মেট্রো নিউজ : দেশের চার লক্ষাধিক শিশু গৃহকর্মের মত মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রয়েছে। গৃহকর্মে নিয়োজিত এসব শিশুরা দৈনিক গড়ে ১৫ ঘন্টা কাজ করে থাকে, যার প্রতিটি কাজই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তবে কাজের ঝুঁকির বিচারে তাদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা খুবই সীমিত। একই সঙ্গে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা গৃহকর্মের নিয়োজিত থাকা শিশুদের জীবনের ঝুঁকিও বাড়িয়ে তুলেছে।
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনের আয়োজিত ‘সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু, শিশু গৃহকর্মী ও বস্তিতে বসবাসকারী শিশুদের সুরা ও অধিকার’ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় সোমবার (৯ নভেম্বর) বিকালে এই তথ্য তুলে ধরা হয়। বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি) মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
এএসডি’র নির্বাহী পরিচালক জামিল এইচ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম। এছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার, বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর পরিচালক মোশাররফ হোসেন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
শিশু অধিকার বিশেষজ্ঞ শরফুদ্দিন খানের পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের পরিচালক আব্দুস শহীদ মাহমুদ, জাতীয় কন্যাশিশু এডভোকেসী ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের ন্যাশনাল এডভোকেসী কো-অর্ডিনেটর সাবিরা নূপুর, এএসডির প্রজেক্ট ম্যানেজার ইউ.কে.এম ফারহানা সুলতানা প্রমুখ।
সভায় ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন এএসডি’র উপ-নির্বাহী পরিচালক মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, ‘গৃহকর্ম এখনও পেশা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ না করায় শ্রম আইন দ্বারা এই খাতটি সুরতি নয়। সরকার শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ৩৮টি কাজের তালিকায় গৃহকর্মের মতো একটি মারাত্মক ও বিপজ্জনক কাজ স্থান পায়নি। একই সঙ্গে ২০১০ সালে খসড়া গৃহকর্মী সুরা ও কল্যাণ নীতিমালা গৃহীত হলেও তা এখনও চুড়ান্ত করা হয়নি। ফলে গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুরা সম্পূর্ণ অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে থেকে শোষণ ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।’
মোজাম্মেল হক বলেন, ‘শিশু গৃহকর্মী পাশাপাশি দেশের প্রায় ১২ লাখ পথশিশুও ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা লাভ থেকে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত। রাস্তা, পার্ক, বাস-ট্রেন স্টেশন, লঞ্চ ঘাটের খোলা জায়গায় এসব শিশুরা রাত্রি যাপন করে। ফলে প্রতিনিয়ত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে শিশুরা। আর মেয়ে পথশিশুরা প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানীর শিকার হচ্ছে। ফলে তাদের অনেকেই একসময় ভাসমান যৌনকর্মীতে পরিণত হচ্ছে।’
তিনি জানান, ব্রড ফর দ্য ওয়ার্ল্ড -জার্মানীর আর্থিক সহযোগিতায় এএসডি ২০১৪ সাল থেকে পথশিশু, বস্তিবাসী শিশু ও গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের সুরা ও নিরাপদ আশ্রয় প্রদানের লক্ষে ‘ডেভেলপমেন্ট অব চিলড্রেন এ্যাট হাই রিস্ক’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে। এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প এলাকায় ৮টি প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩টি ড্রপইন সেন্টার ও রাত্রিকালীন আবাসন ব্যবস্থা (আনন্দ নিবাস) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।’
এএসডির নির্বাহী পরিচালক আরও জানান, ‘গত বছর থেকে এ পর্যন্ত ৯৬০ জন শিশুকে উপানুষ্ঠানিক (প্রাক-প্রাথমিক) শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৯০৩ জনকে মূলধারার প্রাথমিক শিক্ষায় সম্পৃক্ত করা সম্ভব হয়েছে। একই সঙ্গে ৩০৭ জন পথশিশুকে ড্রপ ইন সেন্টার ভিত্তিক সেবা, ১৮ জন শিশুকে পরিবার ও সমাজে পুনঃএকীকরণ করা, ১৩৪ জন শিশু গৃহকর্মীকে সাধারণ শিা ও ২০ জনকে কারিগরি শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে ৯০ জন পথশিশুকে (৩০জন ছেলে ও ৬০জন মেয়ে) ড্রপ ইন সেন্টারে আবাসিক ও লেখাপড়ার সুযোগ প্রদান করা হচ্ছে।’
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম বলেন, ‘সরকার প্রাথমিক শিক্ষায় প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে। সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে। শিশুদের জন্য মিড-ডে মিলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই শিশুরা যে টাকার অভাবে পড়ালেখা করতে পারে না। এটা একদম একটা ভ্রান্ত ধারণা।’
তিনি বলেন ‘প্রধানমন্ত্রী একটা শিশুও যেন রাস্তায় না থাকে, সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি জানার পরপরই আমরা বৈঠক করেছি। এ নিয়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের দুইটি ওয়ার্ড নিয়ে প্রাথমিকভাবে কাজ করতে যাচ্ছি। এখানে শিশুরাও এগিয়ে আসতে হবে। সরকারও শিশুদের দিকে এগিয়ে আসছে। আমরা পথশিশুদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’
তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব শ্যাম সুন্দর শিকদার বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ সবার জন্য। সবাইকে নিয়ে একত্রে কাজ করলে আমরা কাঙ্খিত লক্ষে পৌঁছতে পারবো। তবে আজকের ধারণাপত্রে শিশুদের ডিজিটাল সেবা দেয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট কোন প্রস্তাব দেয়া হয়নি। যদি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেয়া হয়, তবে আমরা এএসডির মাধ্যমে শিশুদের সেবা দেয়া চেষ্টা করবো।’