খান মাইনউদ্দিন, বরিশাল [] সর্বশেষ মহিষ জবাই করে লুটের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন নলছিটির আনো ম্যাবো । এক ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীর নাম আনো ম্যাবো । মারামারি, কাটাকাটি, ভোটের সময়, রাজনৈতিক দলের মিছিল- মিটিংয়ে এর প্রয়োজন খুব বেশী। আর রাজনৈতিক শেল্টার পেয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এই ম্যাবো।
নলছিটির মধ্য মালিপুর গ্রামের নেছার উদ্দীনের পুত্র ম্যাবো নব্বই দশক থেকে আলোচনায় উঠে আসেন। মালিপুর গ্রামের কালুর মেয়ে বেবীকে বিয়ে করার সময় বেকার থাকায় যৌতুকের জন্য প্রায়ই নির্যাতন চালাত। এক পর্যায় তাকে হত্যা করে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচারের অভিযোগ ওঠে। বেবীর পিতার কোন ছেলে এবং আত্মীয় স্বজন প্রভাবশালী না থাকায় ভয়ভীতি দেখিয়ে লাশ দাফন করায়। এ ঘটনা পত্র- পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ায় অনেকদিন পরে লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে পোষ্টমর্টেমের জন্য। বেবীকে হত্যা করার আলামত পাওয়ায় সরকার বাদী মামলা হয়। এই মামলায় বহুদিন হাজতবাস ও সাজা খাটে। এ ঘটনা ১৯৯৬/৯৭ সনের দিকে। কিছুদিন পর জেল থেকে বের হওয়ার পর পূনরায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়।
১৯৯৮ সনের ২৪ ডিসেম্বর ১ লা রমজানের দিন রামদাও দিয়ে তৎকালীন যুবলীগ সভাপতি গোলাম মোস্তফা ফিরোজের ডান হাত কোপ দিয়ে কেটে ফেলে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হয়। রাজনৈতিক শেল্টারে রক্ষা পায়। ২০০৫ সনের দিকে মালিপুর গ্রামের বর্তমানের চাঞ্চল্যকর মহিষ জবাই ও লুট করা সেই মহিষের মালিক মন্নান খানের মেয়েকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রায়ই ধর্ষণ করত। এক পর্যায় মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে পরলে আনো ম্যাবো বিয়ে করতে অস্বীকার করে। মেয়েটি ২০০৬ সনের ১২ জুলাই ঝালকাঠি আদালতে ধর্ষণ মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় ২০১০ সনের ২৫ অক্টোবর রায় হয়। আনোয়ার ওরফে ম্যাবোর যাবজ্জীবন সাজা ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো এক বছরের সাজা হয়। এই সন্ত্রাসীর সাজা হওয়ায় নলছিটির জনগণ খুব খুশী হয়।
কয়েক বছর সাজা খাটার পর হাইকোর্টে আপীল করে জামিনে আসে। জামিনে আসার পর পূর্বের ন্যায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়ে নলছিটিতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। নিজেকে পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক দাবী করে ব্যানার সাটিয়ে দেয়। সেটেলমেন্ট অফিসে নিজে ও তার বাহিনী অফিসার ও জনগনকে মারধর করে। একটি মামলাও দায়ের হয়। গত ৩/৪/১৬ তারিখে নলসিটির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দীন তালুকদারের মেয়ে নাজমা বেগম কলিকে ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে মারধর, ভাংচুর ও লটপাট চালায়। এ ঘটনায় নলছিটি থানায় মামলা দায়ের হয়। মামলা নং-৩, তারিখ- ৩/৪/১৬। যা বর্তমানে বিচারাধীন আছে।
যে মেয়ের ঘটনায় যাবজ্জীবন সাজা হয় তার পিতা মন্নান খানের মহিসের দিকে তার ও তার বাহিনীর লোলুপ দৃষ্টি পরে। গত ২ জুন-১৭ রমজানে রাতে মন্নান খানের বাড়ির পাশে বেধে রাখা একটি মহিষ ছাড়া বাড়িতে নিয়ে জবাই করে। গোশত লুটপাট করে নিয়ে যাওয়াকালীন এলাকার লোকজন দেখে ফেলে। কিন্তু ভয়ে কেহ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। মহিষ মালিকের ছেলে পরদিন থানায় গিয়ে জানালে পুলিশ তাদের কিছু করার নেই বলে। কয়েকদিন পর এ ঘটনা ফেসবুকে ভাইরাল হলে প্রশাসনের টনক নড়ে।পুলিশ মহিস মালিককে ডেকে এজাহার নেয়। পুলিশ প্রথমে দুই কশাইকে আটক করলে তারা ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকরক্তি প্রদান করে। আনো ম্যাবোকে পুলিশ আটক করে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। কিন্তু এই খুনী, ধর্ষণকারী, সন্ত্রাসীকে প্রভাবশালী নেতারা শেল্টার দিচ্ছে। অথচ আওয়ামীলীগের অনেকে তাকে বহিস্কারেরও দাবী তোলেন। তাদের ভাষ্য, আর কত অপরাধ করলে তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হবে?