রেজাউল করিম: মরিচ মানেই ঝাল। মরিচ আবার মিষ্টি হয় কি করে। এর উত্তর মিলবে যদি আপনি চট্টগ্রামের হাটহাজারীর মরিচ সম্পর্কে জানেন।
দেশজুড়েই হাটহাজারীর এই মরিচের খ্যাতি। এই মরিচ অন্যান্য মরিচের চেয়ে বড় আকৃতির এবং দামও অন্যসব মরিচের চেয়ে বেশি।
হাটহাজারী, ফটিকছড়ি এবং রাউজান উপজেলার উপর দিয়ে প্রবহমান হালদা নদীর তীরে এই মরিচের চাষাবাদ হলেও এর নাম-হাটহাজারীর মরিচ। আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে হালদা তীরে চাষ হওয়া নতুন মরিচ বাজারে উঠতে শুরু করেছে।
হাটহাজারী উপজেলার কাটিরহাট এলাকার বাসিন্দা মো. মোবারক হোসেন দুই দশক ধরে এই মরিচ চাষ করেন। এই মরিচের বৈশিষ্ট সম্পর্কে মোবারক হোসেন বলেন, হাটহাজারীর মরিচ অতিরিক্ত ঝাল নয়। তাই এই মরিচকে অনেকেই মিষ্টি মরিচ বলে থাকেন। হালদা তীরে চাষ হওয়া এই মরিচের রঙ সুন্দর এবং রান্নায় অল্প মরিচ ব্যবহারেই তরকারির চমৎকার কালার আসে, খাবার হয় সুস্বাদু। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানির গরুর মাংসের স্বাদ ও ন্যাচারাল কালারের জন্য বাবুর্চিরা হাটহাজারীর মরিচকেই প্রাধান্য দেন।
জামাল উদ্দিন নামের অপর এক মরিচ চাষি বলেন, বৈশাখ মাসের শুরু থেকেই ক্ষেত থেকে উত্তোলন শুরু হয়েছে হাটহাজারীর মরিচ। চলবে পুরো জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত। আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এই মরিচের চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। ফলে কৃষকরা ক্ষেত থেকে মরিচ তুলে বিভিন্ন হাটে বিক্রি করতে শুরু করেছেন।
কৃষকরা জানান, হাটহাজারীর মরিচ বর্তমানে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি দরে।
হাটহাজারীর মরিচ কেনো আকৃতিতে বড় এবং হালদা তীরেই কেনো এর চাষাবাদ হয়? এমন প্রশ্নের উত্তরে কৃষক জামাল উদ্দিন বলেন, হালদা নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতেই মূলত হাটহাজারীর মরিচের চাষ হয়। এখানকার মাটি এই মরিচ চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বিশেষ করে হালদা নদীর মিঠা পানি এবং নদী তীরের ভূমিতে কাদামাটি ও বালির মিশ্রণ থাকায় শুধুমাত্র প্রবহমান হালদা পাড়ের রাউজান, হাটহাজারী এবং ফটিকছড়ি উপজেলাতে এই মরিচের সফল চাষাবাদ হয়। দেশের অন্য কোথাও এই মরিচের চাষ হওয়ার কথা জানেন না বলে জানান এই কৃষক।
ফটিকছড়ির গ্রামে হালদা তীরে বেড়ে উঠা চট্টগ্রামের সিনিয়র সাংবাদিক মহসীন কাজী জানান, হালদার চরের লালমরিচ সারাদেশে হাটহাজারীর মরিচ হিসেবে পরিচিত এবং বিখ্যাত। এ মরিচ হালদা এবং এর উপখালের চরে চাষ হয়। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও এই মরিচের চাহিদা রয়েছে।
মহসীন কাজী বলেন, এই মৌসুমে এই মরিচের ফলনে চরম ভাটা পড়েছে। আগের মতো ফুলে ফল আসেনি, কাঁচা অবস্থায় ঝরে পড়েছে অনেক মরিচ। কৃষকরা এজন্য আবহাওয়ার বৈরিতা এবং ব্রিকফিল্ডের ধোঁয়াকে দায়ী করেছেন।