ফরহাদ মজহার যেভাবে উদ্ধার

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ‘অপহৃত’ কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহারকে যশোরের নোয়াপাড়া থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার রাত সোয়া ১১টার দিকে যশোরের নোয়াপাড়া এলাকায় হানিফ পরিবহনের একটি বাস থেকে তাঁকে উদ্ধার করা হয়।

র‍্যাব -৬ এর অধিনায়ক খন্দকার রফিকুল ইসলাম জানান,  হানিফ পরিবহনের একটি বাসে করে খুলনা থেকে ঢাকায় ফেরার পথে যশোরের নোয়াপাড়া এলাকায় তল্লাশি করে রাত সোয়া ১১ টার দিকে সুস্থ অবস্থায় ফরহাদ মজহারকে উদ্ধার করা হয়। তাঁকে এখন নোয়াপাড়া থেকে খুলনায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

উদ্ধারের তিন ঘণ্টা আগে ফরহাদ মজহারকে খুলনায় নিজের রেস্তোরাঁয় দেখার দাবি করেছিলেন ‘নিউ গ্রীল হাউস’র মালিক আব্দুল মান্নান। খুলনার নিউ মার্কেটের সামনে এই রেস্তোরাঁটি। মান্নানের কাছে খবর পাওয়ার পর র‌্যাব জোর অনুসন্ধান শুরুর কথা জানায়।

র‌্যাব কর্মকর্তা রফিকুল বলেন, “ফরহাদ মজহার খুলনার শিববাড়ী মোড় থেকে রাত সোয়া ৯টায় হানিফ পরিবহনের একটি বাসে ঢাকা রওনা হয়েছিলেন।”

শাহরিয়ার পলক নামে একজন নিজেও ওই বাসে ছিলেন দাবি করে তার ফেইসবুক পাতায় লিখেছেন, “খুলনা থেকে আসছি হানিফের বাসে করে! নোয়াপাড়ায় হঠাৎ করে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা হল! সুপারভাইজার কোনো কথার উত্তর দিলো না। প্রায় ৪০ মিনিট পর ৩টি র‍্যাবের গাড়ি এসে তল্লাশি করলো, আর বাসের পেছনের সিট থেকে উদ্ধার হলো – নিখোঁজ কবি ফরহাদ মজহার…..।”

খুলনা থেকে আসছি হানিফের বাসে করে! নোয়াপাড়ায় হঠাত করে গাড়ি দাড় করিয়ে রাখা হলো ! সুপারভাইজার কোনো কথার উত্তর দিলো না। প্রায় ৪০মিনিট পর ৩টি র‍্যাবের গাড়ি এসে তল্লাসি করলো, আর বাসের পেছনের সিট থেকে উদ্ধার হলো – নিখোজ কবি ফরহাদ মজহার…..।
উনি ভালো আছেন , সুস্থো আছেন!!

 

‘নিউ গ্রীল হাউস’র মালিক মান্নান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, রাত ৮টার দিকে তার রেস্তোরাঁয় ভাত খেয়েছিলেন ফরহাদ মজহার। “আমার হোটেলে ভাত, ডাল ও সবজি খেয়ে রাত ৮টার দিকে বের হয়ে যান তিনি। তার পরনে লুঙ্গি ও মাথায় সাদা কাপড় ছিল। তাকে বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছিল।”

ফরহাদ মজাহারকেই দেখেছেন, তা নিশ্চিত হলেন কীভাবে- এই প্রশ্নে মান্নান বলেন, “প্রথমে আমি তাকে চিনতে পারিনি, পরে টিভিতে তার ছবি দেখে চিনতে পারি। তখন আমি বিষয়টি র‌্যাবকে জানাই।”

র‌্যাব-৬ এর অধিনায়ক রফিকুল বলেন, “রেস্টুরেন্ট মালিক আব্দুল মান্নান রাত ১০টার দিকে বিষয়টি আমাদের জানায়। তখন তার খোঁজে অভিযান চালাই।”

রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ফরহাদ মজহারকে সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায়ই পেয়েছেন তারা।

খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহম্মেদ বলেন, “একজন সুস্থ মানুষ যেভাবে জার্নি করে, সেভাবেই তিনি ছিলেন। তার সঙ্গে একটি ব্যাগ ছিল, গেঞ্জি ছিল। কিছু টাকাও ছিল। এমনকি মোবাইল চার্জার নিতেও ভোলেননি তিনি।”

কিন্তু র‌্যাব অপহরণের কোনো ইঙ্গিত পায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “একজন সুস্থ মানুষ যেভাবে জার্নি করে সেভাবেই উনাকে আমরা পেয়েছি। এতে করে অপহরণের বিষয়টি প্রমাণ হয় না। মনে হয় না এটা অপহরণ।”

ডানপন্থি অধিকারকর্মী হিসেবে পরিচিত কবি-প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার সোমবার ভোরে ঢাকার শ্যামলীর রিং রোডে তার বাসা থেকে বের হওয়ার পরপরই অপহৃত হন বলে তার স্বজনরা পুলিশকে জানান।

তার সন্ধান মেলার পর স্ত্রী ফরিদা আখতার আদাবরের বাসায় বলেন, “উনি যতক্ষণ না বাসায় আমাদের কাছে পৌঁছাচ্ছেন, ততক্ষণ উৎকণ্ঠা কাটছে না। তবে উনার সঙ্গে র‌্যাবের মোবাইল ফোনে আমার ‘অল্প একটু’ কথা হয়েছে। উনি বাসায় এসে পৌঁছালে উৎকণ্ঠা পুরোপুরি দূর হবে।”

তার দুই ঘণ্টা আগেও রাত ১০টায় ওই বাসায় স্বামীর খোঁজ না পেয়ে নিজের উৎকণ্ঠার কথা জানিয়েছিলেন ফরিদা। ফরহাদ মজহারকে উদ্ধারে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আহ্বানও জানিয়েছিলেন তিনি।

উদ্ধার পাওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, মানবাধিকারকর্মী, সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়সহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ফরিদা বলেন, “আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সচেষ্ট হলে সবকিছুই সম্ভব।”

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts