মেট্রো নিউজ : রাজধানীর লালমাটিয়ায় অভিজিৎ রায়ের বইয়ের এক প্রকাশকসহ তিনজনকে কুপিয়ে গুরুতর জখমের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নিহত এই লেখকের আরেক প্রকাশককে একই কায়দায় হত্যা করেছে একদল সন্ত্রাসী। নিহত ফয়সল আরেফিন দীপন বাংলার অধ্যাপক ও লেখক আবুল কাসেম ফজলুল হকের একমাত্র ছেলে।তার মালিকানাধীন জাগৃতি প্রকাশনী অভিজিতের ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ নামের জনপ্রিয় বইটি প্রকাশ করেছিল।
এর আগে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট হত্যায় যে উপায় অবলম্বন করা হয়েছিল শনিবারের দুটি হামলার ধরনও একই। লেখক ও অনলাইন কর্মীরা ঘটনার জন্য জঙ্গিদের দায়ী করছে। শনিবার বিকালে আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় নিজের কার্যালয়ে কুপিয়ে মারা হয় দীপনকে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের এডিসি মো. জসিম বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নিজের অফিস থেকে দীপনকে রক্তাক্ত অবস্থায় বের করা হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে দীপন মারা গেছে বলে চিকিৎসকরা জানান।
জাগৃতি প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মো. আলাউদ্দিন বলেন, “বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে অফিসে গিয়ে স্যারকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। তার ঘাড়ে কোপের চিহ্ন ছিল।”
পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, “এ হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত। একাধিক ব্যক্তি এ হত্যায় অংশ নিয়েছিল বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি।”
নিহত দীপন লেখক ফজলুল হকের একমাত্র ছেলে। চল্লিশোর্ধ্ব দীপন ছিলেন দুই ভাই-বোনের মধ্যে বড়।নিহত লেখক অভিজিৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক অজয় রায়ের ছেলে। ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লেখালেখি করতেন অভিজিৎ, তাকে হত্যায় জঙ্গিরা জড়িত বলে পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে।
উদয়ন স্কুলে অভিজিতের সহপাঠী দীপন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে লেখাপড়া করেছেন। তার স্ত্রী একজন চিকিৎসক। তাদের দুই সন্তান রয়েছে। দীপনের উপর হামলার বিষয়টি সন্ধ্যায় জানাজানি হয় বলে আজিজ সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোরসালিন আহমেদ জানান। এর পরপরই মার্কেটের দোকান-পাট বন্ধ হয়ে যায়।
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক জানান, দুপুর দেড়টার দিকে বাসা থেকে বেরিয়ে অফিসে যান দীপন। “বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ওর মোবাইলে কল করলে কেউ রিসিভ করেনি।” ঘণ্টাখানেক পরে আজিজ সুপার মার্কেটে এসে দোকানে ছেলেকে ‘গলাকাটা’ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন এই অধ্যাপক। অভিজিতের বই প্রকাশ করার কারণেই তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন তিনি। “তার সাথে কারও কোনো বিরোধ ছিল না, শত্রুতা ছিল না। অভিজিতের বই প্রকাশ করেছে এমন আরও তিনজনকে মেরেছে। কমনসেন্স বলে তারাই হামলা করেছে,” বলেন তিনি।
এর আগে দুপুর আড়াইটার দিকে লালমাটিয়ায় অভিজিতের বইয়ের আরেক প্রকাশনা সংস্থা শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে ঢুকে এর কর্ণধার আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুলসহ তিনজনকে কুপিয়ে আহত করে সন্ত্রাসীরা। টুটুলের সঙ্গে থাকা ব্লগার তারেক রহিম ও রণদীপম বসুকেও কোপানো হয়। টুটুল ও রহিমের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
অভিজিৎ রায়ের ‘অবিশ্বাসের দর্শন’সহ কয়েকটি বই বের করেছে শুদ্ধস্বর।