সেই মেয়ে ফেসবুকে নেই- প্রেম বিরহের মিষ্টি উপন্যাস

শিউল মনজুর

প্রিয় স্বদেশ ছেড়ে বহুদূরে, পৃথিবীর আরেক প্রান্তে অস্থায়ী নিবাসে গত দুদিনে প্রাণের বন্ধু চঞ্চল শাহরিয়ারের নতুন বই, সেই মেয়ে ফেসবুকে নেই পড়ে শেষ করলাম।

৯৬ পৃষ্ঠার উপন্যাস সেই মেয়ে ফেসবুকে নেই, পড়তে পড়তে মনে হয়েছে আমি নিজেই হারিয়ে গেছি উপন্যাসের প্রেক্ষাপটের ছায়ায়, কখনো কখনো মনে হয়েছে আমি যেনো হেঁটে যাচ্ছি আমারই হারানোর দিনের খন্ড খন্ড জীবনের গল্পে। কি দারুণ দক্ষতায় চঞ্চল সেইসব দিনগুলোকে বিনিসুতোর মালায় গেঁথে পাঠকের সামনে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন, মনে হয় যেনো জীবন্ত পাঠশালার মুক্তঝরানো ছবি।

বইয়ের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় ছড়িয়ে আছে, তারুণ্যের আবেগ অনুভূতি, চাওয়া পাওয়া, প্রেম ভালোবাসা, রাগ অনুরাগের নানা রঙ। আছে বেকারত্বের যন্ত্রণা, আছে সামাজিক জটিলতা, আছে নগর ও ক্যাম্পাস জীবনের নানা চিত্রময় কাব্য। চরিত্র বিশ্লেষণে নেই চর্বিত চর্বণ। নেই অহেতুক ঘটনার প্রেক্ষাপট বর্ণনা। সহজ সরল মনকাড়া বর্ণনার মধ্যদিয়ে এগিয়ে গেছে উপন্যাসের ঘটনা প্রবাহ। পড়তে পড়তে কোথাও হোঁচট খেতে হয় না। কিশোরী মেয়ে, মিতু কিংবা রিয়ার সাথে শুভর সাথে যে সংলাপ বা তাদের সম্পর্কে যে বর্ণনা আমরা পাঠ করি, তা যেনো ঝর্ণার কলকল জলধ্বনির মতো মধুর।

এখানে তার কিছু চুম্বক অংশ উপস্থাপন করছি-

রিয়া আবেগে কেঁপে কেঁপে ওঠে। আমার হাতটা ওর বুকের কাছে নিয়ে বলে পড়াশোনা শেষ করে তোমার ঢাকা যাওয়ার দরকার নেই। চাকরি করারও দরকার নেই। তুমি শুধু এই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে থেকো। আমাকে বুকের ভেতর জড়িয়ে রেখো। তুমি পাশে থাকলে, এক জনমে আর কিছু লাগবে না আমার। (পৃষ্ঠা-৫৮)।

একজন কিশোরী ও একজন যুবকের হৃদয়জ সম্পর্ককে প্রেমঘন বর্ণনার মধ্যদিয়ে লেখক চিরন্তন প্রেমের নান্দনিক চিত্র অংকন করেছেন স্বার্থকভাবে। রিয়া ও শুভ উপন্যাসের দুই প্রধান চরিত্র। তাদের ভালোবাসা ও প্রেম ছিল চূড়ান্ত পর্যায়ের। কিন্তু উপন্যাসের এই প্রেমিক প্রেমিকারা কি শেষ পর্যন্ত সমাজ বাস্তবতার বাধাগুলো পেরিয়ে তাদের কাঙ্খিত লক্ষে কি পৌঁছাতে পেরেছিল?

৯৫ পৃষ্ঠায় উপন্যাসের সেই চুম্বক অংশ এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে-

আমার কান্ডকারখানা দেখে রিয়া হয়তো হেসে একাকার হবে। বলবে, এত উপহার আমি দুহাতে কেমন করে নেব পাগলা? একটা ইজিবাইক ডেকে দাও। ইজিবাইক মানে তো অনাথ দার ইজিবাইক। ইজিবাইকে ওঠার পর রিয়া আমাকে বলবে, তুমিও আমার সঙ্গে আসো। তোমাকে গোপালের সেলুনে নামিয়ে দেব। সেভ করে নাও। তোমার দাড়ি বড় হয়ে গেছে। আমার বিরহে তুমি দেবদাস হয়ে গেছো।

উপন্যাসে রয়েছে আরও কয়েকটি চরিত্র। যে চরিত্রগুলো শুভ ও রিয়ার প্রেম পর্বের আনন্দ বেদনার স্বাক্ষী হয়ে আছে। চঞ্চল শাহরিয়ারের মুগ্ধ ছড়ানো বর্ণনার মধ্যদিয়ে পাঠকরা খুঁজে পাবেন তাদের ব্যক্তি জীবনের বিশেষ অংশের স্বাদ। আমার বিশ্বাস, পাঠকরা এই উপন্যাস পাঠ শেষে বলবেন, সত্যি সেই মেয়ে ফেসবুকে নেই প্রেম বিরহের একটি মিষ্টি উপন্যাস।

চঞ্চল শাহরিয়ার বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ লেখক। তাঁর কবিতা, গল্প ও উপন্যাসের একাধিক বই প্রকাশিত হয়েছে এবং পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছে। লেখালেখির সুবাদে তিনি অসংখ্য পুরস্কারও অর্জন করেছেন। জন্ম ৯মার্চ ১৯৬৬।

জাগৃতি প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত তাঁর এই উপন্যাসটির মনোরম প্রচ্ছদ এঁকেছেন, সানজিদা পারভিন তিন্নী।

চঞ্চল শাহরিয়ার বইটি উৎসর্গ করেছেন, আমাদের খুব কাছের প্রিয় মানুষ প্রিয় কবি তারিক-উল ইসলামকে।

বইটির মূল্য ২২০ টাকা।

sheoul manjur
শিউল মনজুর। মেরীল্যান্ড, আমেরিকা। ফোন; ৩০১ ৫৪৯ ৬৯০৪

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts