বিডিমেট্রোনিউজ ॥ আমাদের বহু সমালোচনা হয়। দেশে-বিদেশে আমাদের বিরুদ্ধে অনেক কথা লেখা হয়। কিন্তু একথা লেখা হয় না যে ছিয়ানব্বই (১৯৯৬) সালের আগে কোনো প্রাইভেট টিভি চ্যানেল ছিল না, রেডিও ছিল না এবং সংবাদপত্রের সংখ্যাও সীমিত ছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল একুশে টেলিভিশনের অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে এফএম রেডিওর অনুমতিও দেওয়া হয়।
রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের ইফতার অনুষ্ঠানে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সরকারের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের যে অভিযোগ বিএনপি করে আসছে, তার প্রেক্ষাপটে এখন বাংলাদেশ থেকে সাড়ে সাতশ দৈনিক পত্রিকা প্রকাশের তথ্য তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। এছাড়া
৪৬টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল, ২২টি এফএম ও ৩২টি কমিউনিটি রেডিও কাজ করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, “সবচেয়ে বেশি সমালোচনা আমাদের বিরুদ্ধে হয়। আপনারা ইচ্ছামতন লেখেন, কেউ আপনাদের কিছু বলে না। কই অন্য সময় তো তা পারেন নাই।
“টকশোতে তো ইচ্ছা মতন কথা বলে যান, সত্য-মিথ্যা দিয়ে। আমরা কখনও বাধা দিই না।”
তবে সংবাদ প্রকাশ ও প্রচারের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতার কথাও মনে করিয়ে দেন সরকার প্রধান।
“এখন তো আবার ডিজিটাল যুগ.. অনলাইনে ভালো সাংবাদিকতা করা হয়। কখনও ভালো, কখনও মন্দ, অনেক সময় সমাজে নানা রকম সমস্যারও সৃষ্টি করে। কাজেই সেই সব বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।”
বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, “জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘রাজনীতির নীতি থাকতে হবে’। তেমনি সাংবাদিকতারও নীতি থাকতে হবে।
“নীতিহীন রাজনীতি কখনও কোনো দেশ ও জাতিকে কিছু দিতে পারে না। আবার নীতিহীন সাংবাদিকতা দেশের কল্যাণ করতে পারে না। সময় সময় দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, সমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করে’।”
“নীতিহীন সাংবাদিকতা, যেটাকে বলে হলুদ সাংবাদিকতা, সেটা কিন্তু কখনও কারও কাছে গ্রহণযোগ্য নয়,” বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, “ওয়েজবোর্ড (নবম) ইতোমধ্যে আমরা করে দিয়েছি। কিন্তু যেখানে আটকে আছে.. সেটা কিন্তু আমাদের দোষ নয়। আটকে আছে মালিকদের কারণে।
“সেখানে মালিকদের প্রতিনিধি যে দেওয়ার কথা.. এখনও মালিকরা সে প্রতিনিধি দেয়নি। মালিকদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দিলেই ওয়েজবোর্ডটা কার্যকরভাবে কাজ শুরু করতে পারে।”
বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশন এবং এফএম রেডিওগুলোর সংবাদকর্মীদেরও ওয়েজবোর্ডে অন্তর্ভুক্তির কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
“আমাদের ইলেট্রনিক মিডিয়া…তারা আসলে না ঘরকা না ঘাটকা অবস্থায় আছে। তাদেরও একটা নীতিমালার মধ্যে থেকে এই ওয়েজবোর্ডে সাথে সামিল হওয়া আছে বলে আমি মনে করি।”
রাজউকের উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পে সাংবাদিকদের জন্য কিছু ফ্লাট রাখতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়ার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী, যাতে দীর্ঘমেয়াদী কিস্তিতে সাংবাদিকরা এই ফ্লাট কিনতে পারেন।
নিউজপেপার এমপ্লয়িজ সার্ভিসেস কন্ডিশন অ্যাক্ট-১৯৭৪ পুনর্বহালের পরিকল্পনাও জানান তিনি।
চলমান রাজনীতির কথাও আসে শেখ হাসিনার কথায়, যেখানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্যের জবাব দেন তিনি।
খালেদা জিয়া এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ বুঝতে পারবে, তাদের পায়ের নিচে মাটি আছে কি না।”
শেখ হাসিনা সামরিক আইনের বলে জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “ক্ষমতার উচ্চ শিখরে বসে যে দলের সৃষ্টি, তাদেরই পাশের তলায় মাটি থাকে না। একথা তাদের মনে রাখা উচিৎ।”
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মহাসচিব ওমর ফারুক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শাবান মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল মাহমুদ চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীও অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী প্রেস ক্লাবে পৌঁছে ঘুরে ঘুরে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।