ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে গানের কপিরাইট প্রসঙ্গে ৯ প্রতিষ্ঠানকে আইনি নোটিশ

শনিবার (২৩ নভেম্বর) বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার এ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) এ বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিজনেস এ্যাডভোকেসি এর স্বত্বাধিকারী ও উপদেষ্টা, মোঃ রিয়াজ সিকদার। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, বিজনেস এ্যাডভোকেসি আইনসেবা প্রতিষ্ঠানের কর্নধার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাজিন আহমেদ।

তিনি বলেন, এই গানের মূল গীতিকার ও সুরকার মরহুম সৈয়দ আসাদউদ্দৌলা শিরাজী বলে রেজিঃ প্রদান করেছে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস। একই সঙ্গে মরহুম সৈয়দ আসাদউদ্দৌলা শিরাজীর উত্তরাধিকারের পক্ষে গানটির কপিরাইট সনদও ইস্যু করা রয়েছে। মরহুম সৈয়দ আসাদউদ্দৌলা শিরাজীকে ‘ডাক দিয়াছে দয়াল আমারে’ গানটির গীতিকার, সুরকার দাবি করে তার উত্তরাধিকার (মেয়ে) সৈয়দা গুলরুখ মহল সিরাজী কপিরাইট রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন দাখিল করেন। এই দাবির পক্ষে তিনি বাংলা ও ১৩৫৪ সাল ( ইংরেজি) প্রকাশিত একটি গ্রন্থ “ঝড়ের বাঁশি”, যেখানে এই গানটি ‘ডাক দিয়াছে দয়াল ওপারে’ নামে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এবং গানটি মাজারে পরিবেশনের একটি ভিডিও ফুটেজ দাখিল করেন।

অন্যদিকে ‘প্রাণ সজনী’ চলচ্চিত্রে প্রয়াত কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোনের কণ্ঠে কথা ও সুর অনেকটাই বিকৃত করে পরিবেশিত হয় গানটি। সে সময় গানটির সুরকার আলম খান এবং এই গানের গীতিকার হিসেবে মনিরুজ্জামান মনিরের নাম লেখা হয়। এমন প্রেক্ষাপটে গানটির প্রকৃত গীতিকার সম্পর্কে মতামত চেয়ে মনিরুজ্জামান মনিরের কাছে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠির জবাবে তিনি জানান- ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’ গানটির গীতিকার হিসেবে তিনি দাবি করেন না।

উল্লিখিত তথ্যপ্রমাণ ও বক্তব্য বিশ্লেষণ করে এটা প্রমাণ হয় যে, গানটির গীতিকার, সুরকার মরহুম সৈয়দ আসাদউদ্দৌলা শিরাজী। সুরের কোন রেকরডেট ভারশান না থাকায় সুরকার এর সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়নি কিন্তু আলম খান কোন ভাবেই এই গানের সুরকার থাকবেন না এই কথা তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়।

এ ছাড়া গানটি ‘প্রাণ সজনী’ চলচ্চিত্রে গীতিকার সুরকার এর অনুমতি ব্যতীত ব্যবহার হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছে কপিরাইট অফিস, যা কপিরাইট আইন অনুযায়ী বৈধ নয়। তাই প্রযোজক কর্তৃক অনুমতি নিয়ে বা ক্রয় করে এই গান অন্যত্র বিক্রি বা রিমেক করার কোনো অধিকার নেই। এমন ক্ষেত্রে গানটি বিক্রি বা রিমেক করতে গীতিকার ও সুরকার এর অবর্তমানে তার উত্তরাধিকারের অনুমতি প্রয়োজন হবে বলে ২০২১ সালেই জানিয়েছে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস। তারা চাইলে এই ভুল ভারশান এর এই গান সকল প্লাটফর্ম থেকে বিলুপ্ত ঘোষনাও করতে পারে।

ওই সময় বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের তৎকালীন রেজিস্ট্রার অব কপিরাইটস জাফর রাজা চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, এই গানটি এখন থেকে ক্রয় বা রিমেক করতে গেলে প্রকৃত গীতিকার, সুরকার এর অবর্তমানে তার উত্তরাধিকারের অনুমতি প্রযোজন হবে। এ ছাড়া ‘প্রাণ সজনী’ চলচ্চিত্রের প্রযোজকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কিনা, তা নির্ভর করবে গীতিকার, সুরকারএর উত্তরাধিকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

