দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ তৃতীয়বারের মতো বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) সম্মাননা পেলেন জেএমআই গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুর রাজ্জাক।
রোববার (২৫ জুন) বিকেলে রাজধানীর হোটেল প্যান-প্যাসিফিক সোনারগাঁও ঢাকায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত সিআইপি (রপ্তানি ও ট্রেড)- ২০২১ কার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির হাত থেকে সিআইপি সম্মাননা গ্রহণ করেন তিনি। এর আগেও দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখায় মো. আবদুর রাজ্জাক শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০১৫ এবং ২০১৭ সালে “সিআইপি” মর্যাদা লাভ করেন।
দেশের ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম খাতের অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান জেএমআই গ্রুপ। ১৯৯৯ সালে এই শিল্পগ্রুপের যাত্রা শুরু হয় মো. আবদুর রাজ্জাকের হাত ধরে। জেএমআই গ্রুপের অধীনে বর্তমানে ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম উৎপাদন, বিপণন, স্বাস্থ্যসেবা, আবাসন, মুদ্রণ, শিল্পজাত গ্যাস, এলপিজি, এলপিজি সিলিন্ডার ও অটো ট্যাংক তৈরিসহ নানা খাতে মোট ৪২টি শিল্প-প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে দুইটি প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। প্রায় ২৫ বছরের দীর্ঘ যাত্রায় জেএমআই গ্রুপের এসব প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ পেরিয়েছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, তুরস্ক ও চীন থেকে এসেছে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) হিসেবে।
জেএমআই গ্রুপের যাত্রার শুরুতে মাত্র ৫০ জন কর্মী ছিল, যেখানে বর্তমানে মোট কর্মী সংখ্যা সাড়ে আট হাজার ছাড়িয়েছে। এই শিল্পগোষ্ঠীর বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় বর্তমানে ৪০০ টিরও বেশি ধরণের চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং স্বাস্থ্যসেবা পণ্য উৎপাদন হচ্ছে, যার মধ্যে অন্তত ৫০ টিই বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রস্তুতকৃত। উৎপাদিত পণ্য নিয়মিত রপ্তানি হচ্ছে এশিয়া, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ আমেরিকা এবং আফ্রিকাসহ বিশ্বের ৪০ টিরও বেশি দেশে।
দুই দশকের যাত্রায়, দেশ ও মানুষের সেবায় কাজ করে জেএমআই গ্রুপ ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যসেবা খাতে সেরার মুকুট পরে নিয়েছে। জেএমআই গ্রুপের ব্যবসার মূলমন্ত্র হচ্ছে, মানের ব্যাপারে সর্বদা আপোষহীন থাকা। আর এ কারণেই দেশ-বিদেশের একটি বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড জেএমআই গ্রুপ। দেশে করোনাকালে ভয়াবহ মানবিক সংকটের সময়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে জেএমআই গ্রুপ। করোনা মোকাবেলায় সরকারের সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিল এই শিল্পগ্রুপটি। চীনে করোনা ছড়িয়ে পড়লে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সুরক্ষাসামগ্রী পাঠানো হয়। সেসময় সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে জেএমআই গ্রুপ অত্যন্ত দ্রুততার সাথে ১৩ লাখ পিস মানসম্মত গ্লোভস সরবরাহ করে, যা চীন তথা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে।
মো. আবদুর রাজ্জাক যে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ২০২১ সালের সিআইপি সম্মাননা পেলেন, সেটি জাপান বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের একটি প্রতিষ্ঠান, নিপ্রো-জেএমআই কোম্পানি লিমিটেড। শতভাগ রপ্তানিমুখী এই প্রতিষ্ঠানে কিডনি রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহৃত ব্লাড টিউবিং সেট উৎপাদন হয়, যে সক্ষমতা দেশের আর কারও নেই। দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় সম্প্রতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য জাতীয় রপ্তানি ট্রফি অর্জন করেছে নিপ্রো-জেএমআই কোম্পানি লিমিটেড।
মো. আবদুর রাজ্জাক বর্তমানে বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির কার্যকরী কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর মেডিকেল ডিভাইসেস এন্ড সার্জিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টারস-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক, জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ-এর সদস্য, কোরিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ-এর সদস্য, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ-এর সদস্য, এবং রিয়েল এস্টেট হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)-এর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মো. আবদুর রাজ্জাক ১৯৬৪ সালে নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলার আজিজপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মৃত মো. শফিউল্লাহ এবং মাতা মৃত আনোয়ারা বেগম। ১৯৮৯ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন মো. আবদুর রাজ্জাক।