মতলব প্রতিনিধি ॥ চাঁদপুরের মতলব উত্তরে ডাক্তার সেজে ক্লিনিক মালিক নিজেই এক গর্ভবতী মাকে অস্ত্রোপচার করেন। এতে ওই প্রসূতি মুন্নি আক্তারের (২০) জখমী স্থানে ইনফেকশন দেখা দেয়। ফলে তার অবস্থা বর্তমানে খুবই আশংকাজনক। এ ঘটনায় বুধবার মতলব উত্তর থানায় অভিযোগ দাখিল করেন প্রসূতির স্বামী মো. ইব্রাহিম মিয়া।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ জুন সকালে উপজেলার সাড়ে পাঁচানী গ্রামের ইব্রাহিমের স্ত্রীর প্রসব ব্যাথা উঠলে তাকে ছেঙ্গারচর জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। এরপর ওইদিন দুপুরে ক্লিনিক মালিক সুমনা আক্তার নিজেই ডাক্তার সেজে অস্ত্রোপচার করেন। এতে প্রসূতির অস্ত্রোপচার করা স্থানে ইনফেকশন হয়ে যায়। ইনফেকশনের বিষয়টি গোপন রেখে গত ১৮ জুন রোগীকে রিলিজ দেওয়া হয়।
পরে ক্ষতস্থান উন্নত না হওয়ায় বিষয়টি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে জানালে গত ২৪ জুন পুণরায় হাসপাতালে এসে সুমনার সহযোগী ইলিয়াছের মাধ্যমে ড্রেসিং করা হয়। এতে তার অবস্থা আরো আশংকাজনক হয়ে ওঠে। এ বিষয় কথা বলতে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রসূতির স্বামী ও আত্মীয়-স্বজনকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়। এতে তারা আইনের সহযোগীতা পাওয়ার লক্ষ্যে মতলব উত্তর থানায় ও মতলব উত্তর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাধ্যমে জেলা সিভিল সার্জনের কাছে অভিযোগ দাখিল করেন।
বাদী মো. ইব্রাহিম বলেন, আমরা সাধারন মানুষ। কে ডাক্তার কে কি, তা আমরা জানিনা। হাসপাতালে আনার পর সুমনা ও তার সহযোগীরা সিজার করেছে। আমি মনে করেছিলাম তারাই ডাক্তার। পরে জানতে পারি যে, সুমনা আসলেই কোন ডাক্তার না। সে ক্লিনিক মালিক। ভুয়া ডাক্তারের মাধ্যমে সিজার করার কারনে আমার স্ত্রীর অস্ত্রোপচার স্থানে ইনফেকশন দেখা দেয়। তাদের বিষয়টি জানালে তারা বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দেয়। এমতাবস্থায় আইনি সহায়তা পেতে ছেঙ্গারচর জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের মালিক সুরুজ মিয়া (৫৮), তার মেয়ে সুমনা আক্তার (২৫), তার সহযোগী ইলিয়াছ (৩৫) কে বিবাদী করে অভিযোগ দাখিল করি। বর্তমানে তার স্ত্রী মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন।
প্রসূতি মুন্নি আক্তারের সাথে কথা হলে তিনি জানান, সুমনা আপা আমাকে সিজার করেছে। আমি যদি জানতাম সুমনা ডাক্তার না তাহলে তাকে সিজার করতে দিতাম না। সিজারের বিল হিসাবে ২৫ হাজার টাকা ও আমার শিশুর শ্বাসকষ্ট বলে চিকিৎসার নামে আরো ৭ হাজার টাকা নিয়েছে।
এ ব্যাপারে মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ারুল হক বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হাবিব ইসমাইল ভুইয়া বলেন, ডাক্তার না হয়ে তো কোন চিকিৎসাই করা যাবে না। অস্ত্রোপচার তো ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ! আমরা তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
অভিযুক্ত ভুয়া ডাক্তার সুমনা বলেন, ডাক্তারই তাকে অস্ত্রোপচার করেছেন। বাচ্চা গর্ভে মূলমত্র ত্যাগ করায় সেলাইয়ে ইনফেকশন হয়েছে। তবে আমরা তার চিকিৎসা চালাচ্ছি।