নিজস্ব প্রতিবেদক: একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইন মারা গেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) মঙ্গলবার ভোরে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তিনি রক্তের জটিলতায় ভুগছিলেন। দুই সপ্তাহ ধরে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। অবস্থার অবনতি হলে সোমবার তাকে সিসিইউতে নেয়া হয়।
রবিউল হুসাইন ১৯৪৩ সালে ঝিনাইদহের শৈলকূপায় জন্মগ্রহণ করেন। কুষ্টিয়া শহরে স্কুল ও কলেজ জীবন শেষে বুয়েট থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
স্থপতি হওয়ার পাশাপাশি ষাটের দশক থেকেই তিনি লেখালেখির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখা ছাড়াও ষাটের দশকের পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রবণ ছোট কাগজে লেখালেখি করতেন। কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস ও শিশুতোষসহ গোটা পঁচিশেক বইয়ের লেখক তিনি। ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৮ সালে একুশে পদক পাওয়া এই কবি কাজ করেছেন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের জন্যও।
তার উল্লেখযোগ্য বই হলো- ‘কী আছে এই অন্ধকারের গভীরে’, ‘আরও ঊনত্রিশটি চাঁদ’, ‘স্থিরবিন্দুর মোহন সংকট’, ‘কর্পূরের ডানাঅলা পাখি’, ‘আমগ্ন কাটাকুটি খেলা’, ‘বিষুবরেখা’, ‘দুর্দান্ত’, ‘অমনিবাস’, ‘কবিতাপুঞ্জ’, ‘স্বপ্নের সাহসী মানুষেরা’, ‘যে নদী রাত্রির’, ‘এইসব নীল অপমান’, ‘অপ্রয়োজনীয় প্রবন্ধ’, ‘দুরন্ত কিশোর’, ‘বাংলাদেশের স্থাপত্য সংস্কৃতি’, ‘নির্বাচিত কবিতা’, ‘গল্পগাথা’, ‘ছড়িয়ে দিলাম ছড়াগুলি’ ইত্যাদি।
বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট, জাতীয় কবিতা পরিষদ, কেন্দ্রীয় কচি কাঁচার মেলা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, বঙ্গবন্ধু জাদুঘর, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র সমালোচক ইত্যাদি সংস্থায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন রবিউল হুসাইন। তিনি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য।
কবির মরদেহ আগামীকাল সাড়ে ১০টায় শহীদ মিনারে নেওয়া হবে এবং দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সর্বস্তরের মানুষ তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, এর আগে সকাল ১০টায় বাংলা একাডেমিতে তাঁর মরদেহ আনা হবে। জোহরের নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজার পর মরদেহ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও স্থপতি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হবে। বিকেলে তাঁর মরদেহ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির ‘সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রদর্শনী আয়োজন উপকমিটি’র সদস্য রবিউল হুসাইনের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ , প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বার্তায় শোক প্রকাশ এবং প্রয়াতের আতœার মাগফিরাত কামনা ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
এছাড়াও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম এবং কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী কবির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ এবং আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
জাতীয় কবিতা পরিষদের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কবী রবিউল হুসাইনের মৃত্যুতে পরিষদের সভাপতি মুহাম্মদ সামাদ ও সাধারণ সম্পাদক কবি তারিক সুজাত গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেলে প্রখ্যাত কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইনের বাসভবনে গিয়ে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। সেখানে কিছু সময় অবস্থান করে তিনি কবির পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান ও সান্ত¦না দেন।