প্রতিদিনই নিরুদ্দেশ হচ্ছে মনিপুরের নারীরা

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক একদিকে প্রতিবাদী ইরম শর্মিলা চানুর দিকে নজর বিশ্ব সংবাদ মাধ্যমের৷ যিনি মনিপুরে আফস্পা (সেনা বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন)-র বিরুদ্ধে ১৬ বছরের অনশন ভেঙেছেন৷ সদ্য রাজনীতির মূল ধারায় যাবেন বলেও ঘোষণা করেছেন৷

অন্যদিকে সেই মনিপুরেই অনামী চানুর দল, যারা সবার অলক্ষ্যে প্রতিদিনই নিরুদ্দেশ হয়ে যাচ্ছে৷ এই তথ্যে বিব্রত মুখ্যমন্ত্রী ওকরাম ইবোবি সিং৷ খোদ তাঁর সরকারের পুলিশ বিভাগের রিপোর্ট- নারী পাচারকারীদের অন্যতম আখড়া হয়ে উঠেছে মনিপুর৷খবর কলকাতা অনলাইনের।

দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের মনিপুরের একদিকে মায়ানমার৷ রাজ্যের অপর তিন দিকে নাগাল্যান্ড, মিজোরাম ও অসম৷  দুর্গম মায়ানমারের সীমান্ত পার করে মনিপুরী কিশোরী-যুবতীদের পাচার করা হচ্ছে মায়ানমারে৷ সেখান থেকে থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের গণিকালয়ে পৌঁছে যাচ্ছে মনিপুরি মহিলারা৷ ভৌগলিক কারণে চেহারা সামঞ্জস্য থাকায় উত্তর-পূর্ব ভারতের মহিলাদের চাহিদা রয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে৷ সস্তায় মিলছে মনিপুরী মহিলাদের৷ দামও কম-মাত্র ৫০০০ টাকা!

যে পথে হয় পাচার:
রাজ্যের লাগোয়া মিজোরাম থেকে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম হয়ে মায়ানমারের কাচিন ও আরাকান (রাখাইন) প্রদেশ পর্যন্ত এলাকায় চলে মানুষ পাচারের বিশাল ব্যবসা৷ চট্টগ্রাম, টেকনাফ, কক্সবাজার ছাড়িয়ে বঙ্গোপসাগরের পথ ধরে আন্দামান সাগর হয়ে ভিয়েতনামের উপকূল ধরে মানব পাচারের পথটি কুখ্যাত৷ অন্যদিকে স্থলপথে মিজোরাম হয়ে পার্বত্য বাংলাদেশ পেরিয়ে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশ৷ সেখান থেকে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার পার্বত্য সীমান্ত পার হয়ে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পাচার হচ্ছে মনিপুরী মহিলারা৷ উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলি থেকেও এভাবেই নারী পাচার হয়৷

মনিপুর পুলিশের দাবি, রাজ্যের থৌবাল জেলা আন্তর্জাতিক নারী পাচারের ঘাঁটি৷  বার বার এখান অভিযান চালানো হয়৷  উদ্ধার করা হয় মহিলাদের৷ কোনভাবেই বাগে আনা যাচ্ছেনা পাচারকারীদের৷

গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে,  মনিপুর ও তার লাগোয়া রাজ্যে সক্রিয় জঙ্গি সংগঠনগুলির মদত পায় পাচারকারীরা৷ মায়ানমার থেকে পরিচালিত হওয়া এই নারী পাচারকারী চক্র মণিপুরে ক্রমশ শক্তিশালী আকার নিয়েছে৷ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে থৌবাল জেলায় বিশেষ চেক পয়েন্ট করা হয়েছে৷ মায়ানমারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক দুর্গম সীমান্ত থাকায় পাচারকারীরা গা ঢাকা দিতে পারে অনায়সেই৷ শুধু থৌবাল জেলা নয়, রাজ্যের মোরে, চান্দেল, চুড়াচাঁদপুর জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে মায়ানমার-ভারতের নারী পাচারাকারীরা৷

গোয়েন্দাদের নজর রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মোরে সীমান্ত শহরে৷ এর লাগোয়া মায়ানমারের টামু শহর৷ দুই দেশের বিশেষ নিয়ম অনুসারে বিশেষ পারমিট নিয়ে মোরে ও টামুর মধ্যে যাওয়া আসা করা যায়৷ সীমান্তের কারণে পৃথক দেশ হলেও মোরে ও টামু শহরের ভাষা ও রীতি একই৷ সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে পাচারকারীরা৷ তাদের হয়ে ব্যবসা সামাল দেয় স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ৷ ফলে দুষ্কৃতীদের বাগে আনা খুবই কঠিন৷

এভাবেই ভয়ঙ্কর নারী পাচারকারীদের ব্যবসা ক্রমশ ফুলে ফেঁপে উঠছে মনিপুরে৷ ক্রমশ তার জাল ছড়াচ্ছে নাগাল্যান্ড, মিজোরামসহ বিভিন্ন রাজ্যে৷ আর সবার অলক্ষ্যে চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছেন অনামী চানু-রা৷

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts