নতুন ধরণের পরিবর্তনের জন্য সংগ্রাম করবেন রব

বিডিমেট্রোনিউজ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সভার রাজনেতিক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জেএসডি দেশের রাজনীতিতে নতুন ধরণের পরিবর্তনের জন্য সংগ্রাম করবে। এর জন্য দেশের সকল দুরাবস্থার জন্য দায়ী প্রথম ধারার রাজনীতির বিপরীতে দ্বিতীয় ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এর জন্য দেশে ৯টি প্রদেশ, দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠন করে সেখান থেকে নির্বাচনকালীন অন্তবর্তী সরকারের বিধান করতে করে অবিলম্বে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে।
সভায় সমাগ্রিক প্রস্তাবে বলা হয় :

১. দেশের রাজনীতিতে আজ এক অস্বাভাবিক, অস্বস্তিকর ও হিংসাত্মক পরিবেশ বিরাজ করছে। সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংস নির্বাচনের মাধ্যমে যেভাবে ভোট ডাকাতি ও মানুষ খুন হয়েছে তাতে ভবিষ্যতে জাতীয় নির্বাচনসহ সব ধরণের অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে। জনগনের ভোটাধিকার, মৌলিক মানবাধিকার, অবাধ রাজনৈতিক কর্মকান্ড করার অধিকার, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সব কিছুই সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রন হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন শুধু দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। মেরুদন্ডবিহীন এই নির্বাচন কমিশন দিয়ে দেশে কখনো অবাধ, সুষ্ট ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।

২. প্রস্তাবে বলা হয়, ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হলেও স্বাধীন দেশের উপযোগী রাজনীতি , রাষ্ট্র-প্রশাসন গড়ে তোলা এবং আইন-কানুন ও সংবিধান প্রণীত হয়নি। এতে দেশ স্বাধীন হলেও জনগন মুক্তি পায়নি। তারা নতুনভাবে এক ধরনের পরাধীনতার শৃংখলে আবদ্ধ হয়ে পড়ে, যাকে অভ্যন্তরীণ উপনিবেশবাদ হিসাবে আখ্যায়িত করা যায়। দেশে দুই বৃহত্তর জোটের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব থাকলেও উভয়েই উপনিবেশিক ধাঁচের রাজনীতি, রাষ্ট্র-ব্যবস্থাপনা ও সংবিধান টিকিয়ে রাখতে চায়। যার ফলে বার বার গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক রাজনীতি ব্যাহত হচ্ছে।

বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরনের জন্য প্রয়োজন :

৩. ক) সকল রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ক্ষমতার কার্যকর বিকেন্দ্রীকরন এবং অংশীদারিত্বমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও জঙ্গীবাদ নির্মুলের উপযোগী কর্মসুচী প্রণয়ন করা যা ‘জাতীয় সনদ’ হিসেবে গৃহীত হতে পারে।

খ) পার্লামেন্টের উচ্চ-কক্ষ গঠন করে সেখান থেকে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের বিধান করে অবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। তা নাহলে দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও সহিংসতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে।

গ) দেশকে অভ্যন্তরীণ পরাধীনতা সহ দুই জোটের অসুস্থ রাজনীতি থেকে মুক্ত করার জন্য প্রচলিত উপনিবেশিক ধাঁচের রাজনীতি ও রাষ্ট্র-ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন করা এবং দেশকে ৯টি প্রদেশে বিভক্ত করা অতীব জরুরী হয়ে দেখা দিয়েছে। বর্তমান আইন-কানুন ও সংবিধান বৃটিশ উপনিবেশিক ধারার আদলে গড়ে উঠার ফলে দেশের ব্যাপক জনগণের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে না। মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা তার কোন প্রতিফলন নেই। বড় দুই দলই শুধু যে কোনভাবেই ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নেতিবাচক কর্মকান্ডে লিপ্ত।

৪. প্রস্তাবে বলা হয়, গতকাল অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য যে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছেন তাতে ঋণখেলাপী, কালোবাজারী ও কালো টাকার মালিকদের স্বার্থের প্রতি বেশী নজর দেয়া হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক খাতে বরাদ্দের হার অনেক কমানো হয়েছে। অনেক মেঘা প্রকল্পে জনগণের অর্থনৈতিক স্বার্থের চেয়ে রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্য অনেক বেশী প্রাধান্য পেয়েছে। ব্যাপক জনগণের স্বার্থকে উপেক্ষা করা হয়েছে।

৫. দেশে বর্তমানে দুই কোটি বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের কর্যকর কোন পরিকল্পনা জাতীয় বাজেটে নেই। ২০২০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ছয় কোটিতে দাঁড়াবে। এদের কর্মসংস্থানের জন্য উপজেলা ভিত্তিক শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলতে হবে এবং উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোট গঠন করতে হবে।

৬. যতক্ষণ পর্যন্ত এই উপনিবেশিক কাঠামো বিদ্যমান থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই রাজনৈতিক ধারার পুনরাবৃত্তি ঘটবে। সেজন্য আজ বিদ্যমান দুই জোটের অপরাজনীতির বিপরীতে দ্বিতীয় রাজনৈতিক ধারার ভিত্তিতে ‘তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি’ গড়ে তুলতে হবে।

আজ সকাল ১০ টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে (৬৫ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ৪র্থ তলা) জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন দলের সাধারন সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, এম এ গোফরান, আতাউল করিম ফারুক, মিসেস তানিয়া ফেরদৌসী, সোহরাব হোসেন, খোশ লেহাজ হোসেন খোকা, বাবু আশীষ কুমার সরকার, মোসাররফ হোসেন প্রমুখ ।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts