শোক ও কান্নায় দাফন হলো দীপনের

মেট্রো নিউজ : ১ নভেম্বর বেলা সাড়ে ১১ টা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষক কোয়ার্টারের গাড়ি বারান্দা। কাফনের কাপড় পরে শুয়ে থাকা ফয়সাল আরেফীনকে দেখতে বহু মানুষের ভিড় সেখানে। এত এত মানুষের ভিড় ঠেলে একটা সময় স্বামীর কাছাকাছি পৌঁছাতে পারলেন স্ত্রী রাজিয়া রহমান। বললেন, ‘প্রমিজ করছি, আমি আসব, তুমি তো আমাকে ছাড়া থাকতে পার না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক রাজিয়া রহমান। শনিবার সুফিয়া কামাল হলের কোয়ার্টার থেকে স্বামীকে বিদায় দিয়েছিলেন। কিন্তু স্বামী ফিরলেন লাশ হয়ে। মর্গে সকালে ফয়সাল আরেফীনের ময়নাতদন্ত চলছিল। চিকিৎসকেরা খতিয়ে দেখছিলেন মৃত্যুর কারণ। কটি আঘাত, কোথায়, আঘাতের কতক্ষণ পর মৃত্যু হলো এই সব। আর রাজিয়া-ফয়সাল দম্পতির বড় ছেলে তখন জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা দিতে পরীক্ষার হলে। মৃতদেহ বাড়িতে পৌঁছানোর মিনিট কুড়ি পরে স্বামীকে দেখতে আসেন স্ত্রী রাজিয়া। স্বামী কথার উত্তর আর কোনো দিন দিতে পারবেন না। তবু অনর্গল বলে চলেন রাজিয়া, ‘তুমি তো খালি রাগ করো। দুই দিন পর পর রাগ করো। এই যে সেদিন রাগ করে চলে গেলা। আবার তো আসছ। আমি তো জানি, তুমি আমাকে ছাড়া থাকতে পার না। আমি আসব। বলসিলা না এবার বই মেলার পর বাবা-মা সবাই মিলে আমরা কক্সবাজার বেড়াতে যাব। তুমি আমাকে ছেড়ে কীভাবে থাকবা? আমরা সবাই আসব। প্রমিজ।’

রাজিয়া যখন কথা বলে চলেছেন, তখন ফয়সালের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবুল কাসেম ফজলুল হক ছেলের মৃতদেহের সামনে বসে আছেন চেয়ার নিয়ে। গতকাল শনিবার ছেলের কার্যালয়ের দরজা ভেঙে মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন তিনি। পুলিশ, সাংবাদিকের হাজারো প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। রাত একটা পর্যন্ত ছেলের মরদেহ নিয়ে ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের    মর্গে। সকালে মর্গ থেকে ময়নাতদন্তের পর ছেলেকে সঙ্গে করে বাড়ি ফিরেছেন। একটা সময় ফয়সালের বৃদ্ধা মাও নেমে আসেন। তিনিও এসে বসেন প্রিয় সন্তানের পাশে। কত অভিমান সবার মধ্যে! সব অভিমান যেন ফয়সাল আরেফীনের কাছে। স্বজনদের মধ্য থেকে কেউ একজনকে ধরে ধরে নিয়ে আসা হলো। তিনি কিছুতেই দেখবেন না ফয়সালকে। চিৎকার করে শুধু বললেন, ‘না আমি দীপন ভাই কে দেখব না। আমি কিছুতেই দেখব না ওকে।’

দীপনের দাফন সম্পন্ন : জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফীন দীপনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে রবিবার দুপুর একটা ৪০ মিনিটে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে লাশ আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

পরীক্ষা শেষে বাবার জানাজায় রিদাদ : জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সোজা বাবার জানাজায় অংশ নিতে ছুটে গেল ফয়সল আরেফিন দীপনের বড় ছেলে রিদাদ। উপস্থিত সবার কাছে বাবার জন্য দোয়া চেয়ে বলল, “সবাই আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন। আমার বাবা জান্নাতবাসী হবেন।”

সকালে যখন পরিবারের সদস্যরা লাশ গ্রহণ করতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেছেন, ততক্ষণে পরীক্ষার হলে পরীক্ষা দিচ্ছিল সে। পরে জানাজার জন্য লাশ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী রিদাদের জেএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র পড়েছিল আজিমপুরের পল্টন উচ্চ বিদ্যালয়।

পরীক্ষা শেষে বাবাকে চিরবিদায় জানাতে আজিমপুর থেকে সোজা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ চত্বরে চলে আসে সে।

Print Friendly

Related Posts