ইফতেখার শাহীন, বরগুনা : জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলীয় জেলা বরগুনায় প্রতিবছর ঝড় জলোচ্ছাসের মোকাবিলা করে টিকে আছে এই অঞ্চলের জেলেরা। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় এ অঞ্চলের জেলেরা মাছ ধরার জন্য গভীর সমুদ্রে যেতে পারছেন না। নিম্নচাপ ও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে বহুবার জেলেদের সাগর থেকে ফিরে আসতে হয়েছে। গত ১৭ বছরে এ অঞ্চলে ১৩ টি প্রলয়ঙ্কারি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে। গভীর বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করা জেলেদের প্রাণহানির সংখ্যা প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে অনেক জেলে পরিবার। জীবন বাঁচাতে অনেকেই পেশা বদল করেছেন। বর্তমানে ঘূর্ণিঝড় এ অঞ্চলের জেলেপল্লীর আতঙ্ক।
ঘূর্ণিঝড় মিধিলির কবলে পড়ে বঙ্গোপসাগরে এফ বি এলাহী ভরসা ও এফ বি মায়ের দোয়া ট্রলার ডুবে নিখোঁজ হয় সদর উপজেলার ২৫ জেলে। ২০২২ সালে দুটি ঘূর্ণিঝড়ে সাগরে ২৩টি মাছ ধরার ট্রলার ডুবে ১৭২ জেলে নিখোঁজ হন। ১৫৭ জেলেকে উদ্ধার করা গেলেও মারা যান ১৫ জন। ওই বছরে ২০ আগষ্ট সাগরে হঠাৎ সৃষ্ট ঝড়ে ২৪ ঘণ্টায় ১১টি ট্রলার ডুবে নিখোঁজ হন ৩৪ জেলে।
বরগুনা সদর উপজেলার নলী এলাকার জেলে আবু তাহের বলেন, ২০ বছর আগেও এত বেশি ঘূর্ণিঝড় ছিল না। কিন্তু, এখন প্রতি বছর ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে। আমরা মাছ শিকারে গিয়ে সব সময় আতঙ্কে থাকি। প্রতিবার সাগরে মাছ শিকারে যাওয়ার আগে পরিবারের কাছ থেকে বিদায় নেই, মনে হয় এটিই শেষ বিদায়। ঘূর্ণিঝড় মিধিলির সময় আমার ট্রলার ডুবে গিয়েছিল। দুই দিন সাগরে ভাসমান থাকার পর অন্য জেলেরা আমাকে উদ্ধার করে।
ঘূর্ণিঝড় আম্পান, বুলবুল, ফণী, মোরা, রোয়ানু, কোমেন, মহাসেন, আইলা, রেমাল এবং ২০০৭ সালে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানে বিংশ শতাব্দীর ভয়াবহ সুপার সাইক্লোন সিডর। এসব ঘূর্ণিঝড়ে গভীর বঙ্গোপসাগরে কয়েক’শ ট্রলার নিখোঁজ হয়। প্রাণ হারান অনেক জেলে।
এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, বায়ুমন্ডল অস্থির হয়ে পড়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনে ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড়ের কারণ।
বাংলাদেশ মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, একটা সময় ১০ বছর পর একবার ঘূর্ণিঝড় হতো। আর এখন বছরে দুটি ঘূর্ণিঝড়ও হয়। তাই, মাছ না ধরে সাগর থেকে ফিরে আসতে হয় জেলেদের। এতে সাধারণ জেলেদের পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপনসহ ট্রলার মালিকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন।