রেজাউল করিম: গাজীপুরেও রয়েছে চা বাগান। তবে এই চা বাগান বিখ্যাত হয়েছে সুস্বাদু মাঠার জন্য। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠাপ্রেমিদের ভিড়ে জমজমাট থাকে এই চা বাগান বাজার।
গাজীপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে তুরাগ নদের পাড়ে এই চা বাগান বাজার। এখানে রয়েছে সারিবদ্ধ ২৫টি মাঠাঘর। এই ২৫টি মাঠাঘরে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার গ্লাস মাঠা বিক্রি হয়। হিসাবে প্রতিদিনের বিক্রির পরিমাণ প্রায় ৩ লাখ টাকা। মাস শেষে যা দাঁড়ায় প্রায় কোটি টাকায়। এতে এই এলাকার কিছু মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হয়েছেন।
১৯৯৯ সালে ‘মুন্না মাঠাঘর’ প্রথম এখানে মাঠা বিক্রি শুরু করে। এরপর ‘চা বাগান মাঠাঘর’, ‘তোয়া মাঠা ঘর’, ‘জান্নাত মাঠা ঘর’, ‘তামজিদ মাঠাঘর’, ‘মাসুদ মাঠাঘর’, ‘লোকমান মাঠাঘর’, ‘শাহীন মাঠাঘর’, ‘আনোয়ার মাঠাঘর’সহ মোট ২৫টি মাঠাঘর এই চা বাগান বাজারে।
খাঁটি দুধ, দই, ঠাণ্ডা পানি আর লবনের মিশ্রণে তৈরি হয় এখানকার মাঠা। ভেজালমুক্ত এবং সুস্বাদু হওয়ার প্রতিদিন ঢাকা, ময়মনসিংহ ও গাজীপুরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ এখানে মাঠা খাওয়ার জন্য আসেন। খাওয়া শেষে সবাই কমবেশি পরিবারের জন্য মাঠা নিয়ে যান। এদিকে মাঠার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠছে নতুন নতুন মাঠাঘর।
এখানে মাঠা খেতে আসা জেসমিন আক্তার বলেন, আমরা রামপুরা ঢাকা থেকে এসেছি। সত্যি বলতে আমরা প্রতিবছর এখানে মাঠা খেতে আসি। এখানকার মাঠার স্বাদ অন্য কোথাও পাইনা। আমাদের কথা শুনে ঢাকা থেকে আরও অনেকেই এসেছেন এখানে।
গাজীপুর শহর থেকে আসা শিক্ষার্থী হিমেল বলেন, আমরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ১০ বন্ধু এখানে মাঠা খাওয়ার জন্য এসেছি। অনেকদিন ধরে শুনে আসছি এখানকার মাঠা খুবই সুস্বাদু। সেজন্যই মূলত আসা৷ খাওয়ার পরে বুঝলাম আসলেই অন্যান্য সব যায়গা থেকে এখানকার মাঠা বেস্ট।
তোয়া মাঠাঘরের মালিক তায়েব উল্লাহ বলেন, এটি চা বাগানের ঐতিহ্যবাহী মাঠাঘর। বিভিন্ন এলাকার মানুষ এখানে মাঠা খেতে আসেন। আমি ২১ বছর ধরে মাঠা বিক্রি করছি। প্রতিদিন আমি ৫ থেকে ৭ হাজার টাকার মাঠা বিক্রি করি।
জান্নাত মাঠাঘরের মালিক বলেন, দইয়ের যে উপাদান আছে সেগুলো দিয়েই আমরা মাঠা তৈরি করি। এছাড়াও অন্য উপকরণ দিয়েও মাঠা বানানো যায়। কেউ কলা, আইসক্রিম, কাঁচামরিচ, জুস দিয়ে খেয়ে থাকেন। সারাবছর এখানে মাঠা বিক্রি হয় তবে গরমকালে বেশি বিক্রি হয়। আমার দোকানে প্রতিদিন ২০ হাজার টাকার মাঠা বিক্রি হয়।
চা বাগান বাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান বলেন, দূরদূরান্ত থেকে যারা এখানে মাঠা খেতে আসেন আমরা বাজার কমিটি তাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। আমরা মাঠা ব্যবসায়ীদের নিয়ে প্রতি সপ্তাহে একবার বসে ব্রিফিং দেই, যাতে কোন রকম ভেজাল কিছু মাঠার সাথে মিশাইতে না পারে। এবং তারা সেভাবেই কাজ করেন বলেই আমাদের চা বাগানের মাঠাঘরের সুনাম অক্ষুণ্ণ রয়েছে।