ট্যাঙ্কার ডুবির বছরপূর্ণ ।। ঝুঁকিতেই সুন্দরবন

বিডি মেট্রোনিউজ, বাগেরহাট : সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে ফার্নেস তেলবাহী ট্যাঙ্কার ডুবির এক বছর পূর্ণ হলো আজ। অথচ সেই ঝুঁকিতেই রয়ে গেছে সুন্দরবনের পরিবেশ। গত বছরের ৯ ডিসেম্বর এই নদীতে ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ নামে একটি তেল ট্যাঙ্কার ডুবির ঘটনা দেশজুড়ে আলোচনার বিষয়ে পরিনত হয়।

নদীতে ছড়িয়ে পড়া তেল সুন্দরবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। সঙ্গতকারণে দাবি ওঠে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌ যান চলাচল বন্ধের। কিন্তু এ ঘটনার এক বছর পূর্ণ হলেও বন্ধ হয়নি নৌ যান চলাচল। মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলে খনন কাজ শেষ করতে না পারায় বনের ভেতর দিয়ে এখনো চলাচল করছে পণ্যবাহী ভারী নৌযান। ফলে একের পর এক অঘটনে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা নিয়ে শঙ্কিত বিশেষজ্ঞরা।

আশার কথা এই যে, শ্যালায় তেল ট্যাঙ্কার ডুবির এক বছর পর সোমবার রাত থেকে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌ চলাচল বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ।

দৃশ্যত, গত বছরের ডিসেম্বরে শ্যালায় সাউদার্ন স্টার-৭ ডুবির পরও থেমে নেই সুন্দরবন সংশ্লিষ্ট এলাকায় নৌ দুর্ঘটনা। জাহাজ চলাচল বন্ধ না হওয়ায় একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। ফলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যর জন্য হুমকি বেড়েছে আরও কয়েকগুণ।

চলতি বছরের ৫ মে সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের মরা ভোলা নদীর চরে তলা ফেটে ডুবে যায় সারবাহী জাহাজ ‘এমভি জাবালে নূর’। এর পর ২৭ অক্টোবর চাঁদপাই রেঞ্চের পশুর নদীর জয়মনি সংলগ্ন বিউটি মার্কেট এলাকায় ডুবে যায় কয়লাবাহী একটি কার্গো জাহাজ। ঘটনার পর প্রায় দেড় মাস পার হলে চললেও এখনো উদ্ধার হয়নি ‘এমভি জিয়ার রাজ’ নামের কার্গো জাহাজটি। সর্বশেষ গত পহেলা ডিসেম্বরেও সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের মরা ভোলা নদীর চরে আটকা পড়ে সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল ৭৪০ মেট্রিকটন ফ্লাইঅ্যাশবাহী এমভি শোভন-১ নামের একটি কার্গো। যা উদ্বেগই বাড়িয়ে চলেছে শুধু।

এ ব্যাপারে ‘সেভ দ্য সুন্দরবন’ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবন সুরক্ষার পাশাপাশি মংলা সমুদ্র বন্দর সচল রাখতে মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল খননের বিকল্প নেই। এক বছরেও চ্যানেলের খনন কাজ শেষ না হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে বনের ভেতর দিয়ে নৌযান চলাচল করছে। ফলে আবারো বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। তাই যে কোন মূল্যে বনের ভেতর নৌযান চলাচল বন্ধ ও বিকল্প নৌপথটি চালুর দাবি জানান তিনি।

বিআইডাব্লিউটিএ-র উপপরিচলক (ড্রেজিং) এ এইচ এম ফরহাদ-উজ্জামান বলেন, মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল খননের প্রায় ৯৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু খননকৃত স্থান গুলোতে পূণরায় পলি জমে ভরাট হচ্ছে। তাই তারা অব্যাহত ভাবে ড্রেজিং চালু রেখেছেন। বর্তমানে ১০-১২ ফিট ড্রাফটের নৌযান চলাচল করছে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘এখন থেকে রাতে বনের ভেতর দিয়ে সকল প্রকার নৌযান চলাচল বন্ধের নির্দেশ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই বিষয়ে নির্দেশনা, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তাদের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।’

খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, ‘সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌযান চলাচলে বনজ সম্পদ ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণে বাঁধা সৃষ্টি করে। নৌ দূর্ঘটনার পর শুধু আমরাই নয় দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরা বনের ভেতর দিয়ে জাহাজ চলাচল বন্ধের দাবি জানিয়েছিল। জাতীয় সার্থে সুন্দরবন রক্ষার সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts