বিডি মেট্রোনিউজ ॥ সপ্তাহব্যাপী কর্মবিরতির পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় আশ্বস্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতারা কর্মসূচি থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন। অষ্টম বেতন কাঠামোর বৈষম্য নিরসনের দাবিতে আন্দোলনরত ফেডারেশনের নেতারা বলে আসছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হলে জটিলতার অবসান ঘটবে। তবে সেই সুযোগ পাচ্ছেন না তারা।
কর্মবিরতিতে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অচল হয়ে থাকার মধ্যে সোমবার গণভবনে এক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পান শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতারা। অনুষ্ঠানের ফাঁকে তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন শেখ হাসিনা।
সরকার প্রধানের সঙ্গে বৈঠকের পর ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, “উনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। উনি বলেছেন, উনি নিজে বিষয়টা দেখবেন।”
শিক্ষকরা কর্মবিরতি ছেড়ে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
আশ্বস্ত হলে কর্মবিরতি কর্মসূচি কী চলবে- সাংবাদিকরা জানতে চাইলে অধ্যাপক ফরিদ বলেন, এই বিষয়ে ফেডারেশন এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক সমিতিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবেন তারা। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এ এস এম মাকসুদ কামাল সাংবাদিকদের বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে ক্লাস শুরু করতে বলেছেন।
“আগামীকাল (মঙ্গলবার) আমরা সাধারণ সভা করার চেষ্টা করব। ফেডারেশনভুক্ত অন্যান্য শিক্ষক সমিতিও সভা করার চেষ্টা করবে। এরপর আমরা কর্মসূচি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানাব।” তিনি বলেন, “এখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় জড়িত। দেখি কী হয়। আশ্বাসের বিষয়ে শিক্ষকদের জানাব, তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন।”
শিক্ষকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ, জনপ্রশাসন সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদও উপস্থিত ছিলেন।
এক ঘণ্টা ১০ মিনিটের বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন-তৃতীয় গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতির সোপান তৈরি করা হবে, অন্যান্য দাবি ‘যথাযথ’ বিবেচনা করা হবে। শিক্ষকরা বলেছেন-তারা ফোরামে আলোচনা করে যত দ্রুত সম্ভব ক্লাস শুরু করার ব্যবস্থা নেবেন।”
গত মাসে অষ্টম বেতন কাঠামোর গেজেট প্রকাশের পর জোর আন্দোলন শুরু করে আগে থেকে এনিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা। টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করার বিরোধিতা করছিলেন তারা। পাশাপাশি জ্যেষ্ঠ সচিবদের সমান গ্রেডে উন্নীত না হওয়ার সুযোগ না থাকাকে মর্যাদাহানি হিসেবে দেখছিলেন তারা।
শিক্ষকদের দাবি পর্যালোচনায় একটি কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটির সভাপতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠকও করেন। বৈঠকে অর্থমন্ত্রী শিক্ষকদের তিনটি দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও ১০ দিন পর প্রকাশিত গেজেটে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি, অভিযোগ শিক্ষকদের।
এরপর ১১ জানুয়ারি থেকে লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করে ৩৭ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিগুলোর জোট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। ফেডারেশনের সভাপতি ফরিদ বলেন, দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ কামাল বলেন, “বৈঠকে আমাদের সকল দাবি পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে উনার (প্রধানমন্ত্রী) কাছে উপস্থাপন করেছি। উনি বলেছেন, যাতে দ্রুত সমাধান হয়, সেজন্য বিষয়টি তিনি নিজে দেখবেন।”