যশোর থেকে বৈশাখী পদাবলি

মানুষ আর মানুষের বৈশাখ
গোলাম মোস্তফা মুন্না

উত্তপ্ত আবহাওয়ার মধ্যে হাতে থালা নিয়ে

দাঁড়িয়ে আছি রাস্তায় রাস্তায় মোড়ে মোড়ে
ভুখা, সখা, দুখা সবাই একই সহাবস্থান।

‘ভাত দে, বস্ত্র দে, নইলে গুলি দে’

শ্রমিকের রক্ত মানুষের রক্ত না,
শ্রমিকরা আর মানুষ নয়
শ্রমিকরা বিবেকহীন রোবট।

মানবিকতা-সে তো শূণ্য কোঠরে তুলে থাকা
আলমারির চাবি, যা থাকে কোটিপতির পকেটে।

পেটে দানা পানি নেই, দুষিত বায়ু আর নোংরা পানি
দিনের পর দিন বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল।

তারপরও গাইবো-এসো হে বৈশাখ, এসো এ বৈশাখ।

ভয়ঙ্কর বৈশাখে রঙের আলো
নূরজাহান আরা নীতি

বৈশাখে তুমুল ঝড়ে ঝর ঝর করে
রাত্রির চোখে জল,
ললনা ভুলে গ্যাছে সেদিনের সে সাঁঝ
ঝড় আর তান্ডবে বেনারসির রঙ বিমলিন।
ললিন বুঝেছিল পূর্বাভাস, সাহসের সাথে লড়েছিল
ললনার বিমলিন রঙে-রঙের আলোতে ভরিয়েছিল।
ললনাকে দিয়েছিল মুক্তির বার্তা।

কেন হাওয়ায় মিলিয়ে যায়
কাজী রকিবুল ইসলাম

শরমে মরি এত সমস্যা কিযে করি
আজাদের উন্নতিতেই কি পরিকপ্লিত গাদ্দারি ?
ধর্ষণ, হত্যার বিচার চায় লক্ষ্ লক্ষ্ পুরুষ-নারী
তাহলে কারা করছে আলো- আঁধারি ?
লুকোচুরি ঘোলা পানির কে ঐ শিকারি ?
কেন হাওয়ায় মিলিয়ে যায় ধর্ষক-হত্যকারি ?

এভাবেই দূরে সরে যায়
মুস্তাক মুহাম্মদ

ছেলেবেলাকার খেলার সাথীরা
যারা বিকেল হলেই ছুটে আসতো
খাঁ বাড়ির আমবাগানে; হারায়ে বসেছি তাদের!
এমন করে সব কিছু দূরে সরে যায় বুঝি!!

মা, যে বার বার তাগাদা দিতো
এটা খা-ওটা কর, ওটা করিস্ নে।
যার আঁচল ইন্দ্রজালের মতো বেঁধে রাখতো,
স্বপ্ন দেখতো-আমার আগামির কথা ভেবে
সেও ছাতিমতলে মাটির ঘরে গেছে, কবে-!
সব কিছু এভাবেই দূরে সরে যায় বুঝি!!

দাদা, যার পিঠে ঘোড়া ঘোড়া খেলতাম,
আর রাক্ষুসপুরী রাজকন্যা উদ্ধারের গল্প শুনে
নিজেই রাজকুমার হোয়ে উদ্ধার করার স্বপ্ন দেখতাম
মরণকাঠি-জিয়নকাঠি ছোঁয়ানো অসহায় রাজকন্যাকে
সেও গত হয়েছে কালীতলার দহে!
সব কিছু এভাবেই দূরে সরে যায় বুঝি!!

শশীলতা, কত স্বপ্ন দেখায়েছিলো,
রঙিন ফুলে বর্ণিল প্রজাপতি হোয়ে উড়তে,
জোনাকির আলোয় লুকোচুরি-সাদা জ্যোৎস্নয় ভিজতে,
স্বপ্নের পর স্বপ্নে ভেসে যেতে।
সেও ধরেছে অন্যের হাত!
সব কিছু এভাবেই দূরে সরে যায় বুঝি!!

বর্ষ বরণ
লাবণ্য

এ বছর বন্যায় করল লন্ড ভন্ড
খরায় পুড়ে সারা,
সার, কীটনাশক, বিদ্যুতের দর বেশি
কৃষি পন্যের দাম মন্দা।
বর্ষা গেল কাঁদায় খেয়ে
মশার যন্ত্রনায় ঘর ছাড়া,
শীত গেল কাঁপতে কাঁপতে
বসন্তের হলো না দেখা।
লাঙ্গল জোয়াল হারিয়ে গেছে
ঘোরে ট্রাক্টরের চাকা,
মহাজনের দেনা দিয়ে
কৃষকের ঘর হয় ফাঁকা।
সুদ খোরের সুদের ব্যবসা
অফিসে চলছে ঘুষ,
বৃষ্টিতে ভেজে না রোদে পোড়ে না
চেহারা তার নাদুসনুদুস।

কৃষানি পথ গোনে কৃষক গেছে হাটে
আনবে ইলিশ রান্না শেষে খাবে সবাই বসে,
বাড়ি ফিরে কৃষক বলে বাজার আজ হয়নি করা
মহাজনের দেনা দিয়ে।
এ বছর পার করলাম ঋণের বোঝা দিয়ে
বর্ষবরণ করছি আজ সুখের আশা নিয়ে।

বৈশাখী সাজ
আবুল হাসান তুহিন

চুলে চুলে খোঁপা ফুলে নানা রঙে সাজ,
লাল সাদা শাড়ি পরা মুখে আছে লাজ।

চুরিপরা হাত জুড়ে ছিমছাম মেয়ে,
বৈশাখী মেলাতে আসে সব ধেয়ে,
মন খুলে নেচে গেয়ে প্রাণ ভরি আজ।

দিন ভর হাসিখুশি নেই মনে ভয়,
ঝড়ো মেঘ দুরে যাক দিন আলোময়,
বৈশাখী মাতামাতি নেই কোন কাজ।

এক স্রোতে মিশে যাই সব কিছু ভুলে,
বাঙালি সাজ দেখে মন উঠে দুলে,
পানতা ইলিশে হয় কারুকাজ।

নয় ভুল একচুল বৈষবী দিনে,
হালখাতা খুলে বসি মুক্ত ঋণে,
স্বপ্নের ডালি নিয়ে পরে নেব তাজ।

boisakh-1

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts