এতোদিন কোথায় ছিলেন
শিউল মনজুর ॥ আমাদের সাহিত্যাঙ্গনের সুপরিচিত নাম চঞ্চল শাহরিয়ার। গল্প কবিতা ছড়াসহ সাহিত্যের নানা বিষয়ে প্রতিনিয়ত লিখে যাচ্ছেন পত্র-পত্রিকায়। যে কারণে তার পরিচিতিটাও বেশ । তবে তিনি কবি ও গল্পকার হিসেবে আমাদের নিকট চিহিৃত হয়ে আছেন। তিনি যেমন কবিতা অসাধারণ দক্ষতায় লিখেন তেমনি গল্পও নাটকীয় ঢঙে লিখে আমাদেরকে চমৎকৃত করেন।
এবার তার ১২টি গল্প নিয়ে এতোদিন কোথায় ছিলেন বইটি ২০১৬ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে। এই ১২টি গল্পের ভেতর দিয়ে চঞ্চল চিরন্তন প্রেমের বিষয়টি তুলে আনলেও এসব গল্পের মধ্যে আমাদের জীবন জটিলতার নানাধিক বর্ণিত হয়েছে এবং গল্পের যে ক্যানভাস অর্থ্যাৎ তরুণ-তরুণীদের মিষ্টি প্রেম তা যে ধর্ম, অর্থনীতি ও সামাজিক সুতোয় দুলতে দুলতে মোহনায় আসার আগেই নানা শাখায় বিভক্ত হয়ে দূরের দিগন্তে হারিয়ে যায়, তাই তিনি গল্পের মধ্যে অংকন করেছেন। এখানে তার একটি গল্পের চুম্বক অংশ উপস্থাপন করা হলো;
‘ছোট খালার চোখ ছানাবড়া। খালু অন্যদিকে মুখ ঘুরালো। খালা আরেফিনের কান টেনে বলল, আমি কত শখ করে ঈদে তোকে মোবাইল গিফট করলাম, আর তুই ওটা অথৈকে দিয়ে দিলি?
ছোট খালা কেঁদে ফেলল।
অথৈ রাগী চোখে আরেফিনের দিকে তাকাল। হ্যান্ডব্যাগ থেকে মোবাইল ফোনটা বের করে আরেফিনের হাতে দিয়ে বলল, মিথ্যবাদী রাখাল। এভাবে একদিন সব কিছু হারাবে। আমাকেও…।’ (গল্পের শিরোনাম: মিথ্যাবাদী রাখাল, পৃষ্টা-২৯)
আমরা এই গল্পের অংশে প্রাত্যহিক জীবন যন্ত্রণার চিত্র প্রত্যক্ষ করি। চঞ্চলের বর্ণনাটাও সাবলীল ও আকর্ষণীয়। পাঠককে গল্পের ভেতর নিয়ে যায়। এখানেই তো গল্পকারের স্বার্থকতা।
এতোদিন কোথায় ছিলেন বইটির প্রতিটি গল্পে মেলোডি গানের সুর, নাটকীয়তা এবং তরুণ-তরুণীদের প্রিয় গণমাধ্যম ফেসবুকের রঙিন ভাষা গল্পগুলোকে ঝলমল করে তুলেছে। যে কারণে গল্পগুলি পাঠ করতে করতে পাঠকের বিন্দুমাত্র বিরক্তির উদ্রেক হয় না।
এক কথায় বলা যায়, রঙিন চশমা পরে এক নিঃশ্বাসে গল্পগুলো পড়ে শেষ করা যায়।
এতোদিন কোথায় ছিলেন বইটির নান্দনিক প্রচ্ছদ এঁকেছেন নিয়াজ চৌধুরী তুলি। ৪৮ পৃষ্টার পরিচ্ছন্ন ছাপা ও মজবুত বাঁধাই করা এই বইয়ের মূল্য রাখা হয়েছে ১৩৫টাকা।
চঞ্চল শাহরিয়ারের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৬। অসংখ্য পুরস্কারও পেয়েছেন। বাংলা একাডেমির সদস্য চঞ্চল শাহরিয়ার লেখালেখির মাধ্যমে যে আরো অনেকদূর এগিয়ে যাবেন, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
লেখক কবি ও কথাসাহিত্যিক