আজকের ম্যাচ নিয়ে যা ভাবছেন দুই ক্যাপ্টেন

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির এমন এসপার-ওসপার ম্যাচ। বিশ্ব ক্রিকেটের দুই সেরা ব্যাটসম্যান যুযুধান দুই অধিনায়ক। অথচ বাগ্‌যুদ্ধের কোনও ব্যাপার তো নেই-ই, উল্টে একে অন্যের প্রশংসায় ব্যস্ত। যুযুধান দুই দল যে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া নয়, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। মুখোমুখি দ্বৈরথের অপেক্ষায় থাকা দুই অধিনায়ক যে বিরাট কোহলি ও স্টিভ স্মিথ নয়, কোহলি এবং এ বি ডিভিলিয়ার্স।

অগ্নি স্ফুলিঙ্গ ওড়ার বদলে প্রাক-ম্যাচ পরিবেশে বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ হাওয়া। দুই অধিনায়ক একে অন্যের প্রশংসা করে গেলেন। কোহলি বলে গেলেন, ‘‘আমি এ বি-র অবস্থাটা বুঝি এবং সমব্যাথী। যারা নিজেরাই মানটাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে তুলে দেয়, তার পর যখন সাময়িক সেই উচ্চ স্তরের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে না, তখনই সমালোচনা সহ্য করতে হয়। আমার ক্ষেত্রেও হয়েছে। যখন রান হয় না, সকলে স্তম্ভিত হয়ে যায়।’’

এখানেই না থেমে বিরাট যোগ করলেন, ‘‘আমার দেখা সবচেয়ে দায়বদ্ধ ক্রিকেটারের নাম এ বি ডিভিলিয়ার্স। সব সময় টিমের জন্য অতিরিক্ত কিছু করে যাচ্ছে।’’ দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক হিসেবে এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এখনও পর্যন্ত ব্যর্থ ডিভিলিয়ার্স। দু’টি ম্যাচে রান যথাক্রমে ৪ এবং ০। কোহালি সেখানে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৮১ নট আউট করার পরে আগের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ০ করেছেন। বিরাট এই রান দিয়ে ডিভিলিয়ার্সকে বিচার তো করছেনই না। কথাবার্তা শুনে মনে হল কঠিন পরিস্থিতিতে বরাবরের ‘চোকার্স’ হিসেবেও দক্ষিণ আফ্রিকাকে দেখতে চাইছেন না। বারবার তাঁর মুখে শোনা গেল প্রতিপক্ষের প্রতি সম্মান রেখে খেলার। দক্ষিণ আফ্রিকা ওয়ান ডে র‌্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর। এমনি-এমনি যে ডিভিলিয়ার্স-রা এক নম্বর হননি, সেটা মাথায় রাখতে চান ভারত অধিনায়ক। আগ্রাসন নয়, নিয়ন্ত্রিত আগ্রাসন চাইছেন তিনি।

একটু পরে একই জায়গায় বসে ডিভিলিয়ার্স সেই স্বীকৃতি যেন ফিরিয়ে দিয়ে গেলেন। বললেন, ‘‘মাঠে এবং মাঠের বাইরে বিরাটকে যত দেখছি, তত মুগ্ধ হচ্ছি। তত ওর প্রতি সম্মান বাড়ছে। ও শুধু মাঠের মধ্যে অসাধারণ এক ক্রিকেটারই নয়, মাঠের বাইরেও দারুণ মানুষ।’’ কী ভাবে বিরাটকে আউট করবেন? তা নিয়ে জিজ্ঞেস করলেও সম্ভ্রম মেশানো গলায় এ বি বললেন, ‘‘বিরাট বিশ্বের যে কোনও টিমকে একা ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে। আমরা অনেক বার সেটা দেখেছি। আমাদের তাই লক্ষ্য, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওর উইকেটটা তুলে নেওয়া।’’

দুই অধিনায়কের জয়ের মন্ত্রও দেখা যাচ্ছে একই। মরণবাঁচন ম্যাচ বলে অতিরিক্ত উত্তেজনার বশে যেন কেউ স্নায়ুর যুদ্ধ হেরে না বসেন, সে দিকে দু’জনেই আলাদা খেয়াল রাখছেন। কোহালি যেমন বলে গেলেন, ‘‘আমার মতে, যারা বেশি ঠান্ডা মস্তিষ্ক ধরে রাখতে পারবে, যারা নিজেদের আবেগ, উত্তেজনার উপর বেশি নিয়ন্ত্রণ দেখাবে, তারাই জিতবে।’’ একটু পরে ডিভিলিয়ার্সের গলাতেও একই সুর শোনা গেল।

বল্গাহীন আক্রমণের নীতি নিয়ে হা রে রে রে করে কেউ ঝাঁপিয়ে পড়তে চান না। এমন কেউ হতে দিতে চান না যে, অতিরিক্ত অ্যাড্রেনালিন ক্ষরণ হয়ে দুঃসাহসিক কিছু করতে গিয়ে কেউ ম্যাচের রাশটাই অন্যের হাতে তুলে দিল। দুই অধিনায়ক যতই নিজেরা অ্যাডভেঞ্চার ভালবাসুন, এই ম্যাচটায় কেউ দিশাহীন ড্রাইভিং করে দুর্ঘটনার কবলে পড়তে চান না। কারণ, রবিবারের ওভালের পর আর লাইফলাইনও যে নেই।

হয় এখানে জিতে সেমিফাইনাল খেলার টিকিট অর্জন করো, নইলে বিদায় নাও। দু’টো টিমের ক্ষেত্রেই তাই। ভারত যদি জেতে তারা এই গ্রুপের সেরা হয়েই সেমিফাইনালে যাবে। সেক্ষেত্রে তারা বার্মিংহামে খেলবে অন্য গ্রুপের দ্বিতীয় দলের সঙ্গে। আর যদি বৃষ্টিতে খেলা ভেস্তে যায়, তা হলেও কোহালিরা শেষ চারে যাবেন। সেক্ষেত্রে তাদের খেলা পড়বে কার্ডিফে। আর হারলে রবিবারই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts