পাহাড়ধসে মৃতের সংখ্যা ১৩৩ ছাড়িয়েছে

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও বান্দরবানের পাহাড়ধসে মৃতের সংখ্যা  ১৩৩ ছাড়িয়েছে।এখনও সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিপর্যয় ঘটেছে রাঙামাটিতে। সেখানে পাহাড়ধসে মারা গেছেন ৯৮ জন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সেনাবাহিনীর দুই কর্মকর্তা ও দুই সৈনিক। পাহাড়ধসে বন্ধ হয়ে যাওয়া রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক চালু করতে গিয়ে প্রাণ হারান তারা।

এ ছাড়া চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ২১ জন ও চন্দনাইশ উপজেলায় ৩ জন এবং বান্দরবানে পাহাড়ধসে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার মধ্যরাত ও গতকাল মঙ্গলবার ভোরে পাহাড়ধসে তারা মারা যান। প্রাণহানি আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। ফায়ার সার্ভিস ও জেলা প্রশাসন গতকাল রাত আটটা পর্যন্ত উদ্ধার তৎপরতা চালিয়েছে। দুর্গম যোগাযোগব্যবস্থা ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে গত রাত আটটায় উদ্ধার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের ৬০ জনের একটি দল আজ বুধবার রাঙামাটি গিয়ে উদ্ধারকাজে অংশ নেবে।

এর বাইরে দেয়াল চাপা পড়ে চট্টগ্রাম নগরের হালিশহরে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

গত নয় বছরের মধ্যে পাহাড়ধসে প্রাণহানির এটি সবচেয়ে বড় ঘটনা। এর আগের ঘটনাটিও জুন মাসে ঘটেছিল। ২০০৭ সালের ১১ জুন চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসে ১২৭ জন নিহত হয়েছিল।

রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক প্রকাশ কান্তি চৌধুরী বলেন, জেলা সদরে ৫৩ জন, কাউখালীতে ২৩ জন, কাপ্তাইয়ে ১৮ জন এবং বিলাইছড়ি ২ জন ও জুরাছড়িতে ২ জন করে পাহাড়ধসে মারা গেছেন। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর নষ্ট হয়েছে। রাঙামাটি শহরও বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।

পাহাড়ধসে প্রাণহানি ঠেকাতে আগেই প্রস্তুতি নেওয়া যেত বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক গওহার নঈম ওয়ারা। তিনি বলেন, অতীতে পাহাড় ধ্বংস করা হয়েছে। এখনো পাহাড় কাটা হচ্ছে। দখল চলছে। পাহাড়ে বসতি ব্যবস্থাপনায় নিয়ম-শৃঙ্খলা আনা না গেলে ভবিষ্যতে আরও বড় সমস্যা দেখা দেবে।

রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ধস শুরু হয় গতকাল ভোর ৫টা থেকে। এরপর বেলা ১১টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় শহরের ভেদভেদি, রাঙ্গাপানি, যুব উন্নয়ন, টিভি স্টেশন, রেডিও স্টেশন, রিজার্ভ বাজার, মোনঘর, শিমুলতলি ও তবলছড়ি এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। শহরের যুব উন্নয়ন এলাকায় মা-ছেলের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলো সোনালি চাকমা (৩০) ও তাঁর ছেলে অমিয় চাকমা (৭)। ওই সময় সোনালি চাকমার স্বামী জীবন চাকমা ঘরে ছিলেন না। একই এলাকায় প্রায় ৫০০ গজ দূরে মাটি চাপা পড়ে মারা গেছেন এক পরিবারের ছয়জন—হাজেরা বেগম (৪০), রুমা আক্তার (২৫), মো. সোহাগ (১৩), নূরী আক্তার (৩) মো. শরিফ (২৬) ও সোহানা আক্তার (২০)।

যুব উন্নয়ন এলাকায় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শেফালী চাকমা বলেন, ‘আমাদের বাড়ির পাশে দুই পরিবার মাটিচাপা পড়েছে। এর মধ্যে মা-ছেলের লাশ উদ্ধার করা হয়। মাটির নিচে আরও এক পরিবারের মা ও দুই মেয়ে নিখোঁজ রয়েছে।’

শহরের ভেদভেদি এলাকায় ভোরে ঘুমন্ত অবস্থায় এক পরিবারের সবাই মারা গেছেন। তাঁরা হলেন লিটন মল্লিক (২৮), চুমকি মল্লিক (২২) ও তাঁদের ছেলে আয়ুশ মল্লিক (২) মারা গেছে। মোনঘর এলাকায় মারা গেছেন মা-মেয়ে নিলি চাকমা (৩০) ও ফেন্সি চাকমা (৪)।

রাঙামাটি শহর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরের মানিকছড়ি সেনাক্যাম্প থেকে উদ্ধার তৎপরতা চালাতে গিয়ে মারা গেছেন ৫ জন। তাঁরা রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে পাহাড়ধসের মাটি সরানোর কাজ করছিলেন। তখন তাঁদের ওপর পাহাড়ের বিরাট একটি খণ্ড ধসে পড়ে। এতে প্রাণ হারান মেজর মোহাম্মদ মাহফুজুল হক, ক্যাপ্টেন মো. তানভীর সালাম, করপোরাল মোহাম্মদ আজিজুল হক ও সৈনিক মো. শাহিন আলম। নিহত অন্য একজন শ্রমিকের নাম পাওয়া যায়নি।

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রাজানগর ও ইসলামপুর ইউনিয়নে পাহাড়ধসে গতকাল ভোরে চার পরিবারের ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাঙ্গুনিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বান্দরবান ফায়ার সার্ভিস ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, শহরের কালাঘাটা, শহরতলির লেমুঝিরিপাড়া ও লেমুঝিরি আগাপাড়া এলাকায় পাহাড়ধসে চারজন প্রাণ হারিয়েছেন। লেমুঝিরিপাড়ায় একই পরিবারের ঘুমন্ত তিন শিশু ও কালাঘাটায় এক কলেজছাত্র নিহত হয়েছেন। বান্দরবান সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নের পশ্চিম গুংগুরু খেয়াংপাড়ায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts