হাবীবুল্লাহ সিরাজী একজন আধুনিক কবি। এসময়ে যার কবিতার অস্তিত্ব চারদিকে ছড়ানো। তবে তার কবিতা অমনোযোগী পাঠের জন্য নয়। এই কবির ৭২তম জন্মদিন আজ।
হাবীবুল্লাহ সিরাজী ষাটের দশকের অন্যতম কবি। পাঠককে চমকে দেয়ার মতো কাব্যমেধা যেমন তার আছে, পাশাপাশি কবিতা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিজের কবিতাকে অনন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে দেয়ার সামর্থ্যও তার মধ্যে অপরিসীম। তার একটি কবিতার পংক্তি এরকম-
কুমিরেরা ভালোবাসে জল। জলের হিমার্ত স্বাদ/ তারা আজীবন পেতে চায়।/মানুষেরা ভালোবাসে ছল। ছলনা মিশিয়ে পথে/কাঁটাতারে তৈরি করে ঘর।/কিন্তু আজ কুমিরে-মানুষে/বড় বেশি গলাগলি ভাব, চরিত্রে-বৈশিষ্ট্যে মিল/উভয়ে বসত করে আধুনিক চিড়িয়াখানায়। (কুমির ও মানুষ ॥ মধ্যরাতে দুলে ওঠে গ্লাস)
তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘দাও বৃক্ষ দাও দিন’। এ কাব্যে ‘জলপরী’ কবিতায় তিনি লিখেছেন-
‘চন্দননগর যাবো’-বলে গেলো উজান পাহাড়/থেকে উড়ে আসা পাখি; মাথায় উড়াল ঝুঁটি, কালো/চোখে ঘর-জল ভাসে থৈ থৈ… আহা সবুজ নায়রী/নরম পালক তুলে লেখে নাম: চন্দননগর! / ‘চন্দননগর যাবো’Ñ ডাকে পাখি, ভাটার নায়র -দেখে নিচে কালো জল, আরো নিচে শাদা জলপরী/বাড়িয়ে দু’বাহু তার বুকের আড়ালে টানে, বলে: /‘ভালো আছি, ভালোবাসা নেবে তুমি আর কতোবার?’
দেশের একজন অগ্রগণ্য কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ৩২। এছাড়া উপন্যাস, শিশুতোষ গ্রন্থ, প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা মিলিয়ে অর্ধ শতাধিক গ্রন্থের লেখক তিনি।
হাবীবুল্লাহ সিরাজীর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- দাও বৃক্ষ দাও দিন, মোমশিল্পের ক্ষয়ক্ষতি,মধ্যরাতে দুলে ওঠে গ্লাশ, নোনা জলে বুনো সংসার, সিংহদরজা, বেদনার চল্লিশ আঙুল, কতো কাছে জলছত্র, কতোদূর চেরাপুঞ্জি, সারিবদ্ধ জ্যোৎস্না, বিপ্লব বসত করে ঘরে, কাদামাখা পা, যমজ প্রণালী।
লেখালেখির জন্য একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। বর্তমানে তিনি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক।
-শাহ মতিন টিপু