বিডি মেট্রোনিউজ॥ রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প দেশের অর্থনীতির জন্য কতটা লাভজনক হবে সরকারের মধ্য থেকেই তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। অর্থনীতিতে তা বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
রাশিয়ার ১২ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্যিক ঋণে এ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এই বিশাল অঙ্কের ঋণে দেশের মোট ডেট লায়াবিলিটির পরিমাণ ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়াবে। যা বর্তমানে ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
পরিশোধযোগ্য বার্ষিক ডিএসএল পরিমাণও বেড়ে দাঁড়াবে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মোটা অঙ্কের এই ডেট বারডেন অর্থনীতির উপর চাপ সৃষ্টি করবে বলে আশাঙ্কা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার সভাপতিত্বে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে খোদ অর্থমন্ত্রী এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তিনি অবশ্য একথাও বলেন, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয়, রফতানী আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়লে ঋণের বোঝা ও ডিএসএল পরিশোধ তেমন সমস্যা হবেনা। তেমনটি নাহলে সমস্যা হবে।
রাশিয়া বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধকালে সহযোগিতা ছাড়াও স্বাধীনতার পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনঃর্গঠনে ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে তারা সহযোগিতা দিয়ে আসছে। পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে এই সহযোগিতাও অত্যন্ত বড় মাপের। তারা সহজশর্তে ঋণ দিচ্ছে বলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি পুরোপুরি তা নয়। তাদের ঋণ আটাশ বছরে পরিশোধযোগ্য। কিন্তু সুদের হার দুই শতাংশ, যা আন্তর্জাতিক অপরাপর ঋণদাতা সংস্থার চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি। সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটে প্রদত্ত এ ঋণে সুদের হার প্রচলিত মার্কেট রেট অপেক্ষা ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি।
রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম প্রধান নিউক্লিয়ার এনার্জিতে অভিজ্ঞ দেশ। বিশ্বের প্রায় সাতাশটি দেশে তারা সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটে পারমানবিক চুল্লি সরবরাহ করেছে। তারা বিভিন্ন দেশে মোট ৩৪টি পারমানবিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট নির্মাণ করেছে। কলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে তারা একই ধরনের প্ল্যান্ট নির্মাণ করেছে।
বাংলাদেশে সর্বাধুনিক ভিভিইআর ১২০০ প্রযুক্তির রিঅ্যক্টর ব্যবহার করবে। এ ধরনের উন্নত এবং পাঁচ ধাপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সব দেশে প্রয়োগ করা হয়নি। বাংলাদেশ ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকায় এখানে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হবে। ৮ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হলেও প্লান্টের ক্ষতি হবেনা।
রূপপুরে তারা দুটি প্ল্যান্ট নির্মাণ করবে। প্রতিটির উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ২শ মেগাওয়াট। প্ল্যান্টটি টানা ৫০ বছর উৎপাদনে থাকবে। এরপর কিছু সংস্কার সাপেক্ষে আরও ৩০ বছর প্ল্যান্টটি উৎপাদনে নেয়া যাবে।
রাশিয়া সবচেয়ে বড় সুবিধা দিচ্ছে স্পেন্ট ফুয়েল তারা নিজ দেশে নিয়ে যাবে। পারমানবিক বর্জ্য মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। রাশিয়া এই বর্জ্য নিয়ে সাইবেরিয়ায় বিশ ফুট গভীরে গর্ত করে পুতে রাখবে। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ ৭৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। এ বছরের শেষ নাগাদ নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
রাশিয়া থেকে সকল মেসিনারি, সরঞ্জামাদি আমদানী শুল্কমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে স্থানীয় মুদ্রায় ১ লক্ষ ১ হাজার ২শ কোটি টাকা। প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালে।
এ প্রকল্প দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতির দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী সুরাহায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। দেশে এখন বিদ্যুতের উৎপাদন হচ্ছে ৮ হাজার মেগাওয়াট। বিগত জোট সরকারের সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল মাত্র ৩ হাজার মেগাওয়াট। নতুন বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপনে তদানীস্তন সরকার কোন অর্থই বরাদ্দ করেনি।
বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়ে চলছে। পারমানবিক বিদ্যুৎ, কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং নেপাল, ভূটানে যৌথভাবে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করে সেখান থেকে বাংলাদেশ ৩০ হাজার ম্যাগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ সংগ্রহের ব্যবস্থা করছে। যাতে ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ সংকটে পড়তে না হয় এবং দেশকে অর্থনৈতিকভাবে অগ্রগতির পথে নেয়া সম্ভব নয়।