হেফাজত মহাসচিব নূর হোসাইন কাসেমী আর নেই

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রোববার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর প্রেস সচিব মুফতি মুনির আহমেদ বাংলানিউজকে সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এদিকে ইউনাইটেড হাসপাতালের কমিউনিকেশন বিভাগের দায়িত্বে থাকা ডা. সাগুফা আনোয়ার জানান, নূর হোসেন কাসেমী দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে মারা গেছেন।

হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর জানাজার নামাজ সোমবার সকাল ৯টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মাওলানা মুহাম্মদ যুবায়ের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আল্লামা কাসেমী বেফাক বোর্ডেরও কো-চেয়ারম্যান ছিলেন।

গত ১ ডিসেম্বর শ্বাসকষ্টজনিত কারণে অসুস্থতাবোধ করলে তাকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে হঠাৎ শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাৎক্ষণিক তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। নূর হোছাইন কাসেমীর ঠাণ্ডা ও শ্বাসকষ্ট থাকলেও কয়েকদফা করোনা ভাইরাস পরীক্ষায় নেগেটিভ ফলাফল এসেছে বলেও জানান মুনির আহমেদ।

নূর হোছাইন কাসেমী হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনটির ঢাকা মহানগর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। সংগঠনের আমির আল্লামা আহমদ শফির মৃত্যুর পর গত ১৫ নভেম্বর নতুন করে কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে আল্লামা বাবুনগরীকে আমির ও নূর হোছাইন কাসেমীকে মহাসচিব নির্বাচিত করা হয়।

তিনি একাধারে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব, আল হাইআতুল উলয়ার সহ-সভাপতি, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা ঢাকা ও জামিয়া সোবহানিয়া মাহমুদ নগরের শায়খুল হাদিস ও মহাপরিচালক। হেফাজত আন্দোলন, খতমে নবুয়ত আন্দোলনসহ প্রভৃতি আন্দোলনে তিনি নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা পালন করেছেন এবং ইসলামি নেতা হিসেবে মুসলিম জনসাধারণের মাঝে তার পরিচিতি রয়েছে। এছাড়াও তিনি প্রায় ৪৫টি মাদ্রাসা পরিচালনার কাজে যুক্ত রয়েছেন।

নূর হোসাইন কাসেমী ১৯৪৫ সালের ১০ জানুয়ারি কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ থানার চড্ডা নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

বাবার ঐকান্তিক ইচ্ছা ও তার অগাধ প্রতিভার ফলে উচ্চ শিক্ষার জন্য তখন বিশ্ববিখ্যাত বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম দেওবন্দে পাড়ি জমান। কিন্তু ভর্তির নির্ধারিত সময়ে পৌঁছাতে না পারায় সাহারানপুর জেলার বেড়ীতাজপুর মাদ্রাসায় ভর্তি হন তিনি। সেখানে জালালাইন জামাত পড়েন। তারপর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন ও ইলমী পিপাসাকে নিবারণের জন্য ভর্তি হোন দারুল উলুম দেওবন্দ এ। এখানে তৎকালীন সময়ের শ্রেষ্ঠ আলেম আল্লামা ফখরুদ্দীন মুরাদাবাদী  রহ. এর কাছে বুখারী শরীফ পড়েন। মুরাদাবাদী রহ. এর অত্যান্ত কাছের ও স্নেহভাজন হিসেবে তিনি সবার কাছে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। ফলে অল্প সময়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাকমীল জামাত পড়ার পর আরও তিন বছর বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ডিগ্রি অর্জন তিনি।

কর্ম জীবন:

নূর হোসাইন কাসেমী দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে অর্জিত জ্ঞানকে প্রচারের নিমিত্তে তার উস্তাদ মাওলানা আব্দুল আহাদ রহ. এর পরামর্শে হুজ্জাতুল ইসলাম কাসেম নানুতুবী রহ. এর প্রতিষ্ঠিত মুজাফফরনগর শহরে অবস্থিত মুরাদিয়া মাদরাসায় অধ্যাপনার কাজ শুরু করেন। মুরাদিয়া মাদরাসায় এক বছর শিক্ষকতা করার পর মাতৃভূমির টানে ১৯৭৩ সালের শেষ দিকে দেশে ফেরেন।

দেশে এসে সর্বপ্রথম শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার নন্দনসার মুহিউস সুন্নাহ মাদ্রাসায় শায়খুল হাদীস ও মুহতামীম পদে যোগদান করেন। এরপর ১৯৭৮ সালে ঢাকার ফরিদাবাদ মাদ্রাসায় যোগদান করেন।

তিনি ফরিদাবাদে দীর্ঘদিন পর্যন্ত দারুল ইকামার দায়িত্ব পালন করেন। তারপর ১৯৮২ সালে চলে আসেন কাজী মুতাসিম বিল্লাহ রহ. প্রতিষ্ঠিত জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগে। এখানে অত্যান্ত দক্ষতার সাথে তিরমিজি শরীফের দরস দান করেন। এখানে ছয় বছর শিক্ষকতা করার পর ১৯৮৮ সাল থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত অত্যান্ত যোগ্যতা ও মেহনতের সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা এবং ১৯৯৮ সাল থেকে জামিয়া সুবহানিয়ার শায়খুল হাদীস ও মুহতামীমের দায়িত্ব পালন করেন।

রাজনীতি:

১৯৭৫ সালে তিনি জমিয়ত উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৯০ সালে তিনি জমিয়তের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে চলে আসেন এবং ২০১৫ সালের ৭ নভেম্বর তিনি মহাসচিবের দায়িত্ব লাভ করেন।

কাসেমীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলীয় নেতারা। এছাড়া শোক জানিয়েছেন, হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, চরমোনাইর পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম, ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়কারী নজরুল ইসলাম খান ও লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts