আতাতুর্ক কামাল পাশা ॥ বেশ কিছুদিন ধরে বাংলাদেশের বেতার সম্প্রচার ও বিভিন্ন এফএম ব্যান্ডে বিন্দিয়া খানের কণ্ঠে ভেসে আসছে ইথারে। দেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে লঘু, চটুল ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে দেখা যাচ্ছে বিন্দিয়া খানের সরব উপস্থিতি। এ ছাড়াও তিনি চলচ্চিত্রে গান গেয়েছেন।
আজ দেশের ও কলকাতার জি টিভির তিনি একজন পরিচিত নাম।
বিন্দিয়া খানকে মানুষ তার কণ্ঠ শুনে অনায়াসে চিনে ফেলে। কারণ তার কণ্ঠের পেলবতা, অনুরণন, সুরকে ধরে রাখার এবং সেটি প্রক্ষেপ করবার যে মোহনীয় ক্ষমতা রয়েছে তা প্রথম শ্রবণেই শ্রোতার কানে রয়ে যেতে থাকে। এ কারণেই অল্প সময়েই দেশের সঙ্গীত-প্রিয় মানুষের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছেন তিনি।
নতুন সহস্রাব্দির শুরুর দিকেই তিনি প্রথম মঞ্চে গান পরিবেশন শুরু করেন। এর পর প্রায়ই মঞ্চে তিনি গাইতে শুরু করেন। তার কণ্ঠের অপূর্ব কারিশমার জন্য অল্প সময়ের ভেতরই তাকে বিভিন্ন মিডিয়ায় গান পরিবেশনে আমন্ত্রণ জানানো শুরু হয়। দেশের সঙ্গীতাঙ্গনে এখন তিনি নিয়মিত শিল্পী।
অল্প সময়েই তার এই পরিচিতি দেশের বাইরেও তাকে সঙ্গীত পরিবেশনার আমন্ত্রণ এনে দেয়। তিনি ভারতের কোলকাতার জনপ্রিয় টিভি সঙ্গীত ধারাবাহিক ‘সা রে গা মা পা’-তে ২০০৮ সালে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে গান পরিবেশনের আমন্ত্রণ পান।
আসলে বিন্দিয়া খানের কণ্ঠে একই সাথে মেলোডি, উচ্ছ্বাস, রাগ-আশ্রিত, লোকজ সুর এমনভাবে খাপ খেয়ে যায় যে তাকে বাদ দিয়ে কোন পূর্ণাঙ্গ অনুষ্ঠান বা অ্যালবামের কথা চিন্তাই করতে পারেন না সুরকাররা।
২০১২ সালে বিন্দিয়া খানের প্রথম গান বিটিভি চ্যানেলে পরিবেশিত হলেই তিনি মানুষের কাছে বেশি পরিচিতি পান। তখন থেকেই দেশের সঙ্গীতপ্রিয় শ্রোতারা বিন্দিয়ার সুরের সাথে পরিচিত হতে থাকেন।
তিনি মঞ্চে বা বিভিন্ন চ্যানেলে যে লঘু সঙ্গীত, শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও আধুনিক গান পরিবেশন করতে থাকেন, তার মূলে রয়েছে তার সঙ্গীত সাধনা। তার রাগ-প্রিতির প্রতি অন্তরের টান।
সঙ্গীতের মঞ্চে, বিভিন্ন চ্যানেলে, বা অন্যান্য মিডিয়ায় তিনি যতোই ব্যস্ত থাকেন না কেন, প্রতিদিন সকালে উঠে তার মালিবাগের ভাড়া বাসায় প্রতিবেশিরা প্রভাতের একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিন্দিয়া খানের তানসাধনা শুনতে পান। এ বিন্দিয়ার প্রতিদিনের একটি রুটিন। যেদিন সকালে করতে পারেন না, সেদিন বিকেলে তার রাগসাধনা চলবেই। কারণটা অনেকটাই বংশীয়।
দাদু উপমহাদেশের প্রখ্যাত শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ খান । তিনি ১৯০৮ সালে ভারত থেকে এপার বাংলায় আসেন। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার পিতাও সঙ্গীত চর্চা করে গেছেন। পিতার কাছ থেকেই বিন্দিয়া খানের গানের জগতের প্রথম শিক্ষার হাতেখড়ি। রক্তের টানে তিনি সঙ্গীতে ঝুঁকে পড়েন।
বিন্দিয়া খান ঢাকার ভিকারুন নেসা নুন স্কুলে প্রথম ভর্তি হন। পরে তিনি সিদ্ধেশ্বরী মহাবিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। কিন্তু আগে থেকেই পারিবারিক বিশেষ পরিমন্ডলের আবহে তিনি সঙ্গীত চর্চা চালিয়ে যেতে থাকেন।
তার মঞ্চে প্রথম গান পরিবেশিত হয় ২০০১ সালে, মাত্র অত্যন্ত কৈশোর বয়সে। বর্তমানে তার শতেকের বেশি গান বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারিত হচ্ছে। ৫০টি গানের অ্যালবাম বাজার দখল করে নিয়েছে। একাধিক গান বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানীর রিং টোন হিসেবে বিক্রি হচ্ছে।
সম্প্রতি কবি শেখ নজরুলের লেখা ও শোয়েব শিবলীর সুরারোপিত ৩০টি গানের তিনটি সিডি বাজারে এসেছে। আলোড়ন তোলা এই তিনটি সিডিতে বিন্দিয়া খান ছয়টি গান পরিবেশন করেছেন। অ্যালবামটি হেডমাস্টার ভয়েস থেকে ‘গানালাপ’ সিরিজে বাণীবদ্ধ করা হয়েছে। এ অ্যালবামটির মোড়ক উন্মোচন করেন বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সাংসদ কবি কাজী রোজী শেখ নজরুলের এ গানগুলোর ভূয়োসী প্রশংসা করেন ।
সামনের ঈদে তিনি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকটি নতুন গান নিয়ে আসছেন। এবারের বিভিন্ন চ্যানেলে ঈদের গানের অনুষ্ঠানে সরবে উপস্থিত থাকছেন বিন্দিয়া খান। তার এ সুন্দরের যাত্রা আর থেমে থাকবার নয়। ঢাকার কিং, ফাঁদ, মামা মারে ছক্কা এই তিনটি সিনেমার গানেও তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন।