বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ খ্যাতিমান শিশুসাহিত্যিক ও বিশিষ্ট প্রত্নগবেষক খন্দকার মাহমুদুল হাসান আর নেই। বুধবার (২৮ জানুয়ারি) রাত ১১টা ১০ মিনিটে রাজধানীর গ্রিনলাইফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থা মারা যান তিনি (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। খন্দকার মাহমুদুল হাসান দুই কন্যাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
খন্দকার মাহমুদুল হাসানের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা দেড় শতাধিক। শুধু শিশুসাহিত্যের অর্থাৎ ছোটোদের জন্যে লেখা বইয়ের সংখ্যা একশোর ওপরে। তাঁর সাহিত্য নয়টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ছোটোদের জন্যে রূপকথা, হাসি, অ্যাডভেঞ্চার, গোয়েন্দা কাহিনি, মানবিক বোধ, সায়েন্স ফিকশন, মুক্তিযুদ্ধ, ভয়-ভূত প্রভৃতি বিষয় নিয়ে অসংখ্য গল্প লিখেছেন। শুধু ভূতসমগ্র বইটিতেই আছে তাঁর লেখা প্রায় একশো ভূত ও ভয়ের গল্প।
এছাড়া তিনি লিখেছেন ২৪ টি কিশোর উপন্যাস। বিজ্ঞান, ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব নিয়েও ছোটোদের জন্যে অনেক জ্ঞানমূলক বই লিখেছেন। বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার ছোটোদের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকাগুলোতে তিনি দীর্ঘদিন ধরে লিখে চলেছেন। ২০২০ সালের কলকাতা বইমেলায় ছোটোদের কচিপাতা প্রকাশ করেছে একাধিক ভাষায় অনূদিত তাঁর বিখ্যাত সায়েন্স ফিকশন উপন্যাস ‘আফ্রিকার বিভীষিকা ‘। ‘পোখরার স্বর্ণমূর্তি রহস্য’ও একটি বিখ্যাত বই, যা চারটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
তাঁর লেখা সাতটি বই বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে পুরস্কৃত হয়েছে। বাংলাদেশে পুরস্কৃত তাঁর লেখা ছোটোদের বইগুলোর নাম – ১.সেরা কিশোর গল্প, ২. ভাষা ও বর্ণমালার ইতিহাস, ৩. ইতিহাসের মজার গল্প, ৪.ইতিহাসের সেরা গল্প, ৫.যেমন করে মানুষ এলো। যে দুটি বইয়ের জন্যে তিনি পশ্চিমবঙ্গে সারস্বত সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন সেদুটি হলো ১.বাংলাদেশের পুরাকীর্তি কোষ (প্রাচীন যুগ), ২.বাংলাদেশের পুরাকীর্তি কোষ (মধ্য যুগ)।
দুই বাংলার জনপ্রিয় এই সাহিত্যিক সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ে শিশুসাহিত্যের জন্য শীর্ষস্থানীয় সম্মাননা অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার (১৪০৮ ও ১৪১১ বঙ্গাব্দ) ও এম নুরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার -২০১৪ । এছাড়াও পেয়েছেন বাংলাদেশ সাহিত্য সংঘ সম্মাননা-২০০৮, স্বভাবকবি গোবিন্দচন্দ্ৰ দাস সম্মাননা, গাজীপুর-২০০৯), রকি সাহিত্য পুরস্কার-২০১০, গবেষক আবদুল হক চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার, চট্টগ্রাম-২০১০; সম্মাননা-পেীর মেয়র ও প্যানেল মেয়র-২, বগুড়া-২০১২, সম্মাননা-এগারখান উন্নয়ন ফাউন্ডেশন, যশোর-২০১৬ ।
তিনি বাংলা একাডেমি, এশিয়াটিক সোসাইটি, ইতিহাস সমিতি ও ইতিহাস একাডেমির সদস্য।
১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট মাসের ২৫ তারিখে রংপুর শহরে জন্মগ্রহণ করেন খন্দকার মাহমুদুল হাসান। তার পৈত্রিক নিবাস পাবনা জেলায় । তার বাবার নাম খন্দকার আজমল হক, মায়ের নাম রওশন আরা বেগম । খন্দকার মাহমুদুল হাসান কুষ্টিয়া জিলা স্কুল, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভ করেন।
খন্দকার মাহমুদুল হাসান একজন সার্বক্ষণিক লেখক। সরকারি প্রতিষ্ঠানে নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ।
প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে: ঢাকার পার্ল পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত দুই খণ্ডের ‘বাংলাদেশের পুরাকীর্তি কোষ’, দিব্যপ্রকাশ থেকে দুই খণ্ডে প্রকাশিত ‘প্রথম বাংলাদেশ কোষ’,’বাংলাদেশের স্বাধীনতার নেপথ্য -কাহিনি’, ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত ‘ঢাকা অভিধান’,’চলচ্চিত্র’, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘প্রাচীন বাংলার আশ্চর্য কীর্তি’, কথাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত ‘মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র’,’হিব্রু থেকে ইহুদি’,’ বাংলাসাহিত্যে মুসলিম অবদান’,’যেমন করে মানুষ এলো’,’সেরা কিশোর গল্প’,’কাঠমান্ডুর মূর্তি রহস্য’,’ইতিহাসের সেরা গল্প’ প্রভৃতি তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ।