বদলে গেছে কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে ভোটের মাঠ চিত্র। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিনের অনড় অবস্থানের কারণে জাসদের নেতা-কর্মীরা হতাশ। কামারুল শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকলে নির্বাচনের ফলাফল কি হবে তা নিয়ে আগেভাগেই নানা সমীকরণ শুরু হয়েছে।
বিশেষ করে ভেড়ামারায় জাসদ কিছুটা সক্রিয় থাকলেও মিরপুরে ঝিমিয়ে পড়েছে। বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে বিক্ষিপ্ত কিছু সভা-সমাবেশ করলেও জাসদ ভোটের মাঠে বেকায়দায় পড়েছে। ভোটের মাঠে মূল ভূমিকা রাখা কামারুল আরেফিন নিজেই প্রার্থী হওয়ায় জাসদের প্রার্থী হাসানুল হক ইনুর এখন ঘুম হারাম। তিনি কামারুলকে নিয়ে এখন বিপদে রয়েছেন।
স্থানীয় দুই দলের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিগত তিনটি নির্বাচনে কামারুল নৌকাকে জেতাতে বড় ভূমিকা রাখেন। তার সকল কর্মী সমর্থকরা ইনুর পক্ষে কাজ করেন। এবার তার সমর্থকরা বলছেন, তারা আর জাসদের হয়ে ভাড়া খাটবেন না, নিজেদের প্রার্থীর জন্য কাজ করবেন।
মিরপুর উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক আহম্মেদ আলী বলেন, ‘কামারুল স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার কারণে নেতা-কর্মীদের মাঝে কিছুটা সংশয় কাজ করছে। বিষয়টির সমাধান না হলে কি হবে সেটা বলা মুশকিল। আমরাও বিষয়টি নিয়ে ভাবছি কিভাবে এর সমাধান হবে। বিগত তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের হাসানুল হক ইনুর পক্ষে মাঠে নামার নির্দেশনা থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বসিয়ে দেওয়ার বিষয়ে এবার কোন নির্দেশনা নেই। আর সরকারের পক্ষ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে অনড় অবস্থান বজাই রাখার ইঙ্গিত দেওয়ার ফলে কুষ্টিয়া-২ আসনে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ানো নিয়ে কোনো টেনশন না থাকায় ফুরফুরে মেজাজে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিন। তিনি প্রতিদিন বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের প্রতিবাদ জানিয়ে শান্তি সমাবেশ ও উন্নয়ন তুলে ধরছেন। এতে সব পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত থাকছেন। এছাড়া জাসদের সাবেক কয়েকজন চেয়ারম্যান ও পদে নেই এমন নেতা-কর্মীদের অনেকেই কামারুলের পক্ষে অবস্থান নিতে শুরু করেছে।
গত মঙ্গলবার বিকেলে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নে এক শান্তি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নেতা-কর্মীরা। সেখানে স্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতা বলেন, ‘আমরা বিগত ১৫ বছর ধরে জাসদের হয়ে ভাড়া খেটেছি। নির্বাচিত হয়ে ইনু সাহেব ও তার কয়েকজন নেতা সব সুবিধা ভোগ করেছেন। আমাদের সংগঠন দুর্বল করার চেষ্টা হয়েছে। আমরা এবার আর ভাড়া খাটতে রাজী নই। এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুলকে জয়ী করতে যা করার তাই করবে দলের কর্মীরা।’
মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হালিম বলেন, ‘আমাদের প্রার্থী কামারুল আরেফিন। তার জন্য দলের নেতা-কর্মীরা এক হয়ে কাজ করবে। আমরা কারো পক্ষে আর ভাড়া খাটতে রাজী নই। আমাদের সংগঠন বাঁচাতে হলে নিজেদের এমপি প্রয়োজন।’
জাসদের মুল ঘাঁটি ভেড়ামারা উপজেলার চাঁদগ্রামেও কামারুল বড় শান্তি সমাবেশ করে তার উত্থানের বিষয়টি জানান দিয়েছেন। দুটি উপজেলাতেই ভোটের মাঠ গরম হয়ে উঠেছে। কামারুলকে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের অবস্থান পরিস্কার করার পর থেকে জাসদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তারা এখন কামারুলকে ম্যানেজের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছে।
জেলা জাসদ সভাপতি গোলাম মহসিন বলেন, ‘হাসানুল হক ইনু ১৪ দলের প্রার্থী হয়ে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন। এবারো নৌকার নেতা-কর্মীরা তার পক্ষে কাজ করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল সক্রিয় থাকায় নেতা-কর্মীদের মাঝে অন্য রকম বার্তা যাচ্ছে।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিন বলেন, ‘আমি ফুরফুরে মেজাজে আছি। শুধু আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা নয় সাধারণ মানুষ আমাকে ভালবাসে, এটা দুই উপজেলার মানুষ আরেকবার প্রমাণ করেছেন। আমি তাদের ভালবাসার প্রতিদান দিতে চাই। নির্বাচনে আমার ওপর কোন চাপ নেই, বরং সকলে উৎসাহ দিচ্ছেন। ইনি (হাসানুল হক ইনু) জাতীয় নেতা, নৌকা প্রতীক নিয়ে উনি নির্বাচন করবেন, আমিও জনতার নেতা হয়ে মাঠে থাকব।’
উল্লেখ্য, এই আসনে জোটের প্রার্থী হিসেবে ইনু নৌকা প্রতীক পেয়েছেন। এখানে কামারুল আরেফিন ছাড়াও আরো ৯জন প্রার্থী মাঠে রয়েছেন।