তবে অনুমতি ছাড়াই গানটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের অভিযোগে গতকাল রবিবার (১৭ নভেম্বর) মুঠোফোন অপারেটর গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি, এয়ারটেলসহ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জি-সিরিজ, অনুপম ও গান বাংলাসহ মোট ৯ প্রতিষ্ঠানকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’ গানটির গীতিকার সুরকার মরহুম সৈয়দ আসাদউদ্দৌলা শিরাজীর উত্তরসূরি মঞ্জুর – ই – আশেক, যিনি সঙ্গীত পরিচালক/ শিল্পী আশেক মানজু্র হিসেবে পরিচিত তার পক্ষে আইনি নোটিশটি পাঠিয়েছেন “বিজনেস এ্যাডভোকেসি” আইনসেবা প্রতিষ্ঠানের অন্যতম কর্নধার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাজিন আহমেদ। গতকাল ডাকযোগে প্রতিষ্ঠানালোতে আইনি নোটিশ পাঠানো হযেছে।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ডাক দিয়াছে দয়াল ওপারে’ ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হয়। গানটি বাংলাদেশে নিবন্ধিত হয়েছে রেজিস্ট্রেশন নম্বর সিআরএম ২২৫১৯। আমার ক্লায়েন্ট এই গানটির আইনি অধিকার ধারণ করেন। কিন্তু অনুমতি ছাড়াই গানটি রিংটোন, ওয়েলকাম টিউন হিসেবে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু মুঠোফোন ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কেউ যোগাযোগ করেননি। এটি একটি স্পষ্ট কপিরাইট আইন ২০০০ লঙ্ঘন করে। এ জন্য কপিরাইটযুক্ত সামগ্রীর অননুমোদিত ব্যবহার উপযুক্ত লাইসেন্স ছাড়াই মুনাফা বাংলাদেশের আইনে একটি দেওয়ানি অন্যায় এবং ফৌজদারি অপরাধ।

সেখানে আরও বলা হয়েছে, আমার ক্লায়েন্ট আপনাকে অবহিত করার জন্য আমাকে নির্দেশ দিয়েছে যে, যদি না অননুমোদিত ব্যবহার করা হয় তা যেন অবিলম্বে বন্ধ করা হয় এবং এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। একই সঙ্গে গ্রামীণফোনকে দশ কোটি এবং অন্যান্য মুঠোফোন কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানসমূহের কাছে পাঁচ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে। নোটিশটি পাওয়ার পর ১৫ দিনের মধ্যে বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি না করলে আইনি পথে হাঁটবেন বলে জানিয়েছেন মোঃ রিয়াজ সিকদার বিজনেস এডভোকেসি এর স্বত্বাধিকারী ও উপদেষ্টা।

এ সম্পর্কে আইনজীবী রাজিন আহমেদ আরও বলেন, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে জনপ্রিয় এই গানটির প্রকৃত নাম ‘ডাক দিয়াছে দয়াল ওপারে’ এবং এর মূল গীতিকার, সুরকার মরহুম সৈয়দ আসাদউদ্দৌলা শিরাজীকে শুধু তার সৃষ্টিকর্ম থেকে বাদই দেওয়া হয়নি বরং তার সব প্রাপ্ত রাইটস থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। এবং কপিরাইট অফিস থেকে ২০২১ সালে প্রেম রিলিজ এর পরেও কোম্পানি গুলো গীতিকার সুরকার এর নাম টিও পরিবর্তন না করে এই রায় কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন। এক প্রকার অসাধু উপায়ে এই গানটির জনপ্রিয়তা নিয়েও ব্যবসা করা হয়েছে যা সম্পূর্ণ বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক কপিরাইট আইনের ন্যক্কারজনক ঘটনা। এই গানটির সত্যিকারের যে গীতিকার, সুরকার ও আইনিহকদার তাদের সঠিক ন্যায়সঙ্গত ক্ষতিপূরণ এবং সঠিক গীতিকার ও সুরকারকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যেই আইনি নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts