গরুর নাম ‘উড়াল সড়ক’! এমন নামের কারণে প্রতিদিন গরুটিকে দেখতে ভিড় করছেন শতশত লোক। কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার গুণধর ইউনিয়নের খয়রত গ্রামের খামারি মো. ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া গরুটির মালিক।
প্রতিবছরই কোরবানী ঈদকে কেন্দ্র করে অনেক খামারীরা তাদের বাছাই করা প্রিয় গরুটির আকর্ষনীয় নাম দিয়ে থাকেন। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। উজান-ভাটির সংযোগ এলাকার ‘উড়াল সড়ক’ গরুটির নামও ঠিক তেমনি ব্যতিক্রম।
হাওরের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করতে হাওরের বুক চিরে ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি উড়াল সড়ক তৈরি হবে। যেটি করিমগঞ্জ উপজেলার খয়রত গ্রাম থেকে শুরু হয়ে মিঠামইন জিরো পয়েন্ট গিয়ে শেষ হবে। যা হাওরবাসীর কাছে একটা স্বপ্নের মতো। আর সে স্বপ্নকে লালন করেই খামারী ইকবাল এবারের কোরবানীতে তার সবচেয়ে প্রিয় ও বড় গরুটির নাম রেখেছেন ‘উড়াল সড়ক’।
খামারী মো. ইকবাল হোসেন ভূইয়া গরুটি সম্পর্কে বলেন, আমার খামারেই গরুটির জন্ম হয়েছে। পরে দেশিয় পদ্ধতিতে মোটাতাজা করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। সবুজে ঘেরা আমার খামারের পাশ দিয়েই তৈরি হচ্ছে ‘উড়াল সড়ক’। মানুষ যেন খুব সহজেই আমার গরুটির নাম মনে রাখতে পারে, তাই গরুটির নাম দিয়েছি ‘উড়াল সড়ক’।
খামারী আরও বলেন, গরুটির গায়ের রং সাদা-কালো ও শীতল স্বভাবের। তবে বাইরে বের করলেই মাথা বিগড়ে যায়। লম্বায় ৯ ফুট আর ওজনে ৩৫ মণ। প্রয়োজনমতো খাবার ও পরিচর্যা করা হয় নিয়মিত। শরীরে তেল চকচকে পশম। খিদে পেলে ঘাস-পানি খায়। চার বছর বয়সি এই গরুটি হলেস্টাইন ফ্রিজিয়ান জাতের।এর দাঁত আছে ছয়টি। প্রতিদিন ২০ থেকে ২২ কেজি খাবার খায়। খাবারের মধ্যে আছে কাঁচা ঘাস, শুকনো খড়, গমের ভূষি, ধানের কুড়া, ছোলা, মিষ্টি কুমড়া। সে হিসেবে প্রতিদিন গরুটির পেছনে খরচ হচ্ছে ১২শ থেকে ১৩শ টাকা।
কোরবানির হাটে বিক্রি করতে খামার মালিক এই গরুকে যত্ন করছেন। আর নাম ‘উড়াল সড়ক’ সেটি প্রচার পেতেই গরু দেখতেও প্রতিদিন ভিড় করছেন শত শত লোক। দূর থেকে আসছেন ক্রেতারা। গত বছর ওজন ছিলো ১২শ কেজি। তখন দাম উঠেছিল সাড়ে সাত লাখ টাকা। এ বছর ওজন ১৪শ কেজি ছাড়িয়ে গেছে। তাই দামও বেড়েছে এবার। দাম হাঁকছেন ১৫ লাখ টাকা।
ফেসবুকে ‘উড়াল সড়ক’ গরুর ছবি দেখে তাড়াইল উপজেলার তালজাঙ্গা থেকে এসেছেন মো. কাইয়ুম হোসেন। তিনি বলেন, গরুটি দেখে আমি অনেক আনন্দিত। ছবিতে যা দেখেছি বাস্তবে আরও সুন্দর। গরুটি দেখতে অনেক সুন্দর ও সুঠামদেহী। খামারী খুব যত্নে গরুটিকে লালন পালন করেছেন দেখেই বুঝা যায়। তাছাড়া খাবারের তালিকাতে দেখলাম দেশীয় খাবার। আসলে আমি গরুর এমন নাম দেখেই ছুটে এসেছি। দেখে গেলাম, পরে যদি দরদামে মিলে যায় তাহলে কেনার ইচ্ছে আছে। এমন অসংখ্য মানুষ ‘উড়াল সড়ক’ নাম শুনেই গরুটিতে একনজর দেখতে আসছেন। আবার কেউ গরুটির ছবিও তুলে নিয়ে যাচ্ছেন।
তবে ‘উড়াল সড়ক’ যেনতেন গরু নয়, এমনটিই বলছেন করিমগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নাজমুল হাছান। তার মতে, বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর এবং বড় গরুর মধ্যে এটি একটি। প্রাণী চিকিৎসকদের সহযোগিতায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ফিতার মাপে ওজন নিশ্চিত হওয়া গেছে। গরুটির ওজন প্রতিদিন দেড় থেকে দুই কেজি করে বাড়ছে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুভাষ চন্দ্র পন্ডিত বলেন, ‘উড়াল সড়কের’ মালিক একজন সফল উদ্যোক্তা। ‘উশা ডেইরি ফার্ম অ্যান্ড অ্যাগ্রো’ নামে তার খামার রয়েছে। এ খামারেই তাকে পেলে-পুষে বড় করা হয়েছে। তাছাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকেও ঊনার খামারে প্রায়সময়ই মনিটরিং করা হচ্ছে। তার খামারের প্রতিটি গরুই সুষম খাদ্য ও সুন্দর পরিবেশে বড় হচ্ছে।