছে।হবিগঞ্জের ওলিপুর ছিল অত্যন্ত অবহেলিত এলাকা। এখানকার মাটি ছিল অনুর্বর, কৃষিকাজ করা সম্ভব ছিল না। ফলে এখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ ছিল খুবই কম। এটিকে বিবেচনায় নিয়ে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দেশের ব্যবসায়ীদের এ অঞ্চলে শিল্প কারখানা গড়ে তোলার আহ্বান জানান এবং শিল্পকারখানায় গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা করেন।
প্রাণ-আরএফএল এ অঞ্চলে সর্বপ্রথম কারখানা স্থাপন করে। এরপর তাদের অনুসরণ করে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান এখানে কারখানা স্থাপন করেছে।
এরই মধ্যে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ ছাড়াও স্কয়ার, যমুনা, আরএকে, স্টার সিরামিকসহ অনেক প্রতিষ্ঠান শিল্পকারখানা গড়ে তুলেছে। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে এ এলাকার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের আন্তরিক সহযোগিতার ফলে এক সময়ের অবহেলিত এলাকাটি একটি শিল্পাঞ্চলে পরিণত হয়েছে।
এ শিল্প পার্কে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পণ্য ছাড়াও কন্ট্রাক্ট ম্যানুফ্যাকচারিং পদ্ধতিতে উৎপাদিত হয় বিশ্বের খ্যাতনামা ব্র্যান্ডের পণ্য। এর মধ্যে রয়েছে কোকাকোলা ও জিলেট।
এ শিল্প পার্কে বর্তমানে ৪৭টি প্রোডাকশন লাইন রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন ধরনের ফ্রুট ড্রিংক, বেভারেজ, ক্যান্ডি, লিকুইড গ্লুকোজ, বিস্কুট, কনফেকশনারি, ট্রান্সফর্মার, ইলেকট্রিক ক্যাবলস, ফ্যান, মেলামাইন, বাইসাইকেল, এমএস ও জিআই পাইপ, রিসাইক্লিং পণ্য, টয়লেট্রিজসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী উৎপাদিত হচ্ছে। নানা ধরনের পণ্য উৎপাদনের ফলে এ স্থাপনাটি দেশের সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ শিল্প পার্কে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া আয়তনের দিক থেকে এটি দেশের বেসরকারি পর্যায়ে অন্যতম বড় শিল্প পার্ক।
এ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে বর্তমানে ৫টি ইটিপি রয়েছে যার মাধ্যমে প্রায় দৈনিক ১ কোটি ৬ লাখ লিটার তরল বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব, যেখানে প্রতিদিন গড়ে ৬০-৬৫ লাখ লিটার তরল বর্জ্য উৎপাদিত হয়। লিকুইড বর্জ্য ইটিপি এর মাধ্যমে পরিশোধন করা হয় আর সলিড বর্জ্য দিয়ে জৈব সার তৈরি করা হয়। এছাড়াও রয়েছে একটি জিরো ডিসচার্জ প্ল্যান্ট, যার মাধ্যমে পানি পরিশোধন করে বারবার ব্যবহার করা হয়।
তাছাড়া এ এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সান হেলথ কেয়ার হাসপাতাল।