সংবাদ সম্মেলনে রেইনট্রি মালিকের আবোল-তাবোল

মঙ্গলবার হোটেলের লবিতে এই সংবাদ সম্মেলনে ইংরেজিতে লিখিত বক্তব্য দেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এইচ এম আদনান হারুন, যিনি ঝালকাঠি-১ আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ বজলুল হক হারুনের ছেলে।এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে নিরুত্তর থাকতে দেখা যায় তাকে।

বক্তব্যে তিনি ধর্ষণের ঘটনা তদন্তে সহায়তার প্রতিশ্রুতি ছাড়াও জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলনে হোটেলের মহাব্যবস্থাপক ফ্রাঙ্ক ফরগেটও ইংরেজিতে বক্তব্য দেওয়া শুরু করলে সাংবাদিকরা আপত্তি তোলেন। পরে হোটেলের অর্থায়নকারী হুমায়রা গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক রেজা গোলাম মোস্তফা বাংলায় লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান।

বনানীতে আবাসিক এলাকায় কে ব্লকের ২৭ নম্বর সড়কের ৪৯ নম্বর বাড়িতে চার তারকা ওই হোটেলটি পরিচালনা করেন আদনান হারুনের ভাই মাহির হারুন।

অভিযোগ রয়েছে, মাহিরের বন্ধু পরিচয়েই গত ২৮ মার্চ ওই হোটেলে উঠেছিলেন ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সাফাত আহমেদ। তার জন্মদিনের কথা বলেই দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই তরুণীকে। ধর্ষণের শিকার দুই তরুণীর একজনও ওই রাতে মাহির নামে একজনের দেখা পাওয়ার কথা বলেছিলেন।

তাদের জোর করে রুমে নেওয়ার আগে মাহিরকে দেখার কথা জানিয়ে ওই তরুণী বলেন, “মাহির নামের একজন নিজেকে হোটেলটির মালিক পরিচয় দিয়ে সেদিন সাফাতের জন্মদিনের জন্য একটি কেক উপহার নিয়ে এসেছিলেন।”

এই বিষয়ে রেজা গোলাম মোস্তফা বলেন, “প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, গ্রাহক আকর্ষণের কথা মাথায় রেখে শুরু থেকেই আগত অতিথিদের জন্ম ও বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে কমপ্লিমেন্টারি কেক দিয়ে থাকে রেইনট্রি।তারই ধারাবাহিকতায় ঘটনার দিন হোটেল কর্তৃপক্ষ আসামি সাফাতের জন্মদিনের কেক প্রদান করেছে। এই কেকের সঙ্গে মাহির হারুনের ব্যক্তিগত সংশ্লেষ নেই।

আসামিদের হোটেলে চেক-ইন ও চেক-আউটের সব তথ্য যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং সেগুলো তদন্তকারী কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে বলে রেজা গোলাম মোস্তফার ভাষ্য।

ঘটনার দিনের সিসিটিভি ফুটেজ ডিলিট করা হয়েছে- গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন সংবাদের বিষয়েও একটি ব্যাখ্যা দাঁড় করান গোলাম মোস্তফা।

তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হোটেল ব্যবস্থাপনায় কোথাও ৩০ দিনের অধিক সময় সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণ করা হয় না। এই হোটেলেও ৩০ দিন পর্যন্ত সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণ করা হয়। ৩০ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওভাররাইট হয়ে পুরাতন ডাটা মুছে গিয়ে নতুন ডাটা সংরক্ষিত হয়।

“এ ঘটনা ঘটার ৩৮ দিন পর হোটেল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়, তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ ওভাররাইট হয়ে গেছে।”

১৪ মে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অভিযানে মদ উদ্ধার নিয়েও প্রশ্ন তোলেন গোলাম মোস্তফা।

এর আগে ১৩ মে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘প্রতিটি কক্ষে তল্লাশি চালিয়ে কোনো কিছুই’ উদ্ধার করতে পারেননি মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তাহলে কীভাবে ১৪ মে শুল্ক বিভাগের অভিযানে হোটেলের একটি কক্ষে ১০ বোতল মদ পাওয়া গেল- সেটা আমাদেরও প্রশ্ন আপনাদের বিবেকের কাছে।”

তাহলে শুল্ক গোয়েন্দারা আপনাদের ফাঁসানোর জন্য সঙ্গে করে মদ নিয়ে এসেছিলেন কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে আদনান হারুন বলেন, “এ বিষয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই।”

ঘটনার দিন রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত হোটেলের মহাব্যবস্থাপক ফ্রাঙ্ক ফরগেট হোটেলে অবস্থান করেছিলেন জানিয়ে গোলাম মোস্তফা বলেন, “ঘটনার দিন হোটেল কার্যক্রমে তিনি কোনো অস্বাভাবিকতা দেখেননি বলে মন্তব্য করেননি- এটি শুধুই হোটেল অপারেশন অর্থে বলেছিলেন। এমন কি ভিকটিমরা হোটেল কর্তৃপক্ষকে কোনো অভিযোগও করেনি।”

হোটেলের ছাদে জন্মদিনের অনুষ্ঠান কতক্ষণ চলেছিল- এমন প্রশ্নে ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদনান হারুন বলেন, “বিষয়টি তদন্তাধীন। আমি কিছু বলতে পারব না।”

একইভাবে ‘তদন্তাধীন বিষয় বলে’ সাংবাদিকদের আরও প্রশ্ন এড়িয়ে যান কর্মকর্তারা; এক পর্যায়ে কিছু না বলেই সংবাদ সম্মেলন থেকে চলে যান তারা।

ধর্ষণ মামলার চার আসামি আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত, তার বন্ধু সাদমান সাকিফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও দেহরক্ষী রহমত আলী গ্রেপ্তারের পরে রিমান্ডে রয়েছেন। মামলার আরেক আসামি নাঈম আশরাফ এখনও পলাতক।

গত ৬ মে দায়ের করা মামলার এজাহার অনুযায়ী, গত ২৮ মার্চ রেইনট্রি হোটেলে সাফাত ও নাঈম দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছিলেন। অন্য তিনজন ছিলেন সহায়তাকারী।

অভিযোগকারী তরুণীদের একজন জানিয়েছিলেন, পীড়াপীড়িতে বাধ্য হয়ে তারা রেইনট্রি হোটেলে সাফাতের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। তাদের নিতে গাড়ি নিয়ে এসেছিলেন সাফাতের গাড়িচালক ও দেহরক্ষী। ধর্ষণের সময় দেহরক্ষী রহমতকে দিয়ে ভিডিও ধারণ করা হয়েছিল বলেও দাবি করেন ওই তরুণী।

ধর্ষণের আলোচিত ঘটনার পর রেইনট্রি হোটেলে শুল্ক গোয়েন্দারা অভিযান চালিয়ে অবৈধ মদ উদ্ধারসহ নানা অনিয়ম পাওয়ার কথা জানায়। ভ্যাট ফাঁকি,শুল্ক ফাঁকি ও মুদ্রা পাচার- এই তিন অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতিও চলছে। রেইনট্রির মালিকদের তলবও করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts