স্কুলে যেতে মরিয়া ক্যানসার আক্রান্ত সামিয়া

কী হয়েছে সে সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই সামিয়ার। জ্বর জ্বর লাগে, মাথায় মাঝে মাঝে প্রচণ্ড ব্যাথা হয়। ক’দিন ধরে বাঁ চোখটিও বুঁজে আসছে। জোর করেও তাকিয়ে থাকতে পারে না। দেখতেও পারছে না ঠিকমতো। ডাক্তার দেখানো হয়েছে। চিকিৎসার জন্য ঢাকায়ও এসেছে কয়েকবার। তবু যেন কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। এদিকে স্কুলে যেতে না পেরে হাঁসফাঁস ধরে গেছে। কতদিন ধরে স্কুলে যেতে পারে না! বাবা-মাকে শুধুই প্রশ্ন করে, ‘কবে স্কুলে যাব? আমার যে আর ভালো লাগে না!’ 

ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ১১ বছরের সামিয়া তাহসিনের এই আকুতি প্রায় প্রতিদিনই শুনতে হয় স্বজনদের। দুঃখে চোখ ফেটে জল এলেও মুখ বুজে সব সইতে হয় তাদের। বাচ্চাটার সামনে কোনোভাবেই প্রকাশ করতে পারে না যে, সে মরণব্যাধী ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছে। কীভাবেই বা বলবে অতটুকু ফুটফুটে বাচ্চাকে যে, চিকিৎসা না হলে বেশি দিন আর পৃথিবীর আলো দেখতে পাবে না সে! আর কোনো দিনই স্কুলে যেতে পারবে না। পরীক্ষা দিতে বা ক্লাস করতে পারবে না। খুনসুটিতে মেতে উঠতে পারবে না বান্ধবীদের সাথে। তার হাসি মুখটি আর কখনই মুক্তো ঝরাবে না, সুখে অন্তর ভরিয়ে দেবে না বাবা-মায়ের! 

প্রায় ৪ মাস আগে শারীরিক সমস্যা দেয় সামিয়ার। চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হলে তার ব্রেইন টিউমার ধরা পড়ে। চলতি বছরের জুন মাসের ২০ তারিখে ধানমণ্ডির গ্রিন লাইফ হাসপাতালে টিউমার অপসারণ করা হয়। বায়োপসি রিপোর্টে সামিয়ার ক্যানসার ধরা পড়ে।

সামিয়ার বাবা মো. শুজাউদ্দীন সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার খেশরা ইউনিয়নের মুড়াগাছা গ্রামের এক অতি সাধারণ দরিদ্র কৃষক। তার মা জোহরা খাতুন একজন গৃহিণী। চার ভাইবোনের মধ্যে সামিয়া তৃতীয়। সে স্থানীয় এইচএমএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। অত্যন্ত মেধাবী এই শিক্ষার্থী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটি শ্রেণিতে খুবই ভাল রেজাল্ট করে এসেছে। 

বোনের মধ্যে সবার বড়টি এইএসসি পরীক্ষার্থী। তার পরেরজন নবম শ্রেণিতে পড়ছে। সবার ছোট ভাই, সে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। মেয়েটির ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার খবরে সামিয়ার পুরো পরিবার এখন দিশেহারা। 

সামিয়া ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) প্রফেসর ডা. মো. ইউছুফ আলীর অধীনে ল্যাবএইড ক্যানসার হাসপাতাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টারে চিকিৎসা নিচ্ছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, ২০২৫ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত ১৭টি কেমো ও ২৮টি রেডিও থেরাপি দিতে পারলে শিশুটি সুস্থ হয়ে যাবে। আর সেজন্য প্রয়োজন অন্তত ২০ লক্ষ টাকা। 

ইতোমধ্যে সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে সন্তানের চিকিৎসার জন্য প্রায় ছয় লক্ষ টাকা ব্যয় করেছেন সামিয়ার বাবা। চিকিৎসার বাকি খরচ জোগানো তার একার পক্ষে আর সম্ভব নয়। একদিকে সামিয়ার চিকিৎসা, অন্যদিকে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া অন্যান্য সন্তানদের লেখাপড়া আর সংসার খরচ। উভয় দিকেই চরম নাজুক অবস্থা শুজাউদ্দীনের। একদিকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে প্রাণপ্রিয় সন্তান, অপর দিকে বিপুল পরিমাণ টাকার যোগাড়ের অনিশ্চয়তা। কোন দিকে যাবেন এই অসহায় পিতা?

এখন প্রাণপ্রিয় সন্তানকে বাঁচাতে সমাজের হৃদয়বান মানুষের দিকে তাকিয়ে আছেন সামিয়ার বাবা ও পরিবার। ২০ লক্ষ টাকা সামিয়াদের মতো পরিবারে অকল্পনীয় হলেও সমাজের সবাই মিলে এগিয়ে এলে এই পরিমাণ অর্থ জোগাড় হওয়া হয়তো অতটা কঠিন হবে না। প্রয়োজন শুধুই সামান্য একটু ভালোবাসা আর অন্তর থেকে সদিচ্ছা নিয়ে এগিয়ে আসা। আপনার খুব সামান্য অংশগ্রহণও হয়তো সামিয়ার বেঁচে থাকার রসদ হতে পারে। এক বিন্দু জলও যেমন তৃষ্ণার্ত চাতককে বাঁচিয়ে তুলতে পারে, তেমনি আপনার দেওয়া খুব সামান্য অর্থও হয়তো ফিরিয়ে দিতে পারে সামিয়ার মুখের হাসি। 

সামিয়াকে বাঁচাতে তার বাবা শুজাউদ্দীনের বিকাশ, নগদ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আপনার সহায়তা পৌঁছে দিতে পারেন। 

মো. শুজাউদ্দীন, মোবাইল, বিকাশ ও নগদ নম্বর- ০১৭৩৫-১৮৬৭৯০, সঞ্চয়ী ব্যাংক হিসাব নম্বর- ০১০০৫৪০০৬, সোনালী ব্যাংক, মাগুরা বাজার শাখা, তালা, সাতক্ষীরা।

বিন্দু বিন্দু জলে যদি অতল সিন্ধু হতে পারে, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণায় যদি আদিগন্ত মরু গড়ে উঠতে পারে, তাহলে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সামিয়াকে বাঁচানোও সম্ভব হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts