ছড়াকার ও কবি আব্দুল হাই মোল্যা


আতাতুর্ক কামাল পাশা


সাহিত্যকে যাঁরা হৃদয়ে লালন করেন, যাঁরা মন-প্রাণ নিবেদিত থাকেন সাহিত্যের শুদ্ধতায়, যাঁরা ডামাডোল পিটিয়ে নিজের সাহিত্যকর্ম প্রকাশ না করে নিরবে-নিভৃতে সাহিত্যসাধনা চালিয়ে যেতে থাকেন আজীবন, তাদের মাঝে মোঃ আব্দুল হাই মোল্যা একজন।

অনেকটা আমাদের প্রখ্যাত সাহিত্যিক কায়কোবাদের মতো যিনি জীবনে সরকারি চাকরির পাশাপাশি নিরবে-নিভৃতে সাহিত্যচর্চা করে গেছেন, এমনকি মহাশ্মশান-এর মতো মহাকাব্যও লিখে গেছেন, তারই মতো বর্তমান যুগে মোঃ আব্দুল হাই মোল্যা নিজের মনের মাধুরীতে এবং প্রকৃতির কাছ থেকে শিক্ষালাভ ও অনুপ্রেরণা নিয়ে লিখে যাচ্ছেন।

তার জন্ম ১৯৬৩ সালে ২৮ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার মকসুদপুর উপজেলার বেজড়া গ্রামে। ১৯৮৪ সালে তিনি হিসাববিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তর করে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করেন। কিন্তু তার সাহিত্যচর্চা শৈশব থেকেই চলতে থাকে। তিনি ছাত্র হিসেবে বেশ মেধাবী ছিলেন বলে ছোটবেলা থেকেই শিক্ষকদের সুনজরে ছিলেন। সম্প্রতি তার প্রথম কাব্য হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু প্রকাশ হয়। তার অনেক আগে থেকেই তিনি দেশের মাসিক, সাপ্তাহিক ও অন্যান্য জাতীয় দৈনিকগুলোতে লিখে আসছেন। আমরা আব্দুল হাই মোল্যার কবিতা ও ছড়ার মধ্যে আমাদের বাঙালি জাতীয় চেতনার পাশাপাশি দেশাত্মবোধের অনুসন্ধান করব।

একটি দেশ ও জাতিকে ভালবাসতে গেলে সে জাতির নিজস্ব ভূমিকে ভালবাসতে শিখতে হয়। নিজের ভেতর দেশপ্রেম জাগ্রত করতে হয়, দেশ, দেশের মানুষকে ভালবাসতে শিখতে হয়। এ বোধটি আব্দুল হাই মোল্যার ভেতর অনেক গভীরে প্রোথিত আছে বলেই তিনি লিখতে পারেন, “দেশ আর নেই আজ দুর্যোগ দুর্ভিক্ষের জলা/ নেই দরিদ্র ক্ষুধার জ্বালা দেশ আজ স্বনির্ভর সুফলা।/ শিল্প, বিজ্ঞান, শিক্ষা নিয়ে আজ এশিয়ার অগ্রচলা/ বিশ্বের বুকে আজ দাঁড়িয়ে সুখ সমৃদ্ধির সোনার বাংলা।” (পৃ-১৩)।

এভাবে তিনি জন্মভূমির অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রশস্তি করতে পারেন। দেশ এখন সুজলা-সুফলা এবং আত্মনির্ভরশীল। এমন মেসেজ তিনি দিতে পারেন। তার জন্মভূমি এখন এশিয়া এমনকি বিশ্বের বুকে বুক টান করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে এমন সংবাদ তিনি পাঠ করেন তার কবিতায়। দেশপ্রেমের প্রিয় পংক্তিমালার সতত বিচরণ দেখা যায় তার কবিতায়। “হে সোহরাওয়ার্দী, শের-ই-বাংলার শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার।/ হে মহান কবি স্বাধিকার/ হে ইতিহাসের রাখাল রাজা/ হে বিশ্ব মানবতার মহান তাজ।/ হে বাঙালির চির অনুপ্রেরণা/ হে বাঙালির শ্রেষ্ঠ স্বপ্নবাজ।” (পৃ-২০)।

বিশ্ব মানবতার চরণও আমাদের নতুনভাবে দেশের মহত্ব দেখায়। রোহিঙ্গাদের এ ভূমে ঠাঁই দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশ আজ যেমনভাবে সম্মানের স্থানে আরোহণ করেছে, ঠিক তেমনিভাবে বিশ্বের আজকের হতভাগ্য ফিলিস্তিন জাতির ভাগ্য বিপর্যয়ে কবি তেমনভাবে কেঁদে উঠেছেন এবং প্রতিবাদ করেছেন।

আব্দুল হাই মোল্যা তার কবিতায় অত্যন্ত ভেতর জনপদের নিত্যদিনের সামাজিক জীবন যেমনভাবে তুলে ধরেছেন ঠিক তেমনভাবে লোকজ জনপদে ব্যবহৃত শব্দাবলী সুন্দর দৃঢ়তার সাথে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। প্রায় সব কবিতায় তিনি অন্ত্যমিল ধরে রেখেছেন। একজন কবি যতটা মনযোগ নিয়ে লিখতে পারেন, যতটা যত্নের সাথে কাব্যকলা করতে পারেন, আব্দুল হাই মোল্যা সে একাগ্রতা নিয়ে আমাদের এ কাব্যগ্রন্থটি উপহার দিতে পেরেছেন। আগামীতে তিনি আরো নতুন নতুন কবিতা আমাদের উপহার দেবেন, এ কামনা করি।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts