বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ওয়ালটন ত্রিদেশীয় সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। ৮ উইকেটের বড় জয় পেয়েছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।
ডাবলিনের মালাহাইডে শুক্রবার মুস্তাফিজ-মাশরাফিদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে স্বাগতিকরা অলআউট হয়ে যায় ১৮১ রানে। জবাবে সৌম্য সরকারের অপরাজিত ৮৭ রানের সুবাদে বাংলাদেশ সেটি পেরিয়ে যায় ১৩৭ বল বাকি থাকতেই।
শুরুটাই বলে দিচ্ছিল, আজ ভালো কিছু অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য। প্রথম ওভারে রুবেলের ‘মেডেন’, দ্বিতীয় ওভারে মুস্তাফিজের উইকেট। কাটার মাস্টার শুরুর আধিপত্যটা ধরে রাখলেন পরেও। তার বোলিং তোপেই মূলত ওয়ালটন ত্রিদেশীয় সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের ইনিংস গুটিয়ে গেছে ১৮১ রানে। এখন ব্যাটসম্যানরা দেখেশুনে খেললেই জয়টা বাংলাদেশের জন্য স্রেফ সময়ের ব্যাপার মাত্র!
দুই দেশি ভাইয়ের ম্যাচ হয়ে গেল শেষ পর্যন্ত। বোলিংয়ে মোস্তাফিজুর রহমান। এরপর ব্যাটিংয়ে সৌম্য সরকার। সিরিজের চতুর্থ আর নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ পেল বড় জয়। আয়ারল্যান্ডের দেওয়া ১৮২ রানের লক্ষ্য পেরিয়ে গেল ৮ উইকেট আর ১৩৭ বল বাকি থাকতে। সিরিজে টানা দ্বিতীয় ফিফটি করা সৌম্য অপরাজিত ছিলেন ৮৭ রানে। এর আগে সাতক্ষীরার আরেক তরুণ মোস্তাফিজের ২৩ রানে ৪ উইকেটে ১৮১ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল স্বাগতিকেরা।
এত কম রান নিয়েও ম্যাচে টিকে থাকতে হলে বোলিংয়ে দুর্দান্ত শুরু এনে দিতে হতো আয়ারল্যান্ড বোলারদের। কিন্তু তামিম-সৌম্যর ৯৫ রানের উদ্বোধনী জুটি আইরিশদের সেই আশার সমাধি বানিয়ে দিল। তামিম সিরিজে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি থেকে মাত্র ৩ রান দূরে থাকতে ফিরে যান। ততক্ষণে ম্যাচ বাংলাদেশের বাকি ব্যাটসম্যানদের জন্য ছিল ব্যাটিং অনুশীলনের।
সবচেয়ে বড় সুযোগটা ছিল ০ ও ১ রান করে আগের দুই ম্য্যাচে আউট হওয়া সাব্বির রহমানের জন্য। সাব্বির দেখেশুনে শুরু করে শেষ পর্যন্ত নিজের ছন্দে ফিরে ৩৪ বলে ৩৫ করে আউট হয়েছেন অহেতুক শটেই। জয় থেকে বাংলাদেশ তখন মাত্র ১১ রান দূরে।
বাকিটা সময় নিরাপদে পার করে দিলেন সৌম্য ও মুশফিক। ৬৮ বলের ইনিংসটায় ১০টি চার ও ২ ছক্কা মেরেছেন সৌম্য।
ডাবলিনের মালাহাইডে বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড প্রথম ম্যাচটা বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছিল। একই মাঠের সবুজ উইকেটে আজ টস জিতে আয়ারল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে পাঠান মাশরাফি বিন মুর্তজা। বোলিংয়ের বাংলাদেশের শুরুটাও হয় দারুণ।
ইনিংসের প্রথম ওভারটি রুবেল হোসেন নেন মেডেন। পরের ওভারে তৃতীয় বলেই বাংলাদেশকে সফলতা এনে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। বাঁহাতি পেসারের অফ স্টাম্পের বলে খোঁচা মেরে শর্ট থার্ডম্যানে সাব্বির রহমানকে ক্যাচ দেন পল স্টার্লিং। শূন্য রানেই এক উইকেট হারায় আয়ারল্যান্ড।
অষ্টম ওভারে উইকেট পেতে পারতেন অধিনায়ক মাশরাফিও। কিন্তু শর্ট এক্সট্রা কভারে উইলিয়াম পোর্টারফিল্ডের সহজ ক্যাচ তালুবন্দি করতে পারেননি মোসাদ্দেক হোসেন। অবশ্য পরের ওভারেই বল হাতে পোর্টারফিল্ডকে নিজের ফিরতি ক্যাচ বানিয়ে ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করেন মোসাদ্দেক।
সাকিব আল হাসান তার দ্বিতীয় ওভারে অ্যান্ডু ব্যালবিরনিকে ফেরালে ৬১ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে আয়ারল্যান্ড। এরপর দলে ফেরা এড জয়েস ও নেইল ও’ব্রায়নের ৫৫ রানের জুটিটাই যা একটু বাংলাদেশের বোলারদের ভুগিয়েছে। এ জুটি ভাঙার পরই আবার পথ হারায় স্বাগতিকরা।
মুস্তাফিজের তোপে ৩ উইকেটে ১১৬ থেকে দ্রুতই আইরিশদের স্কোর দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ১৩৬, ২০ রানেই নেই ৪ উইকেট! নেইল ও’ব্রায়েনকে ফিরিয়ে ইনিংসের একমাত্র অর্ধশত রানের জুটিটা ভাঙেন মুস্তাফিজ। ইনিংস সর্বোচ্চ ৪৬ রান করা জয়েসকে তামিম ইকবালের ক্যাচ বানিয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেকে নিজের প্রথম ওভারেই উইকেট নেন সানজামুল ইসলাম।
এরপর মুস্তাফিজ তার পরপর দুই ওভারে ফিরিয়েছেন কেভিন ও‘ব্রায়েন আর গ্যারি উইলসনকে। দেড়শর আগেই অলআউট হওয়ার শঙ্কা পড়া আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহটা ১৮১ হয়েছে মূলত জর্জ ডকরেল ও ব্যারি ম্যাক্যার্থির ৩৫ রানের অষ্টম উইকেট জুটিতে।
ম্যাক্যার্থিকে এলবিডব্লিউ করে ইনিংসে নিজের দ্বিতীয় উইকেট নিয়েছেন সানজামুল। ৪৭তম ওভারে টানা দুই বলে ডকরেল ও পিটার চেজকে ফিরিয়ে স্বাগতিকদের ইনিংস গুটিয়ে দিয়েছেন মাশরাফি। দুজনই উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসবন্দি হয়েছেন। মুশফিকের ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে একহাতে চেজের নেওয়া ক্যাচটা ছিল দারুণ। মুস্তাফিজ ২৯ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
আয়ারল্যান্ড: ৪৬.৩ ওভারে ১৮১ (জয়েস ৪৬, নিয়াল ৩০, ডকরেল ২৫, পোর্টারফিল্ড ২২; মোস্তাফিজুর ৪/২৩, মাশরাফি ২/১৮, সানজামুল ২/২২, মোসাদ্দেক ১/২১, সাকিব ১/৩৮, মাহমুদউল্লাহ ০/১৩, রুবেল ০/৪১)।
বাংলাদেশ: ২৭.১ ওভারে ১৮২/২ (তামিম ৪৭, সৌম্য ৮৭*, সাব্বির ৪৭, মুশফিকুর ৩*; কেভিন ও’ ব্রায়ান ১/২১, ম্যাকার্থি ১/৩৪)।
ফল: বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী।