আহমেদ সাব্বির রোমিও : জিল্লুর রহমান, একাধারে একজন মঞ্চ, চলচ্চিত্র ও নাট্যাভিনেতা। একজন কৌতুকাভিনেতা হিসেবেও রয়েছে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা। মূলত এই জনপ্রিয়তা আসে হানিফ সংকেত এর ” ইত্যাদি ” ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ।
তার ৪৭ বছরের অভিনয় জীবন সম্পর্কে কম বেশী অনেকের জানা থাকলেও তিনি যে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এটা হয়তো অনেকেই জানেন না ।
১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি বাংলার মাটিকে শত্রু মুক্ত করতে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন । মুজিব বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধার সনদ পেলেও আজো মেলেনি মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্র ! অথচ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি যে সব মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তাদের অনেকেই আজ মুক্তিযোদ্ধার সনদের অধিকারী । প্রশিক্ষক হয়েও মুক্তিযোদ্ধার সনদ না পাওয়ার বেদনাটা তাকে তাড়া করে। এ যেন এক বীর মুক্তিযোদ্ধার অতৃপ্ত বাসনা !
মুক্তিযোদ্ধা সনদ প্রাপ্তির সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবাব পরেও এখনো মেলানি তার মুক্তিযোদ্ধার সনদ । মুক্তিযোদ্ধার সনদ না পেলে দেশ, মাতৃভূমির জন্য জীবনবাজী রাখা এই সংগ্রামী যোদ্ধার মৃত্যুর পরে মিলবে না বীর মুক্তিযােদ্ধা হিসাবে যথাযথ মর্যাদায় রাষ্ট্রীয় পর্যায় দাফন !
রাজধানীর মতিঝিল টিঅ্যান্ডটি কলেজ থেকে এসএসসি, নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স, মাস্টার্স সম্পন্ন করা জিল্লুর রহমানের অভিনয়ের শুরুটা ১৯৭৩ সালে আব্দুস সাত্তারের লেখা ও আতিকুল হক চৌধুরীর নির্দেশনায় ‘রক্তে ভেজা শাপলা’ নাটকে অভিনয়ের মধ্যদিয়ে। এরপর আরো বহু নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি।
নাটকের দল ‘থিয়েটার’-এর সাথেও যুক্ত ছিলেন তিনি পাঁচ বছরেরও বেশি সময়। এই দলের হয়ে তিনি অভিনয় করেছেন ‘স্বপ্নরঙ্গ’, ‘দশভান’সহ আরো বেশকিছু মঞ্চ নাটকে। তবে মঞ্চের চেয়ে তিনি টিভি নাটকে এবং চলচ্চিত্রে অভিনয়েই বেশি সময় দেন। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘বেদের মেয়ে’। এরপর তিনি ‘এপার ওপার’,‘এক মুঠো ভাত’, ‘বাহাদুর’, ‘নাচে নাগিন বাজে বিন’, ‘পাতালপুরীর গল্প’, ‘নরম গরম’, ‘বারুদ’সহ ৫০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ‘এপার ওপার’ চলচ্চিত্রে তিনি প্রধান খলনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন। তবে একসময় এসে কৌতুকাভিনয়ে বেশি ব্যস্ত হয়ে উঠেন। এখন স্টেজ শো’তে কৌতুকাভিনয়ের পাশাপাশি তিনি টিভি নাটকেও নিয়মিত অভিনয় করছেন গুণী এই অভিনেতা।
তার নিজের বেশ কয়েকটি কৌতুকের অ্যালবামও আছে। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘চান্দের দেশে ভাতিজা’,‘রংবাজ ভাতিজা’,‘ হ্যালো জিল্লু’,‘ভাতিজা এখন কোথায়’,‘চাচা ভাতিজা’ ইত্যাদি।
নিজের অভিনয় জীবন প্রসঙ্গে জিল্লুর রহমান বলেন, ‘দর্শকের ভালোবাসা নিয়ে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে শুধু মনপ্রাণ দিয়ে অভিনয়ই করে যাচ্ছি। অভিনয়ই ভীষণ উপভোগ করি। যে কারণে অভিনয়টাই করে গেলাম সারা জীবন। আমৃত্যু অভিনয়ই করে যেতে চাই। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।’
জিল্লুর রহমান অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে রয়েছে আব্দুল্লাহ আল মামুনের ‘সংশপ্তক’, আতিকুল হক চৌধুরীর ‘গোয়ালিনী’,‘ফাঁস’ ইত্যাদি। অভিনয়ের পাশাপাশি ব্যবসাও করেন তিনি। জিল্লুর রহমানের জন্ম নানার বাড়িতে জামালপুরে। তার গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুর।
তার বাবা প্রয়াত খলিলুর রহমান, মা প্রয়াত ফিরোজা বেগম। তার স্ত্রী ডা. মতিয়া কাদরী হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সাবেক কনসালটেন্ট। তার একমাত্র মেয়ে সাদিয়া রহমান এবং মেয়ের স্বামী লেঃ কর্নেল হাজী শমসের উদ্দিন। এই বয়সে এসে জিল্লুর রহমানের আনন্দের সময় কাটে একমাত্র নাতি ইশামের সঙ্গে খেলাধুলা করে।
বতর্মানে তিনি আল হাজেনের ‘অলসপুর’, হাসান জাহাঙ্গীরের ‘চাপাবাজ’ জাবির রাসেলের ‘বিড়ম্বনা’সহ আরো কয়েকটি ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন নিয়মিত।