বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরব ও অহংকারের দিন। লাখ লাখ বীর মুক্তিযোদ্ধার রক্তস্রোত, স্বামী-সন্তানহারা নারীর অশ্রুধারা, দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা আর বীরাঙ্গনাদের সীমাহীন ত্যাগের বিনিময়ে ৯ মাসের যুদ্ধ শেষে অর্জিত হয়েছিল মহান বিজয়। ৪৯ বছর আগে এই দিনে বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় বাঙালি জাতিকে এনে দিয়েছিল আত্মপরিচয়ের ঠিকানা। কৃতজ্ঞ জাতি সশ্রদ্ধ বেদনায় স্মরণ করেছেন দেশের বীর সন্তানদের।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার সকাল ৬টা ৩৬ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতির পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এ সময় বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গার্ড অব অনার প্রদান করে সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল। নির্বিঘ্নে দিবসটি পালন করার জন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে মোতায়েন করা হয়েছে কয়েক শ সামরিক ও বেসামরিক নিরাপত্তাকর্মী। মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে সুইপিং করা হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়নি।
পর্যায়ক্রমে জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, প্রধান বিচারপতির পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
একে একে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠন, সরকারি-বেসরকারি দফতর, সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকেও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় ৭১ এর বীর শহীদদের।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের জনতার ঢল নেমেছে। স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন তারা।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর একে একে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় স্মৃতিসৌধ। এসময় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব বয়সী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের দেওয়া পুষ্পাঞ্জলির ফুলে ফুলে ভরে ওঠে স্মৃতিসৌধের বেদি। করোনা উপেক্ষা করেই লাখ মানুষের ঢল নামে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে। এবার শ্রদ্ধা জানাতে এসে করোনা থেকে মুক্তি ও অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার প্রত্যয় জানায় সর্বস্তরের মানুষ।
নগরীর কমার্স কলেজ এলাকা থেকে সাভার স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন নাবিল আহমেদ। নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার জন্য পরিবার-পরিজনকে নিয়ে অনেকে সাভার স্মৃতিসৌধে এসেছেন। রাজধানীর মিরপুর পল্লবী থেকে সপরিবারে সাভারে এসেছেন আমিনুল ইসলাম। সাত বছরের বাচ্চা মাহীকে নিয়ে গাজীপুর থেকে এসেছেন নূর নবী আহমেদ।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকে দেশে একদিকে সাম্প্রদায়িকতা, আরেকদিকে অসাম্প্রদায়িকতার দু’টি ধারা চলছে। একদিকে ৪৭ এর চেতনা, অন্যদিকে ৭১ এর চেতনা। বিজয়ের এ দিনে আমাদের শপথ হবে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি যে বিষবৃক্ষ, ডাল-পালা বিস্তার করেছে, সেই বিষবৃক্ষকে সমূলে উৎপাটন করে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রুখে দেওয়ার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ করাই আমাদের অঙ্গীকার। ’
দেশ স্বাধীন হলেও গণতন্ত্রের মুক্তি মেলেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ কথা বলেন।
করোনাকালেও ঢল নামে সর্বস্তরের মানুষের। বিভিন্ন সংগঠনের মধ্য কৃষক লীগ, যুবলীগ, এফবিসিসিআই, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাসদ, বাসদ ও ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন অব ড্যাব ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে।