রফিক সরকার: ভাওয়াল অঞ্চলের লাল মাটিতেই এবার উৎপাদিত হচ্ছে রাজশাহী অঞ্চলের আম। রোপণের মাত্র ৩ বছরের ব্যবধানে আম চাষে বাজিমাত করে দেখিয়েছেন গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার কামারগাঁও গ্রামের মো. আব্দুল হামিদ মাঝি।
২০১৫ সালে ১১০টি আম গাছ রোপণ করে তিনি বাগান শুরু করেন। শুরুর বছরে কয়েকটি গাছে আম আসলেও ২০১৮ সাল থেকেই পরিপূর্ণভাবে বাগানের সবগুলো গাছে আম আসা শুরু হয়। বাগানে বর্তমানে গাছের সংখ্যা ৯০টি। বাগানটি রাস্তার পাশে হওয়াই গাছে ঝুলন্ত আম দেখে চলাচলকারী পথচারীদের নজর কাড়ে।
হামিদ মাঝি তার বাগানে চাষ করেছেন ৬ প্রজাতির আম। বাড়ির দক্ষিণ পাশের ৩ বিঘা জায়গায় তিনি এ আমের বাগান গড়ে তুলেছেন। সেখানে সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে এসব আমের চাষাবাদ করছেন তিনি।
হামিদ মাঝির আমবাগান ঘুরে দেখা যায়, গাছে ঝুলছে নানা রঙের বিভিন্ন প্রকারের আম। কাঁচাপাকা আমে ভরে গেছে বাগান। পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলছে হালকা খয়েরি, হালকা কাঁচা হলুদ ও সবুজ রঙের আম।
হামিদ মাঝি বলেন, তার বাগানে বারি-৪, আম্রপালি, গুটি, গোপালভোগ, ল্যাংড়া ও হিমসাগর আম আছে। আমের বাগান শুরুর সময়টাতে তার খরচ হয়েছিলো প্রায় ৩০ হাজার টাকা। এসব জাতের আমের চারা রাজশাহী অঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে দিয়েছেন তার ছোট ভাই ডা. মো. বেলায়েত হোসেন মাঝি।
গত বছর তার বাগানে ৩০ মণ আম উৎপাদন হয়েছিলো। এ বছর প্রায় ৫০ মণ আম উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন।
এলাকায় এখন তার বাড়িটি ‘আমবাগান বাড়ি’ হিসেবে পরিচিত হয়ে গেছে। তার দাবি, এ বাগান থেকে ফরমালিন মুক্ত, নিরাপদ ও তাজা আম পাওয়া যায়। এছাড়াও এ বাগানে উৎপাদিত আমগুলো খেতেও অনেক সুস্বাদু।
তিনি আরো জানান, বছর শেষে তিনি লাভের মুখ দেখছেন। যে কেউ ইচ্ছে করলে সরাসরি বাগান থেকে এসে পছন্দমতো আম সংগ্রহ করতে পারবে। এমনকি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমেও আম পেতে পারেন। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যাপারিরা এসে আম নিয়ে যাচ্ছে বাগান থেকে।
কাপাসিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুমন কুমার বসাক বলেন, এই উপজেলায় জাতীয় ফল কাঁঠাল এবং দেশি আমের বেশ উৎপাদন হয়। তবে হামিদ মাঝি ব্যক্তিগত উদ্যোগে রাজশাহীর ছয়টি জাতের আম চাষ শুরু করেন। আমি নিজে এবং মাঠে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা তার বাগান পরিদর্শন করেছি। বর্তমানে সেই বাগানে ভালো ফলন হয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তা আরো বলেন, এ অঞ্চলের মাটি ওই ধরনের আম চাষে রোগ বালাই একটি বড় বাঁধা। তবে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যা করলে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। আম চাষে প্রণোদনার ব্যবস্থা না থাকলেও ব্যক্তিগতভাবে গড়ে ওঠা সকল চাষিদের কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ, মাঠ দিবস ও উঠান বৈঠকের মাধ্যমে পরামর্শ দেওয়া হয়। যার মাধ্যমে তারা সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠছে।