রুবেল মজুমদার: ৫০ বছরের পুরোনো মাটির ঘরে নানা রঙের আল্পনায় দেওয়া হয়েছে নতুন রূপ। চৌচালা ঘরটি পূর্ণ নানা পুরনো উপকরণে। হারিয়ে যাওয়া পুরনো ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে ভবনটিকে রূপান্তর করা হয়েছে ব্যতিক্রম এক জাদুঘরে।
কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার সীমান্তবর্তী রামধনপুর গ্রাম, এখানেই দেখা মিলবে ভিন্নধর্মী রামধনপুর শিক্ষা জাদুঘরের। অর্ধশতবর্ষী পুরোনো মাটির স্কুল ভবনকে রূপান্তরিত করা হয়েছে শিক্ষা যাদুঘরে।
স্থানীয়দের থেকে জানা যায়, বাঁশের বেড়া ও ছনের ছাউনি দিয়ে তৈরি ঘর নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালে রামধনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ১৯৭৩ সালে নির্মাণ করা হয় মাটির ভবন। ১৯৯৪ সালে নতুন ভবন নির্মাণ হওয়া পর্যন্ত মাটির এই ঘরেই চলতো পাঠদান। এরপর হতে পরিত্যক্ত থাকলে চলতি মাসে এখানে চালু করা হয় জাদুঘর।
সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, রামধনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উঠেছে পাকা দুইটি ভবন। তার পাশেই চৌচালা এই মাটির ভবন। নতুন করে প্রলেপ দিয়ে আল্পনা করে ঘরটিকে দেওয়া হয়েছে নতুন রূপ। মাটির এই ভবনে ঢুকতেই চোখে পড়বে কয়েক দশক আগের বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ।
মাটির ভবনে প্রতিষ্ঠিত এ জাদুঘরে উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান শিক্ষার নানা উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। জাদুঘরটিতে প্রদর্শিত হচ্ছে পুরনো আমলের বই, ফাউন্টেন পেন, টাইপ রাইটার, ছাপা মেশিন, দোয়াত, কুপি, হারিকেন, আলমিরা, পুরোনো মুদ্রা, ক্যামেরাসহ নানা শিক্ষা উপকরণ।
জাদুঘরটিতে ঘুরতে আসা ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা বলছেন, এখানে এসে নানা অচেনা জিনিস তারা দেখছেন, জানতে পারছেন ইতিহাসের নানা অজানা দিক সম্পর্কে।
ইশরাত জাহান নামের এক ক্ষুদে শিক্ষার্থী বলেন, এই জাদুঘরটিতে আমরা অতীতের অনেক উপকরণ দেখেছি যা এখন আর দেখা যায় না। এতে আমরা অনেক কিছু জানতে-শিখতে পেরেছি।
সামিউল হাসান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, জাদুঘরটি আমাদের জ্ঞানের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করছে। পুরোনো আমলের মুদ্রা, ক্যামেরা, টাইপ রাইটার অনেক কিছুই এখানে আছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন স্কুলটির সাথে জড়িয়ে রয়েছে স্বাধীনতাকালীন সময়ের স্মৃতি। স্থানীয় কালাম মিয়া বলেন, এই স্কুলটির সাথে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। আমাদের অঞ্চলের স্কুলে শিক্ষা জাদুঘর হয়েছে এতে আমরা আনন্দিত।
জাদুঘরের উদ্যোক্তা সদর দক্ষিণ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শুভাশিস ঘোষ বলেন, অতীতকে যাতে আমাদের এই প্রজন্ম ভুলে না যায় সেই চেতনা থেকে জাদুঘরটি তৈরি করা। নতুন প্রজন্মের সামনে ইতিহাস তুলে ধরাই আমাদের লক্ষ্য।