বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বিপ্লব ঘটে গেছে৷ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতিদিন এখন ৮৪৪ কোটি টাকারও বেশি লেনদেন হয়৷ গ্রাহক ৫ কোটি ২৬ লাখ, যা বাংলাদেশের মোট জনগেষ্ঠীর এক তৃতীয়াংশ৷ সোমবার সংসদে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী ।
সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের পক্ষে এক প্রশ্নের জবাবে এই তথ্য জানান খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম৷ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান মোবাইল ব্যাংকিং চালু করেন৷ এরপর অবিশ্বাস্য গতিতে এটা জনপ্রিয় হয়৷ দাবি করা হয় বিশ্বের যে কোনো দেশের চেয়ে বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক বেশি৷
সংসদে দেয়া তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে বর্তমানে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস), যা মোবাইল ব্যাংকিং নামে পরিচিতি পেয়েছে, তার মাধ্যমে দিনে গড়ে ৪৯ লাখ ৫ হাজারটি লেনদেন হয়৷ এতে গড়ে প্রতিদিন লেনদেন হওয়া অর্থের পরিমাণ ৮৪৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা৷ বর্তমানে এমএফএস সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৭টি৷ এজেন্ট সংখ্যা ৭ লাখ ৪৬ হাজার এবং গ্রাহক ৫ কোটি ২৬ লাখ৷ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক এখন বাংলাদেশের মোট জনগেষ্ঠীর এক তৃতীয়াংশ৷
বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং চালু হয় ২০১০ সালে৷ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ২৮টি ব্যাংক অনুমোদন নেয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স নিলেও চালু করে ১৭টি ব্যাংক৷ বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক ছিল ৩ কোটি ১২ লাখ৷ আর প্রতিদিন গড়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন হতো প্রায় ৫০০ কোটি টাকা৷ মাত্র দেড় বছরে গ্রাহক এবং টাকা লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ৮০ ভাগ বেড়েছে৷
২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক ছিল ৩ কোটি৷ কিন্তু মাত্র একমাসে নভেম্বরে গ্রাহক ১২ লাখ বেড়ে দাড়ায় ৩ কোটি ১২ লাখ, যা তখন ছিল মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ ভাগ৷ গত তিন বছরে গ্রাহক বাড়ার হার হলো শতকরা ৫২৪ ভাগ৷
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সুবিধা হলো, এই অ্যাকাউন্ট করতে আলাদা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের প্রয়োজন হয় না৷ মোবাইল ফোন থাকলেই যে কেউ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন আর টাকা লেনদেন করতে পারেন বাংলাদেশের যে কোনো স্থান থেকে৷ তাঁকে ব্যাংকের শাখায় যেতে হয় না৷ মোবাইল ফোনের কল রিচার্জ বা ‘ফ্লেক্সিলোড’ যারা করেন মূলত তারই এখন মোবাইল ফোন ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট৷ তাদের কাছে ন্যাশনাল আইডি কার্ড জমা দিলে তারাই অ্যাকাউন্ট খুলে দেন৷ মোবাইল ফোন নম্বরটিই গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট নম্বর৷ থাকে একটি পাসওয়ার্ড৷ এই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই অন্য কোনো মোবাইল ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে পারেন তিনি৷
নগদ টাকা তুলতে মাঝখানে থাকেন একজন এজেন্ট৷ তাঁরা মূলত ছোট ব্যবসায়ী, যাঁরা নিজের দোকান-ঘরেই লাইসেন্স নিয়ে থাকেন ব্যাংকের কাছ থেকে৷ অর্থাৎ মোবাইল ব্যাংকিং মানুষের সময় বাঁচিয়ে দিয়েছে, কমিয়েছে ভোগান্তি৷ এ কারণেই এ পদ্ধতি এত দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে৷তবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ‘মানি লন্ডারিং’সহ জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগওঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক লেনদেন ও অ্যাকাউন্ট খোলায় কিছুটা কড়াকড়ি আরোপ করেছে৷ দিনে এখন ১০ হাজার টাকার বেশি লেনদেন করা যায় না৷ তাছাড়া একবারে পাঁচ হাজার টাকার বেশি লেনদেন করলে গ্রাহকের ছবি লাগে৷ অ্যাকাউন্ট খুলতে লাগে জাতীয় পরিচয়পত্র৷
প্রসঙ্গত মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবাগুলোর মধ্যে অর্থ স্থানান্তর (পিটুপি), নগদ জমা (ক্যাশ ইন) এবং নগদ উত্তোলন (ক্যাশ আউট) সবচেয়ে জনপ্রিয়৷ মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেস ব্যবহার করে বেতন-ভাতা প্রদান, ইউটিলিটি বিল পরিশোধের পরিমাণ বাড়ছে৷ বাড়ছে কেনাকাটাও৷